November 21, 2024, 8:46 am
চিকিৎসক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য পেশাদারদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশকে সহায়তা করার ইচ্ছা পোষণ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত রোগ মোকাবেলায় এবং সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজ অর্জনে বাংলাদেশকে সহায়তা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। ডব্লিউএইচওর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদ শুক্রবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এ আগ্রহ প্রকাশ করেন। সাক্ষাতের পর প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
নজরুল বলেন, “ডব্লিউএইচও বিশেষ করে চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট পেশাদারদের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ প্রদানে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।” জাতিসংঘের সংস্থাটি বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত রোগ, মানসিক স্বাস্থ্য এবং জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী যেমন নারী, শিশু এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহায়তাসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে কাজ করবে।
যেহেতু বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দেশ, যে কোনো দুর্যোগে নারী, শিশু এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাই ডব্লিউএইচও জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীগুলোর জন্য কাজ করবে। এছাড়াও, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত রোগের মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সহায়তা করবে যার মধ্যে রয়েছে বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট রোগ। মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে, সংস্থাটি সমস্ত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য পেশাদারদের পাঠ্যক্রমে রোগীদের সঙ্গে আচরণ করার ক্ষেত্রে আচরণগত পদ্ধতির মতো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশে সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজের জন্য সহায়তা দেবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডব্লিউএইচও বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী।
স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার সরকার সারা দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছে এবং ক্লিনিক থেকে নারী ও শিশুদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ সরবরাহ করা হয়। তিনি আরও বলেন, সুতরাং, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে, গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে। অল্পবয়সী মেয়েরা স্তন ক্যান্সার নিয়ে কথা বলতে লজ্জাবোধ করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী স্তন ক্যান্সারের দ্রুত নির্ণয়ের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার ধরা পড়লে রোগটি নিরাময়যোগ্য। স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয়ে সরকার উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে রেফারেল সিস্টেম চালু করার জন্য কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ভুটানকে সেখানে বার্ন ইউনিট নির্মাণে সহায়তা করবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাস্থ্য শিক্ষার একটি আঞ্চলিক কেন্দ্র হতে যাচ্ছে কারণ ইতোমধ্যেই ভূটান, নেপাল ও ভারত থেকে প্রচুর শিক্ষার্থী বাংলাদেশে রয়েছে। সরকার এ কর্মসূচি সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। ‘কোভিড-১৯ অতিমারীর সময়ে সরকার জরুরি ভিত্তিতে ২৫ হাজার চিকিৎসক ও ১৫ হাজার নার্স নিয়োগ করেছে। সরকার বেসরকারি স্বাস্থ্য চিকিৎসকদের জন্য লাইসেন্সিং পরীক্ষা চালু করতে যাচ্ছে।’ গত ১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন সায়মা ওয়াজেদ। সায়মা ওয়াজেদ বাংলাদেশের প্রথম এবং এই পদে অধিষ্ঠিত দ্বিতীয় নারী। এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক সুগত বসু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে তারা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেন এবং বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের মধ্যে বন্ধনের ওপর আলোকপাত করেন।
উভয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। সুগত বসু, সুভাষ চন্দ্র বসু এবং শরৎ চন্দ্র বসুর পরিবারের সদস্য। তিনি শরৎচন্দ্র বসুর নাতি।
Comments are closed.