November 21, 2024, 8:56 am

সাংবাদিক আবশ্যক
সাতক্ষীরা প্রবাহে সংবাদ পাঠানোর ইমেইল: 1linenewsagency@gmail.com
উন্নয়নশীল দেশ নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না: রাষ্ট্রপতি

উন্নয়নশীল দেশ নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না: রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে। এটি খুশির খবর। কিন্তু এ নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না। বুধবার ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে শামিল হওয়ার লক্ষ্যে এখন থেকে সর্বাত্মকভাবে কাজ শুরু করতে হবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব এগিয়ে চলছে। কয়েক বছর পরই পঞ্চম শিল্পবিপ্লবের ঢেউ বইতে শুরু করবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পঞ্চম শিল্পবিপ্লবের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এ লক্ষ্যে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীরা যাতে তথ্যপ্রযুক্তিসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের সব শাখায় বিশ্বব্যাপী সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যেতে পারে, সেভাবে তাদেরকে গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় শিক্ষা ও জ্ঞানানুশীলনের পটভূমিতে ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। বিশ্বজ্ঞানের সঙ্গে ব্যক্তিমনের সমন্বয় ঘটানোই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুরু থেকেই এ বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে। প্রথম বিশ্বযু্দ্েধর পর হতে উপমহাদেশে স্বাধীনতাকামী মানুষের উদারনৈতিক মুক্তচেতনানির্ভর ও সামষ্টিক জ্ঞানানুশীলনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে ঔপনিবেশিক মানসিকতামুক্ত নতুন শ্রেণি সৃষ্টির পথও প্রশস্ত হয়। সেই পথ ধরেই এই বিশ্ববিদ্যালয় শেষ পর্যন্ত বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামেরও সূতিকাগার হয়ে উঠেছিল। রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রতিষ্ঠার প্রথম ২০ বছরের মধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক পরিম-লে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। এসময়ে পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক সত্যেন্দ্রনাথ বসু বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের সঙ্গে যৌথভাবে আবিষ্কার করেন ‘বোস-আইনস্টাইন কোয়ান্টাম তত্ত্ব’। অন্যদিকে বহুভাষাবিদ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ প্রমাণ করেন যে, বাংলা ভাষার উৎসস্থল গৌড়ীয় প্রাকৃত ভাষায়, যেটি ছিল বাংলা ভাষার ইতিহাসে এক যুগান্তকারী অবদান। রাষ্ট্রপতি বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন অস্থিরতা ও মন্দা এবং বিশেষ করে ১৯৪৭ সালের ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির ঘটনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। পাকিস্তানের সূচনালগ্ন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সরকারের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও আদর্শিক টানাপোড়েন শুরু হয়। এর প্রথম প্রকাশ ঘটে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। মাতৃভাষা বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণের দাবিতে ১৯৪৮ সাল থেকে সূচিত ঐতিহাসিক এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার যৌক্তিক দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জীবন উৎসর্গ করেন। এ আন্দোলনকে উপজীব্য করেই গড়ে ওঠে অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা। তিনি বলেন, বিশ্বের সব জাতিসত্তার ভাষা-সংস্কৃতি সংরক্ষণে একুশে ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিকভাবে মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদযাপিত হচ্ছে। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আইয়ুব খান সরকার ১৯৬১ সালে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স’ জারি করে, যা ‘কালাকানুন’ হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনতা পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই অর্ডিন্যান্স বাতিল করেন এবং ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ১৯৭৩’ জারি করেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে চিন্তার স্বাধীনতা ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার পরিবেশ নিশ্চিত হয়। বাংলাদেশ সৃষ্টির পূর্বের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতা-উত্তর সময়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব অগণতান্ত্রিক, অপসংস্কৃতি এবং সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছে। এরই স্বীকৃতিস্বরুপ ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়। মুজিব জন্মশতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিস অ্যান্ড লিবার্টি’ স্থাপনও একটি অনন্য উদ্যোগ। বর্তমান শতাব্দীতে উন্নয়নশীল বিশ্বে উচ্চশিক্ষার গতি-প্রকৃতি নিয়ে আমাদেরকে নানাভাবে ভাবতে হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, বিশ্বায়ন ও তথ্য-প্রযুক্তির অভাবনীয় বিস্ফোরণে সৃষ্ট ডিজিটাল বিভক্তি, উন্নত বিশ্বের সঙ্গে উন্নয়নশীল বিশ্বের যে ব্যবধান সৃষ্টি করেছে তার মোকাবিলা এবং পুঁজি ও শ্রমনির্ভর অর্থনীতি থেকে জ্ঞান নির্ভর-অর্থনীতিতে উত্তরণ এখন শিক্ষার প্রধান বিবেচ্য। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বজ্ঞানের সঙ্গে ব্যক্তিক ও সামষ্টিক চেতনার সমন্বয় ঘটানোই বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য হওয়া উচিত। তিনি বলেন, কালের পরিক্রমায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে এর অবকাঠামো ও শিক্ষা কার্যক্রমের পরিধি। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে প্রতিযোগিতারও আন্তর্জাতিকীকরণ হয়েছে। তাই একজন শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মান অর্জন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও কারিকুলাম নির্ধারণ ও পাঠদানের ক্ষেত্রে বিশ্বমানের কথা বিবেচনায় রাখতে হবে। মাতা-পিতা ও অভিভাবকরা অনেক আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ে ছেলেমেয়েদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান। এ ছাড়া তাদের পেছনে দেশ ও জনগণের বিনিয়োগও যথেষ্ট। তাই শিক্ষার্থীদেরকে পবিবার, দেশ ও জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। রাষ্ট্রপতি বলেন, অবকাঠামো, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ডিপার্টমেন্ট ও ইনস্টিটিউটের সম্প্রসারণ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে শিক্ষা ও গবেষণার মানই মূলসূচক। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারের চাহিদা ও যোগ্যতা বিবেচনা করে শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। আমি আশা করবো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ যাত্রাপথে নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকবে। তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির শুভক্ষণে বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছে, স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার অভিযাত্রায় বর্তমানে আমরা এগিয়ে চলেছি ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে। রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজন যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম দক্ষ ও মেধাবী জনশক্তি তৈরি, যারা আমাদের এই অভিযাত্রাকে বাস্তবে রূপ দিতে মাঠে কাজ করবেন। ভবিষ্যৎমুখী এই অভিযাত্রায় আপনাদের সবাইকে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আমি ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠান’ এর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করছি।


Comments are closed.

ইমেইল: arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com