November 21, 2024, 8:44 am

সাংবাদিক আবশ্যক
সাতক্ষীরা প্রবাহে সংবাদ পাঠানোর ইমেইল: 1linenewsagency@gmail.com
নতুন বই বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

নতুন বই বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিন পাঠ্যবই উৎসব করার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় এ বছরও দেশে বই উৎসব হচ্ছে না। তবে বছরের প্রথম দিন প্রতিষ্ঠানে বই বিতরণ কার্যক্রম চলবে। গতকাল বৃহস্পতিবার এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসএসসির ফল প্রকাশের পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। রাজধানীর আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই তুলে দেন। পাঠ্যপুস্তক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গঠনের জন্য সোনার মানুষ হবে আজকের শিক্ষার্থীরা। এজন্য তাদের সেভাবে গড়ে তুলতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের নজর দেওয়ার তাগিদ দেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের দিনটা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলাফল ঘোষণা পাশাপাশি নতুন বছরের নতুন বই দেওয়া হচ্ছে। বই হাতে পাওয়ার আনন্দ আলাদা, নতুন বই মলাট লাগানো ও তাতে নাম লেখা, এটা অন্য রকম অনুভূতি। তিনি বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী যাতে পিছিয়ে না থাকে, তাদের উপযোগী করেও বই প্রস্তুত করে দিচ্ছি। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের নিজেদের ভাষায় বই তৈরি করে দিচ্ছি। এ পর্যন্ত আমরা তাদের ৫টি ভাষা পেয়েছি। সে ভাষায় বই করে দিয়েছি। সরকারপ্রধান বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্মিলিতভাবে করোনায় ভার্চুয়াল শিক্ষা চালু রেখেছে। সবার হাতে বই দিয়ে ঘরে বসে শিক্ষাকার্যক্রম চালানোর সুযোগ চালু করা হয়েছে। চার কোটির বেশি শিক্ষার্থীর হাতে ৩৪ কোটিরও বেশি বই ১ জানুয়ারি ২০২২ এরমধ্যে দেওয়া হবে। ২০১০ থেকে আমরা এ কার্যক্রম করে আসছি। একটা বিশাল অংকের বই আমরা দিয়েছি। তিনি বলেন, অনলাইনে শিক্ষাটা চালু রাখতে হবে। করোনা কখনও কমছে, কখনও বাড়ছে। শীতে করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়লে যেনো অনলাইনে শিক্ষাটা চালু রাখা যায়। এর জন্য যা যা প্রয়োজন আমরা ব্যবস্থা করবো। সংসদটিভি সবসময় তারা ব্যবহার করতে পারবে। ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’, এ কার্যক্রমে সবার সহযোগিতা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, টিকা প্রথমে শিক্ষকদের দিয়েছি, এখন শিক্ষার্থীদের দিচ্ছি। সব শিক্ষার্থী যেনো টিকা দেয়, সে দিকে সবার খেয়াল রাখতে হবে। এসময় অভিভাবক ও শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালি পড়ালেই হবে না। শিক্ষার্থীদের পুষ্টি নিশ্চিতে অভিভাবকরা খেয়াল রাখবেন। শিক্ষকদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও দুই লাখ শিক্ষকদের ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। অমনোযোগী হলেও মারধর নয়, কেয়ার করতে হবে। এটাও একধরনের প্রতিবন্ধিতা। এদিকে আরও বেশি নজর দিতে হবে। শহরে বাচ্চাদের নানা সংকট তুলে ধরে তিনি বলেন, বাচ্চারা টিভি মোবাইল ফোন নিয়ে সময় কাটায়। শহরে এককভাবে থাকতে গিয়ে বাচ্চাদের চাহিদায় নজর দিতে পারে না। বাচ্চারা চায় তাদের সাথী, বাবা-মাকে সাথী হতে হবে। মানসিকভাবে বেড়ে ওঠার শিক্ষা দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষাকে স্বীকৃতি দিয়েছি। কারিগরি ভোকেশনাল ট্রেনিং দিচ্ছি। কোনো কাজকে ছোট করে দেখা উচিত নয়। নিজের কাজ নিজে করা, সেই শিক্ষাটাও দিতে হবে। কৃষকের ছেলে বড় হয়ে তার বাবাকেই বেশি সম্মান দেওয়া উচিত। শিক্ষা নিয়ে বড় হয়েও বাবার সঙ্গে মাঠে নেমে কাজ করা উচিত। তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী নাগরিক তৈরি করতে হবে। প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। সমাজকে এমনভাবে গড়ে তোলার আকাক্সক্ষা আমার, যাতে কেউ কাউকে কাজের জন্য হুকুম দিতে না পারে। নিজের কাজ নিজে করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো কাজকেই ছোট করে দেখা উচিত নয়। তিনি বলেন, শ্রমের মর্যাদার শিক্ষাটা আমাদের ছেলেমেয়েদের দিতে হবে। অনেক সময় কৃষকের ছেলে বড় অফিসার হলে বাবার পরিচয় দিতে চায় না। মাথার ঘাম পয়ে ফেলে যে বাবা তাকে পড়ালো, সেই বাবাই তো বেশি মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য। শেখ হাসিনা বলেন, উচ্চ শিক্ষিত হয়ে একটা ফুলপ্যান্ট পরে অনেকেই মনে করে তার আর মাঠে নামার দরকার নেই। মাঠে নামতে চাই না। এটা একটা মানসিক দৈন্যতা। এ দেশের মানুষের মধ্যে এই প্রবণতা থাক, এটা আমরা চাই না। সরকারপ্রধান বলেন, যারা অসচ্ছল তাদের আমরা বৃত্তি দিচ্ছি। মাদ্রাসাতেও ভোকেশনাল ট্রেনিং দিচ্ছি। আমরা সারাদেশে কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী ফল পাওয়া শিক্ষার্থী, তাদের শিক্ষক ও অভিভাবকদের অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, করোনার কারণে প্রতিষ্ঠানে ঠিকমতো ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে এবার ভালোভাবে লেখাপড়া করবে। পড়াশুনাটা চালিয়ে যেতে হবে। অভিভাকদের আমি অনুরোধ করবো, তাদের আপনারা সহযোগিতা করবেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আমরা শিশুদের পুষ্টির বিষয়ে সচেতন করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। অভিভাবক ও শিক্ষকরাও নজর রাখবেন, তারা যেন পুষ্টি বিষয়ে খেয়াল রাখে। শিক্ষার্থীদের ধমক না দিয়ে দেখতে হবে তারা কেন পারছে না এবং তাদের সেই অনুযায়ী শেখাতে হবে। শিক্ষকদের মানসিক শিক্ষা ব্যাপারে ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী ধমক দিলে ভয় পায়, তাদের সঙ্গে তাদের অবস্থা জেনে কথা বলতে হবে। তিনি বলেন, বাচ্চারা যাতে সবার সঙ্গে মিশে চলতে পারে, সেভাবেই শিক্ষা দিতে হবে। সেভাবেই সবাইকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ থাকছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের টিকা দিচ্ছি। টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকের মধ্যে অনীহা দেখা দিচ্ছে। সবাইকে কিন্তু ভ্যাকসিন নিতে হবে। কমিউনিটি ক্লিনিক ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে গ্রাম পর্যায়ে নিয়ে টিকা দেওয়া হবে। শুধু পরিবারের অভিভাবক না, সবাইকে টিকা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। শেখ হাসিনা আরও বলেন, সবাইকে সব কাজ করতে হবে। পুরুষকেও ঘরের কাজে নারীকে সহযোগিতা করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে আজকের শিক্ষার্থীরা সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছোট্ট সোনামনিরা নতুন বছরে নতুন বই পেতে যাচ্ছে। নতুন বই হাতে পাওয়ার অনন্দটাই আলাদা। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ পাওয়া, হাতে নেওয়াÑএ একটা আলাদা অনুভূতি। শেখ হাসিনা বলেন, যারা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, তারাও যেন পিছিয়ে না থাক এজন্য আমরা ব্রেইল পদ্ধতিতে বই তৈরি করে দিচ্ছি। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদেরও তাদের নিজেদের ভাষায় বই তৈরি করে দিচ্ছি। এ রকম ৫টি ভাষায় আমরা বই তৈরি করে দিয়েছি। যাতে তারা তাদের ভাষাটা ভুলে না যায়। সরকারপ্রধান বলেন, করোনার কারণে বই উৎসব আমরা করতে পারছি না। কিন্তু আমরা বই বিতরণ করছি। গতবারও করোনার কারণে উৎসব করতে না পরলেও বই পৌঁছে দিয়েছি। তাছাড়া সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে আমরা শিক্ষাকার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। ছেলেমেয়েদের ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা নিতে ব্যবস্থা নিয়েছি। তারা যেন পিছিয়ে না থাকে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করার সময় এই অনুষ্ঠান করছি। যার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি, বাঙালি জাঁতি হিসেবে আত্মপরিচয় পেয়েছি, বাংলাদেশ নামক একটা দেশে পেয়েছি। তাকেই ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে হত্য করা হয়। একই দিনে আমরা মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, আমার তিন ভাই, সেইসঙ্গে আমার পরিবারের অনেক সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, পাকিস্তান আমলে একসময় মানুষের শিক্ষার সুযোগ ছিল না। আমাদের মাতৃভাষার অধিকার পর্যন্ত তারা কেড়ে নিতে চেয়েছিল। যখন আমাদের ভাষা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল, তখন বঙ্গবন্ধু আন্দোলন করেন। তিনি কারাবরণও করেন। মানুষ যতে উন্নত জীবন পায়, শিক্ষা পায়, এজন্য তিনি কাজ করে গেছেন। শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধপরবর্তী একটি বিধ্বস্ত দেশে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেন। তিনি বিনামূল্য পাঠ্যপুস্তক বিতরণ এবং শিক্ষার্থীদের কাপড় বিতরণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষাকে সম্পূর্ণভাবে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করেন। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায়ও গুরুত্ব দেন। বিজ্ঞানী ড. কুদরাত-এ খুদাকে প্রধান করে একটি কমিশিন গঠন করে দেন। যেন একটা উন্নত শিক্ষার ব্যবস্থা হয়। কিন্তু তিনি তা বস্তবায়নের সুযোগ পাননি। তাকে হত্যা করা হলো। পরে যারা সরকারে আসে তারা আর এটি এগিয়ে নিতে পারিনি। ২১ বছর এভাবে চলতে থাকে। ২১ বছর পর সরকারে এসে আমরা আবার শিক্ষা কমিশন গঠন করি এবং ভকেশনাল ও বিজ্ঞান শিক্ষাকে গুরুত্ব দিই। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এ ছাড়া দুই মন্ত্রণালয়ের সচিব, সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘পাঠ্যপুস্তক উৎসব’ উদ্বোধন করার পর ১ জানুয়ারি থেকে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া হবে। তবে এ বছর একদিনে সব শিক্ষার্থীকে বই দেওয়া সম্ভব হবে না। পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থীরা নতুন বই পাবে।


Comments are closed.

ইমেইল: arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com