November 2, 2024, 8:28 pm
ডেস্ক :আগামী ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আসন্ন সম্মেলনে সংগঠন থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার ও সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ এমপি। তাদের স্থলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আসবেন বর্তমান কমিটির ক্লিন ইমেজের দুই তরুণ নেতা। তবে সভাপতি পদে অপেক্ষাকৃত এক সিনিয়র নেতাকেও দেখা যেতে পারে।ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ঘনিষ্ঠ নেতাদের এমনটিই আভাস দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।দীর্ঘ ৭ বছর পর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের তৃতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সর্বশেষ ২০১২ সালের ১১ জুলাই সংগঠনটির ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে মোল্লা কাওছার সভাপতি এবং পংকজ দেবনাথ সাধারণ সম্পাদক হন। সম্প্রতি রাজধানীর ক্যাসিনো কারবারে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগে বিভিন্ন গণমাধ্যমের শিরোনামে আসেন মোল্লা কাওছার। এ কারণে তাকে আর স্বেচ্ছাসেবক লীগে রাখা হবে না এমনটিই ধারণা করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ এবারও স্বেচ্ছাস্বেবক লীগের সভাপতি প্রার্থী। তবে তিনি সেই ২০০৩ সাল থেকে সংগঠনটির নেতৃত্বে থাকায় তাকেও এবার অব্যাহতি দেওয়া হবে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক সূত্র জানিয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আনা হতে পারে বরিশাল-৪ আসনের এ সংসদ সদস্যকে। অবশ্য পংকজ দেবনাথের নির্বাচনী এলাকা মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ফল কিছুটা বিপাকে ফেলে দিয়েছে তাকে। গত সোমবার অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে নৌকা মার্কার প্রার্থী পেয়েছেন ১৭৫৭ ভোট, বিপরীতে স্থানীয় এমপি পংকজ দেবনাথের আর্শীবাদপুষ্ট স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘোড়া মার্কায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৩৭৪৫৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এই বিষয়টিও পংকজ দেবনাথের জন্য নেতিবাচক হতে পারে।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি, নেতৃত্বের দক্ষতা, রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা এবং সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা রয়েছেÑ এমন প্রার্থীরাই সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বে আসবেন বলে আমি ধারণা করি। স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী থেকে আজকের স্বেচ্ছাসেবক লীগকে একটি পরিপূর্ণ সংগঠন হিসেবে দাঁড় করানোর নেপথ্যে অন্যতম নায়ক সংগঠনটির সাবেক সভাপতি বাহাউদ্দীন নাছিম আরও বলেন, নেতা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। বিতর্কিত কাউকে নেতৃত্বে আনা হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বে ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা প্রাধান্য পেলেও স্বেচ্ছাসেক লীগে সংগঠনটির বর্তমান কমিটির নেতাদের মধ্য থেকেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে। কারণ সংগঠনটির বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে যেমন প্রবীণ ও অভিজ্ঞ নেতারা রয়েছেন, তেমনটি সদ্য সাবেক ছাত্রনেতারাও রয়েছেন।
আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের আলোচনায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান কমিটির পরিচ্ছন্ন তরুণ নেতা হিসেবে শীর্ষ পদে যে কয়েকজনের নাম আলোচনায় রয়েছে তারা হলেনÑ সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল, শেখ সোহেল রানা টিপু, সাজ্জাদ সাকিব বাদশা ও সালেহ মোহাম্মদ টুটুল। এরা চারজনই ১/১১-এর সময় ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তাদের মধ্যে শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনে তৎকালীন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার হাতে আটক হয়ে নির্যাতনের শিকার হন ও ১ বছর কারাবরণ করেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান কমিটির অপেক্ষাকৃত জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে শীর্ষপদে আলোচনায় রয়েছেন সহসভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, মতিউর রহমান মতি, চট্টগ্রামের নুরুল ইসলাম নুরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী মেসবাউল হোসেন সাচ্চু প্রমুখ। এরা প্রত্যেকেই দীর্ঘদিন স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়।
সংগঠনটির ঢাকা মহানগর উত্তর শাখায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইসহাক মিয়া ও বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম বিপুল। ইসহাক মিয়া ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সভাপতি। বিপুল স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহানগরের নেতাদের মধ্যে বেশ সক্রিয়।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগে অলোচনায় রয়েছেন সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কামরুল হাসান রিপন, দপ্তর সম্পাদক তৌফিকুল সোহাগ, ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক দুই শীর্ষ নেতা আনিসুর রহমান আনিস ও আনিসুজ্জামান রানা প্রমুখ।
উল্লেখ্য, প্রায় এক যুগ পর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার সম্মেলন ১১ ও ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে।