July 27, 2024, 12:05 am

সাংবাদিক আবশ্যক
সাতক্ষীরা প্রবাহে সংবাদ পাঠানোর ইমেইল: arahmansat@gmail.com
সব রোগী মিলে মিশে একাকার!

সব রোগী মিলে মিশে একাকার!

করোনা রোগী এবং সাধারণ রোগী মিলে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে। একই অবস্থা সাতক্ষীরার বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে। প্রশাসন পুলিশ জনপ্রতিনিধিদের প্রচেষ্টায় রাস্তার মানুষ অনেকটা ঘরমুখো হলেও হাট-বাজার বসেছে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সামনে। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের অবস্থাও কম নয়। সেখানে সব ধরণের রোগী অবাধে যাতায়াত করছেন। যাচ্ছে রোগীর পরিবারের সদস্য ও আত্মীয় স্বজনরা। এমনই অভিযোগ সচেতন মহলের।

শুক্রবার সকালে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সামনে থেকে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের লাইভ অনুষ্ঠানে সিনিয়র সাংবাদিক এম জিললুর রহমান বলছিলেন, ‘সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে করোনা রোগীর চিকিৎসা হচ্ছিল। আকষ্মিকভাবে সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা: মো: হুসাইন শাফায়াত সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে করোনার রোগী নিয়ে আসেন এবং তড়িঘড়ি করে একটি ওয়ার্ড প্রস্তুত করে সেখানে রোগী রেখেছেন। এম জিললুর রহমান বলেন, ‘এরফলে রোগীদেরকে নিয়ন্ত্রণে না রাখায়, রোগীরা বাইরে আসছে, রোগীর স্বজনরাও বাইরে আসছে, অন্যান্য ওয়ার্ডে যাচ্ছে, অন্যান্য ওয়ার্ডের রোগীরা করোনার ওয়ার্ডে যাচ্ছে।’ একই সঙ্গে ‘এখন সাতক্ষীরায় করোনা সংক্রমনের হার বৃদ্ধির কেন্দ্রবিন্দু সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে খবর নিয়ে জানা গেছে, সাতক্ষীরার কোন কোন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ইচ্ছামত করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীসহ সাধারণ রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। এরফলে সেখানকার পরিস্থিতিও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে তথ্য গোপন করে এধরণের চিকিৎসা সেবা দীর্ঘদিন করার বিষয়টি সম্প্রতি স্বাস্থ্য বিভাগের নজরে আসে। এক পর্যায়ে গত ৭জুন সিভিল সার্জন ডা: মো: হুসাইন শাফায়াত শহরের সিবি হাসপাতাল, সংগ্রাম হাসপাতাল, ইসলামী ব্যাংক কমিউনিটি হাসপাতাল, ন্যাশনাল হাসপাতাল ও হার্ড ফাউন্ডেশনকে সতর্ক করে বার্তা প্রেরণ করেছেন। তিনি চিঠিতে বলেছেন, এরপর তথ্য গোপনের কোন অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরপরও কিছু কিছু বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে করোনা রুগির চিকিৎসা দিয়ে প্রকৃত তথ্য স্বাস্থ্য বিভাগকে না জানানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাতেও একটি বেসরকারি হাসপাতালে ১০২ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিল। এরমধ্যে কতজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত এবং কতজন সাধারণ রোগী তার পরিসংখ্যান জানা যায়নি।
এদিকে রাতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতারের শিশু চিকিৎসক ডা: অসিম সরকার জানান, কোভিড নিয়ে সাতক্ষীরা অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে আছে। আমরা আশা করেছিলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল করোনা ডেডিগেটেড হাসপাতাল হলে লোকালয়ের বাইরে থাকায় ঝুঁকি কম ছিল। কিন্তু সদর সদর হাসপাতালে কোভিড রোগি ভর্তির পর নিয়ন্ত্রণ না থাকায় আক্রান্ত আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সরাসরি সদর হাসপাতারে কোভিড রোগি পাঠানোর কারণে ভর্তি নেয়া হয়েছে। তবে এ মুহূর্তে সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অতিদ্রুত কোভিড রোগির নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে মারাত্মক ঝুঁকির দিকে যাবে। তিনি আরও বলেন, একজন কোভিড রোগির সাথে যারা আসে ধরে নিতে হবে তারাও কোভিডে আক্রান্ত। সেভাবেই চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকা উচিত। করোনার প্রথম চিকিৎসা অক্সিজেন কিন্তু এখানে অক্সিজেন নেই, হাইফ্লো নাজাল ক্যানোলা নেই, নেই আইসিইউ। অথচ রোগি ভর্তির পর বোতল অক্সিজেন খুবি কম কাজ করবে। সেক্ষেত্রে ঝুঁকিই থেকে যাবে রোগি এবং কর্তৃপক্ষের।
বিষয়টি নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. সুব্রত ঘোষ বলেন, সদর হাসপাতালে কোভিড রোগি ভর্তির পর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ না থাকা এবং পার্শ্ববর্তী কয়েকটি ক্লিনিকে কোভিড রোগির চিকিৎসায় স্বাস্থ্য বিভাগের নজরদারির অভাবে সংক্রমণ আরও বাড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। শহরের খুলনার রোড জনবহুল এলাকা, পাশেই বাসটার্মিনালসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠান ও বসতি রয়েছে। সেক্ষেত্রে এখুনি কোভিড রোগিদের নিয়ন্ত্রণ ও যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে সংক্রমণ বাইরে ছড়িয়ে পড়ার কথা জানান তিনি। করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট অত্যন্ত শক্তিশালি। তা নিয়ন্ত্রণ করতে ইতোমধ্যে চলমান লকডাউন বাস্তবায়নে প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর ভূমিকা থাকলেও সদর হাসপাতালের কারণেই পুরো জনগণ ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। কারণ প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রান্তিক মানুষ এই হাসপাতালে আসছে। তারাই করোনার সংক্রম নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছে। ফলে কর্তৃপক্ষ জনগণের কথা বিবেচনা করে অতিদ্রুত ব্যবস্থা নিবেন এমন প্রত্যাশার কথা জানান তিনি।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে করোনা ইউনিট সম্পর্কে জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, সাতক্ষীরায় একমাত্র করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল মেডিকেলকে আগে থেকেই নির্ধারণ করা আছে। সেক্ষেত্রে সদর হাসপাতালে যদি কোন করোনা রোগি ভর্তি করা হয় এবং সেটির নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয় তাহলে তার দায় সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকেই নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, শুধু সদর হাসপাতাল নয়, অন্য যেসমস্ত প্রাইভেট ক্লিনিকে করোনা রোগির চিকিৎসা দিচ্ছে তাদের নিজ নিজ দায়িত্বে রোগির সেবা ও জননিরাপত্তা অবশ্যই দিতে হবে। এর কোন ব্যত্যয় ঘটলে স্ব স্ব কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহি করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সদর হাসপাতাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সদর আসনের সাংসদ। শনিবার তিনি এসব বিষয় নিয়ে সংসদ সদস্যের সাথে কথা বলে সমস্যা চিহ্নিত পূর্বক সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে।


Comments are closed.

ইমেইল: arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com