July 27, 2024, 12:16 am

সাংবাদিক আবশ্যক
সাতক্ষীরা প্রবাহে সংবাদ পাঠানোর ইমেইল: arahmansat@gmail.com
সাতক্ষীরা সিটি কলেজের গভর্নিং বডি ও অধ্যক্ষের ষড়যন্ত্রের শিকার বৈরাগীর পরিবার আজ পথে পথে

সাতক্ষীরা সিটি কলেজের গভর্নিং বডি ও অধ্যক্ষের ষড়যন্ত্রের শিকার বৈরাগীর পরিবার আজ পথে পথে

সাতক্ষীরা সিটি কলেজের গভর্নিং বডি ও অধ্যক্ষ আবু সাঈদের ক্ষমতার অপব্যবহারে আত্মহননে বাধ্য হওয়া গণিতের শিক্ষক প্রভাষ বৈরাগীর স্ত্রী ও দু’সন্তান অর্থাভাবে আজ পথে পথে। সময় এসেছে এসব অনিয়ম, দুর্নীতি ও মানসিক অত্যাচারের তদন্ত হওয়ার।সাতক্ষীরা সিটি কলেজ সূত্রে জানা গেছে, প্রভাষ চন্দ্র বৈরাগী ১৯৯৩ সালের পহেলা আগস্ট গণিত বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ওই বছরে এমপিওভুক্ত হয়ে ২০০১ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তিনি বেতন-ভাতা তুলেছেন। এরপর চার দলীয় জোট ক্ষতায় আসার পর সাতক্ষীরা সিটি কলেজের সভাপতি হন সাবেক সংসদ সদস্য ও যুদ্ধাপরাধী মামলায় জেল হাজতে থাকা আসামী মাওলানা আব্দুল খালেক। তিনি সভাপতি হওয়ার পর তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুভাষ চন্দ্র সরকার এবং গণিত বিভাগের শিক্ষক প্রভাষ চন্দ্র বৈরাগীকে ছাত্র শিবিরের ক্যাডারদের দিয়ে লাঞ্ছিত করে কলেজ থেকে  বের করে দেন। এরপর  ২০০৩ সালের ২০ আগস্ট এক বিতর্কিত নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে জামায়াত নেতা খালেক মন্ডলের ভাগ্নে গণিত বিভাগের প্রভাষক মিজানুর রহমানকে প্রভাষ চন্দ্র বৈরাগীর স্থলে নিয়োগ দেয়া হয়। প্রভাষ চন্দ্র বৈরাগী উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক হলেও ২০০৪ সালে আরবীটেশন বোর্ডের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বিধিবহির্ভুতভাবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষতায় আসার পর গভর্ণিং বডির এডহক কমিটির সভাপতি হন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুকেশ চন্দ্র বিশ্বাস। তিনি ২০১০ সালের ১৩ ডিসেম্বর গভর্ণিং বডির সভায় প্রভাষ চন্দ্র বৈরাগীর বকেয়া বেতন ভাতাসহ যোগদানের ব্যাপারে বিদ্যুৎসাহী সদস্য তৎকালিন জজ কোর্টের পিপি ও বর্তমান সাংসদ এড. মুস্তাফা লুৎফুল্লাহকে প্রধান করে এক সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন। এড. মুস্তাফা লুৎফুল্লাহ তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি তার তদন্ত প্রতিবেদনে ২০০১ সালের নির্বাচনের পর প্রভাষ বৈরাগীকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জামায়াত নেতা খালেক মাওলানার নেতৃত্বাধীন গভর্নিং বডি ষড়যন্ত্র করে চাকরিচ্যুত করেন বলে উল্লেখ করেন। একই সাথে প্রভাষ বৈরাগীর বকেয়া সরকার ও কলেজ প্রদত্ত বেতন ভাতার অংশসহ কলেজে যোগদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে গভর্ণিং বডিকে সুপারিশ করেন। ২০১০ সালের ১৯ এপ্রিল ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে অধ্যাপক আবু আহম্মেদ দায়িত্ব পান।

সূত্রটি আরো জানায়, উক্ত তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে গভর্নিং বডি অবৈধভাবে সাময়িক বরখাস্তাদেশ প্রত্যাহার করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে অবহিত করেন। এরপর ২০১৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন অর রশীদের এক আদেশক্রমে কলেজ পরিদর্শক  প্রফেসর ড. মো. আনোয়ার হোসেন সিটি কলেজের  প্রভাষক প্রভাষ বৈরাগীর বরখাস্তাদেশ প্রত্যাহার করে স্বপদে পূর্ণবহালের আদেশ দেন। এরপর প্রভাষ বৈরাগী ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত কলেজে স্বাভাবিক কার্যক্রমে অংশ গ্রহণসহ বেতন ভাতা তুলেছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে জয়লাভ করার পর সাংসদ হিসেবে সিটি কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি হন মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি। এর কয়েক মাস না যেতেই সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ লিয়াকত পারভেজকে ২০১৪ সালের ৯ জুন সিটি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলে প্রভাষ বৈরাগী, আবু সাঈদসহ কয়েকজন সিটি কলেজের অধ্যক্ষ প্রার্থী হিসেবে আবেদন করেন। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি নিয়োগ সংক্রান্ত নির্বাচনী বোর্ডে প্রভাস চন্দ্র বৈরাগীকে প্রবেশপত্র না দিয়ে এক বিতর্কিত নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে ২০১৫ সালের ২৬ জানুয়ারি নিয়োগ দেন। এরপর উক্ত নিয়োগ বোর্ডকে চ্যালেঞ্জ করে প্রভাষ বৈরাগী ২০১৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মহামান্য হাইকোর্টে ১১০৫/১৫ রিট পিটিশন দাখিল করেন। ওই নিয়োগ বোর্ডকে অবৈধ ঘোষণা করে আদালত নিয়োগ সংক্রান্ত কার্যক্রম চার মাসের জন্য স্থগিত ঘোষণা করে।  উচ্চ আদালতে রিট করার অপরাধে গভর্ণিং বডির সভাপতির মৌখিক নির্দেশে অধ্যক্ষ আবু সাঈদ প্রভাষ বৈরাগীর নাম কলেজের হাজিরা খাতা থেকে বাদ দিয়ে কলেজে যেতে নিষেধ করেন বলে প্রভাষ বৈরাগী ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর এক অভিযোগে উল্লেখ করেন। ওই অভিযোগপত্রে ২০১৫ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মোজাম্মেল হক ও কেন্দ্রীয় নেতা এসএম কামাল হোসেনকে প্রভাষ চন্দ্র বৈরাগী তার উপর অন্যায় অবিচারের বিষয়টি অবহিত করেন। এ সময় উপস্থিত সিটি কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি সার্কিট হাউজে উপস্থিত হলে তাকে হাজিরা খাতায় নাম তোলা ও বেতন ভাতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পরে কথা রাখেননি বলে সেই দরখাস্তে উল্লেখ করেন প্রভাষ বৈরাগী।

হাইকোর্টের আেেদশের বিষয়টি ২০১৫ সালের ২ মার্চ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অবহিত করা হয়। এরপর ২০১৫ সালের ১৪ মার্চ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আদেশে কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর ড. মো. সামছুদ্দিন ইলিয়াস গণিত বিভাগের সহকারি অধ্যাপক প্রভাষ চন্দ্র বৈরাগীকে স্বপদে বহালসহ বেতন ভাতা প্রদানের বিষয়ে গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে অবহিত করার জন্য বলেন। এ আদেশ না মেনে ২০১৫ সালের ১৪ এপ্রিল গভর্নিং বডির সভায় প্রভাষ বৈরাগীকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করে জামায়াত নেতা খালেক মন্ডলের ভাগ্নে সাময়িক বরখাস্ত থাকা গণিতের শিক্ষক জামায়াত রোকন মিজানুর রহমানকে একই দিনে যোগদানের আদেশ দেওয়া হয়। অধ্যক্ষ আবু সাঈদের পরামর্শে পরদিন মিজানুর রহমান কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন মর্মে একটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেন।

প্রভাষ চন্দ্র বৈরাগীর স্ত্রী বিউটি রানী বৈরাগী এ প্রতিবেদকের সঙ্গে বুধবার সন্ধ্যায় এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে আবু আহম্মেদ ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকালে তার স্বামী যথাযথভাবে বেতন ভাতা তুলছেন। তার স্বামী চাকুরিচ্যুত হওয়ার পর অনাহারে অর্ধাহারে থেকে গ্রামের বাড়ি খুলনা জেলার পাইকগাছা থানাধীন পূর্ব খড়িয়া গ্রামে চলে যান। সেখানে থেকে তিনি বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তার উপর সিটি কলেজ কর্তৃপক্ষের অন্যায় অবিচার ও মানসিক নির্যাতনের কাহিনী তুলে ধরে প্রতিকার প্রার্থনা করেন। একপর্যায়ে আর্থিক কষ্ট চরম আকার ধারণ করলে চাকুরি ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন জায়গায় ধর্ণা দিয়ে কোন আশ্বাস না পাওয়ায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ঢাকার একটি বাসায় ২০১৫ সালের ২২ এপ্রিল আত্মহনের পথ বেছে নেন যা তার (বিউটি) দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের উপপরিদর্শক প্রবীর কুমার বিশ্বাস তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন।

বিউটি বৈরাগী আরো বলেন, স্বামী প্রভাষ বৈরাগী মারা যাওয়ার পর তিনি সিটি কলেজে গেলে অধ্যক্ষ আবু সাঈদ তাকে অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে চুলের মুঠো ধরে বের করে দেন। এ ঘটনা তিনি খুলনার সিআইডি পুলিশ সুপার (শিরোমনি) এর কাছে লিখিত অভিযোগ করে আত্মহত্যার প্ররোচনাকারিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছিলেন।

এসবের পরও সিটি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সাঈদ সাতক্ষীরা থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকায় এক প্রতিবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি ও গভর্নিং বডির সভাপতি সাংসদ মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি শিক্ষক নিয়োগ, এমপিওভুক্তি ও কাউকে চাকুরিচ্যুত করার বিষয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতি করেন নি বলে দাবি করেন।


Comments are closed.

ইমেইল: arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com