February 17, 2025, 6:07 pm
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রকৃত ভূমিহীনদের নামে ঘর বরাদ্দ দেয়ার কথা থাকলেও লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে হয়েছে এর বিপরীত। টাকার বিনিময়ে ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন সচ্ছল ও জনপ্রতিনিধিদের স্বজনরা। এমনই অভিযোগ করেছেন উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের ভুক্তভোগীরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীন, ভূমিহীন ও হতদরিদ্রদের জন্য রায়পুরে ২৫টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রত্যেকটি ঘর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। এসব ঘর ভূমিহীন ও গৃহহীনদের নামে বরাদ্দ দেয়ার কথা থাকলেও টাকার বিনিময়ে সচ্ছল পরিবারদের দিয়েছেন দক্ষিণ চরবংশী ইউপি চেয়ারম্যান।
এ ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট মেম্বারদের দিয়ে ঘর বরাদ্দ দেয়া পরিবারগুলোর কাছ থেকে ৬-১০ হাজার টাকা করে নেয়া হয়েছে। ওই ইউনিয়নের ইউনুসের পোলের গোড়া এলাকার আবদুর রহিম ভূঁইয়ার স্ত্রী লাকি বেগম। তিনি ইউপি সদস্য লিটন গাইনের বোন। লাকি বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ২০ শতাংশ জমিজুড়ে একটি টিনশেড ও বাগান রয়েছে। পৈতৃক সম্পত্তিও পেয়েছেন তিনি। তার স্বামী থাকেন সোনাপুর ইউপির রাখালিয়া গ্রামে। এতকিছু থাকতেও লাকির নামে দেয়া হয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর।
তালিকায় নাম রয়েছে এ ইউনিয়নের কালু ব্যাপারীর হাট এলাকার মুর্শিদা ও তার স্বজন আয়েশা বেগমের। যারা সম্পর্কে আপন নানি ও নাতনি। তাদেরও রয়েছে টিনশেড। রয়েছে আবাদি জমি। অথচ তাদের নামেই দেয়া হয়েছে ঘর বরাদ্দ। কালু ব্যাপারীর হাট গ্রামের ইউপি সদস্য দুলালের বসতঘরের সামনে জয়নালের স্ত্রী তাজিয়া বেগম ও তার ২০০ গজ পাশেই মমিন তালুকদারের ঘর। তাদের নামেও সরকারি ঘর বরাদ্দ হয়েছে।
আখনবাজার এলাকার লোকমান ফরাজি ও শুক্কর সরদারের অবস্থাও একই। শুক্কর সরদারের মেয়েই জানেন না, তাদের নামে ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ঘর বরাদ্দে অনিয়মের কারণে ক্ষুব্ধ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মারুফ বিন জাকারিয়াসহ ইউপি সদস্যরা। এ ব্যাপারে দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মনির হোসেন মোল্লা বলেন, ঘর বরাদ্দে অনিয়ম হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বাররা টাকা নিয়ে ঘর বরাদ্দ দিয়েছেন। বিষয়টি উপজেলা প্রসাশনকে জানালেও কোনো কাজ হয়নি।
ইউপি চেয়ারম্যান আবু সালেহ মিন্টু ফরাজি বলেন, বরাদ্দের অপ্রতুলতার কারণে নিম্নমানের কাজ হচ্ছে। মেঝে ও বারান্দায় মাটি ভরাটের জন্য বরাদ্দ পাওয়াদের কাছ থেকে ৬-১০ হাজার টাকা করে মেম্বারদের মাধ্যমে নেয়া হয়েছে। নিজেদের ঘর হওয়ায় আবার অনেকেই বিনা পারিশ্রমিকে শ্রমিকের কাজ করেছেন। রায়পুরের ইউএনও সাবরিন চৌধুরি বলেন, ঘর বরাদ্দে কোনো অনিয়মের অভিযোগ এখনো পাইনি। পেলে যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত গৃহহীনদের মাঝে ঘর বরাদ্দ দেয়া হবে। সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগও তদন্ত করা হবে। উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ বলেন, ঘর বরাদ্দের অনুমোদন ও তালিকার বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। এসব ঘর বরাদ্দ অনেক আগেই হয়েছে। যেহেতু অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, সেহেতু ইউএনওকে তদন্তের জন্য বলা হবে।
Comments are closed.