November 21, 2024, 9:19 am
তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ নিয়ে নতুন সংকটের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকদের অনেকে। তারা বলেছেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ এবং জঙ্গি তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে এলেও তারা আবার মাথা চাড়া দিতে পারে। এই উদ্বেগের পেছনে ভিত্তি হিসাবে তারা আফগান যুদ্ধ এবং সিরিয়ায় আইএস-এর পক্ষে যুদ্ধে বাংলাদেশের কিছু লোকের অংশ নেয়ার বিষয়কে তুলে ধরেন। তালেবানের কাবুল দখলের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ নিয়ে নানা আশঙ্কা বা উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা চলছে।
ঢাকার রাস্তায় ইসলামপন্থী বিভিন্ন দল বা সংগঠন ‘বাংলা হবে আফগান-আমরা হব তালেবান’- প্রকাশ্যে এই শ্লোগান দিয়েছে আশির দশকের শেষ দিকে। পরেও বিভিন্ন সময় ঢাকায় এমন স্লোগান দেয়া হয়েছে। আফগানিস্তান আশির দশকে যখন সোভিয়েত ইউনিয়নের দখলে ছিল, বাংলাদেশ থেকে অনেকে আফগানিস্তানে মুজাহেদিন বাহিনীর পক্ষে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। তখন আফগানিস্তান গিয়েছিলেন, এমন একজন নাম পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, তিনি তখন পাকিস্তানের করাচীতে একটি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করার সময় ২৮-বছর বয়সে করাচি থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আফগানিস্তানে চলে গিয়েছিলেন। তিনি এখন ঢাকার বাইরে একটি কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক। তিনি দাবি করেছেন, তিনি সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নেননি। তবে তিনি বলেছেন, পাকিস্তানের সাথে আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায় সোভিয়েত বাহিনীর নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনমত তৈরিতে কাজ করেছেন।
আফগানিস্তানে যাওয়ার সেই ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমি বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে লেখাপড়া করতে গিয়েছিলাম ১৯৮৮ সালে। সে সময়ই তাবলীগ জামাতের সাথে আমরা সেখানে গেছি। আমরা পাকিস্তানের মিরানশাহ সীমান্ত দিয়ে আফগানিস্তানের খোস্ত প্রদেশে গিয়েছিলাম।”
আফগানিস্তান যাওয়ার পর সেখানে তার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তিনি জানিয়েছেন, “সেখানে যুদ্ধ ছিল। সেখানেতো সেভাবে কোন শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল না। আমরা সেখানে মসজিদে মসজিদে ইসলামের দওয়াত দেই। বিশেষ করে মুজাহেদিনরা ছিল, তাদেরকেও আমরা দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছি।” আফগান ফেরত এই ব্যক্তি সেখানে তার কর্মকাণ্ডের পক্ষে যুক্তিতে বলেছেন, “যেমন মনে করেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হইছে, অনেকে বিভিন্ন সহযোগিতা করেছে। মানুষ যেখানে নির্যাতিত হচ্ছে, সেখানে কিছু সহযোগিতা করতে হয়। এরকমভাবে আমরাও সেখানে (আফগানিস্তানে) তাদেরকে দ্বীনমুখী বা ইসলামমুখী করা বা দ্বীন-এ তালিমের ছোঁয়া লাগানো- এই কাজগুলো আমরা করেছি।”
তিনি জানান, ১৯৮৮ সালেই শেষদিকে তিনি আফগানিস্তান থেকে সীমান্ত দিয়ে আবার পাকিস্তানের করাচিতে মাদ্রাসায় ফিরেছিলেন।তবে তখন তিনি কতদিন আফগানিস্তানে ছিলেন-সেটা সুনির্দিষ্ট করে বলেননি। তিনি বলেন, পাকিস্তানে মাদ্রাসায় লেখা পড়া শেষ করে ১৯৯৫ সালে তিনি বাংলাদেশে ফিরে সেই সময় থেকে ঢাকার বাইরে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছেন। তিনি দাবি করেন, দেশে ফিরে তিনি কোন রাজনৈতিক দল বা কোন সংগঠনে জড়াননি।
পুলিশ জানিয়েছে, আশির দশকে বাংলাদেশের অনেক যুবক যারা আফগানিস্তানে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের অনেকে দেশে ফিরে জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়েছিলেন।
Comments are closed.