October 3, 2024, 11:05 pm
সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ নানা অনিয়ম-দূর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে খামখেয়ালীপনায় সরকারের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রনালয়ের আওতায় সাতক্ষীরা পাট অধিদপ্তরের কার্যক্রম চলছে হ-য-ব-র-ল অবস্থায়। পাট ও পাটপণ্য ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স প্রদান ও অনিয়মতান্ত্রিক ব্যবসায়ীদের দমন ছাড়া একটি মাত্র প্রকল্প বাস্তবায়নই একমাত্র কাজ অদিপ্তরের এ অফিসটির। তবে কর্তার জানা নেই,ঠিক কি পরিমাণ ব্যবসায়ী সম্পৃক্ত রয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়। তাই ঠিক কি পরিমাণ রাজস্ব আসছে এ খাতে তারও হিসাব নেই। মূলত সব হিসাবই তার ব্যক্তিগত খতিয়ানে। এ যেন কর্তার ইচ্ছাই কাজ। এনিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদনের স্বার্থে তার দপ্তরে তথ্য অধিকার আইনে চাওয়া কিছু তথ্যেরও তাই উত্তর মেলেনি। উত্তর না পাওয়ায় ফোনালাপেও বিরক্তি,উল্টো দেখে নেওয়ার হুমকি। তার দৃষ্টিতে সাংবাদিকতা যেন অজানা এক অভিশাপ, ঠিক যেন ভূলে মগের মুল্লুকে ঢুঁকে পড়া। বলছিলাম, সাতক্ষীরা পাট অধিদপ্তরের পরিদর্শক আশীষ কুমার দাশ ও তার অফিসের কথা। তথ্যানুসন্ধানে জানাযায়, বাংলাদেশ সরকারের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রনালয়ের আওতায় পাট অধিদপ্তর। দপ্তরটির কাজ,পাট ও পাটপণ্য ব্যাবসায় লাইসেন্স প্রদান এবং অনিয়মতান্ত্রিক অর্থাৎ ১৯৬২ সালের পাট অধ্যাদেশ এবং ১৯৬৪ সালের পাট বিধিমালা মোতাবেক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনপূর্বক রাজস্ব আদায় করা। অফিসটি থেকে ৮টি বিভাগে লাইসেন্স মঞ্জুরী ও নবায়ন করা হয়। এছাড়া অধিদপ্তরের আওতায় বর্তমানে উচ্চ ফলনশীল পাট বীজ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণসহ উন্নত পদ্ধতিতে পাট পঁচানো নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে।এক সময়ের সোনালী আঁশ আজ নানা সংকটে ক্রান্তিকাল অতিক্রান্ত করছে। দাম না থাকায় কৃষকদের উৎপাদন খরচও ওঠেনা। কৃষকরাও চলে গেছেন ভিন্ন কৃষি উৎপাদনে। তাই কৃষি অধিদপ্তরের লক্ষমাত্রাও বাস্তবায়ন হয়না। সংকট উত্তরণে সরকার পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধের পাশাপাশি পাটজাত পণ্য ব্যবহারে জনসচেতনতার পাশাপাশি আইন বলবৎ করেছেন। তার পরও পাটের অবস্থা রয়ে গেছে সেই তিমিরেই। ঠিক এমন পরিস্থিতিতে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে জানা অজানা চমকপ্রদ তথ্য। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্র জানায়,চলতি পাট উৎপাদন মৌসুমে সাতক্ষীরার ৭টি উপজেলায় মোট পাট উৎপাদন লক্ষমাত্রা ছিল,১১ হাজার ৮ শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে। তম্মধ্যে কলারোয়া উপজেলায় ৪ হাজার ১ শ’৫০ হেক্টর জমিতে,সদর উপজেলায় ৪ হাজার ৩ শ’ ৮০ হেক্টর,তালায় ২ হাজার ৯ শ’৫০,দেবহাটায় ১ শ’,কালিগঞ্জে ১ শ’৫০,আশাশুণী ১ শ’১০ ও শ্যামনগর উপজেলায় ১০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্দ্ধারণ করা হয়েছিল। তবে উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১ হাজার হেক্টর কম ১০ হাজার,৯ শ’ ৫৫ হেক্টর জমিতে। যার বিপরীতে মোট ১ লক্ষ ৪০ হাজার ১ শ’ ৮৬ বেল্ট পাট উৎপাদন হবে বলে মনে করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। সূত্র আরো জানায়,গত মৌসুমে ১২ হাজার ২ শ’ ৩০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্দ্ধারণ করা হয়েছিল ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৬ শ’২৪ বেল্ট। তবে সেবার লক্ষমাত্রার চেয়ে প্রায় ৭ হাজার বেল্ট পাট কম উৎপাদন হয়েছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যবসায়ীরা জানান,জেলায় উৎপাদিত পাটের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী উপজেলার বেশ কিছু এলাকার পাট সাতক্ষীরা জেলা কেন্দ্রীক ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি হয়। তবে এ বিপুল পরিমাণ পাট ক্রয়,মজুদ বা -বিক্রয়ের সাথে ঠিক কি পরিমাণ লাইসেন্স ও অলাইসেন্সধারী ব্যবসায়ী রয়েছেন তার সঠিক হিসাব জানা নেই কারো কাছে। থাকলেও এক অজ্ঞাত কারণে অধিদপ্তরের কর্মকর্তা তা সরবরাহ করেননা কারো কাছে। ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ জানান,অর্ধ যুগেরও বেশী সময় ধরে পাট অধিদপ্তর তাদের কাছ থেকে লাইসেন্স ইস্যু বা নবায়নের জন্য প্রতি বছর নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা নিলেও কোন রশিদ বা লাইসেন্স তিনি তাদেরকে সরবরাহ করেননা। তবে কেন এই লুকোচুরি? কেনই বা তিনি সাংবাদিকসহ বাইরের কাউকে এ সংক্রান্ত কোন তথ্য সরবরাহ করতে চাননা? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তথ্যানুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে অজানা অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। যা ক্রমান্বয়ে প্রকাশিত হবে।পাট উৎপাদন থেকে শুরু করে পাট ব্যবসার সাথে জড়িতদের সংখ্যা এমনকি এখাত থেকে ঠিক কি পরিমাণ রাজস্ব আয় হয় এমন তথ্য জানতে গত প্রায় ৩ মাস যাবৎ বিভিন্ন সময়ে সাতক্ষীরা পাট অধিদপ্তরে ধর্ণা দেওয়ার একপর্যায়ে তথ্য আইনে নির্দিষ্ট ফরমে আবেদন করতে বলেন, অফিসের পরিদর্শক আশীষ কুমার দাশ। তার দেয়া পরামর্শ অনুযায়ী সর্বশেষ তথ্য চেয়ে চলতি মাসের ২৫ আগস্ট অফিসের নির্দিষ্ট বক্সে আবেদনপত্র জমা দিলেও সেখান থেকে তথ্য মেলেনি কোন। আবেদন জমা দেওয়ার পরও তথ্য না পাওয়ায় একাধিকবার অফিসে গিয়েও কর্তাকে নাপেয়ে তার ব্যবহৃত ফোন কল দিলে তথ্যর পরিবর্তে উল্টো হুমকি দেন এ প্রতিনিধিকে।এক পর্যায়ে তিনি বলেন,আগামী ৭ দিন অফিসে আসবেননা তিনি। তাছাড়া কত তথ্য চাই তোমার,তোমার ব্যাপারে উর্দ্ধতন মহলে নালিশ করব,দেখে নেবসহ নানাবিধ হুমকি-ধামকি ও ঔদত্যপূর্ণ কথা-বার্তা বলেন। আসলে তথ্য চাওয়ায় তার গাত্রদাহ কেন? তাহলে তার কাছে কি ব্যবসায়ীদের সঠিক সংখ্যা নেই? নাকি সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিতে ব্যবসায়ীদের সঠিক তথ্য হজম করে ফেলেছেন?ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে অধিকাংশদের কাছ থেকে লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন করতে টাকা নেয়া হলেও তাদের সরবরাহ করা হয়না কোন রিসিভ কিংবা লাইসেন্সের কপি। ধারণা করা হচ্ছে,সরকারী খতিয়ানে নামমাত্র ব্যবসায়ীদের নাম সম্পৃক্ত করে সিংহ ভাগ টাকা তিনি নিজেই হজম করেন।এ সংক্রান্ত নানা দূর্নীতি-অনিয়মের উপর ভর করে দীর্ঘ দিন একই কর্মস্থলে থাকা পরিদর্শকের বিরুদ্ধে নতুন নতুন তথ্য অনুসন্ধানী রিপোর্ট আগামী পর্বে তুলে ধরা হবে। ততক্ষণে আমাদের সাথেই থাকুন।