December 26, 2024, 6:36 pm
সারা দেশে ক্রমাগত নারী ও শিশু নির্যাতনের প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ‘যৌন আক্রমণ আর না!’ শীর্ষক শিরোনামে এ কর্মসূচি পালিত হয়। সাতক্ষীরায় কর্মরত ২১টি বেসরকারি উন্নয়ন ও মানবাধিকার সংগঠন ও নেটওয়ার্কের যৌথ আয়োজনে সমগ্র কর্মসূচি পালন করা হয়।স্বদেশ সংস্থার পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত এর সঞ্চালনায় “আমরাই পারি” সাতক্ষীরা জেলা জোটের চেয়ারম্যান শিক্ষাবিদ্ আবদুল হামিদ সভাপতিত্ব করেন। বক্তব্য রাখেন, শিক্ষাবিদ সুভাষ সরকার, আব্দুস সবুর বিশ্বাস, লুইস রানা গাইন, অপরেশ পাল, জ্যো¯œা দত্ত, আবুল কালাম আজাদ, আনিসুর রহিম, আহ্জুয়ারা বেগম, এড, মনিরুদ্দিন, মুনির জমাদ্দার, জাভেদ হাসান, গোবিন্দ ঘোষ, ফজিলা বেগম, হাসনা হেনা, আবুল ফজল মো: আব্দুল আহাদ, প্রমুখ। নারী পক্ষ আহুত মানববন্ধন ও পথসভায় উন্নয়ন সংগঠন-স্বদেশ, একশন এইড বাংলাদেশ, সেতুবন্ধন গড়ি নেটওয়ার্ক, হেড সংস্থা, অগ্রগতি, উত্তরণ, মুক্তি ফাউন্ডেশন, এইচআর ডিএফ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, জেলা নাগরিক কমিটি, আশা রোককেন্দ্র, সিডো, পদ্মলোক কেন্দ্র, বাংলাদেশ ভিশন, উদ্দিপ্ত, নবজীবন, জোগরনী মহিলা সংস্থা, টেরেডেস হোমস নেদারল্যান্ড প্রভৃতি।মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ২০১৯ সালের জানুয়ারি-জুন ২০১৯ পর্যন্ত ৬৩০ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। যা রীতিমতো উদ্বেগজনক। এসব ঘটনায় একজন দ্বারা ধর্ষণ ৪৬৪ জন ও দলবদ্ধ ধর্ষণ ১৫৩ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩৭ জনকে। ধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ৭ জন। ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছে ১০৫ জন নারীর উপর; এর মধ্যে হত্যা করা হয়েছে ১ জনকে, আত্মহত্যা করেছেন ১ জন। যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১২৭ জন, এর মধ্যে আত্মহত্যা করেছেন ৮ জন। ধর্ষণের প্রতিবাদ করায় খুন হয়েছে ৩ জন নারী ও ২ জন পুরুষ।বক্তারা আরও বলেন, নারীর উপর সহিংসতা নতুন কোন বিষয় নয়। এর মোকাবেলায় সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগও চলমান আছে। তবে নারীর উপর সহিংসতা দমনে রাষ্ট্র এতটাই ব্যর্থ যে সহিংসতা এখন মহামারী আকার ধারণকরেছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সকল বয়সের নারী যৌন সহিংসতা ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে; ছেলে শিশুরাও বলাৎকার থেকে রেহাই পাচ্ছে না। কেউ কেউ বলছেন, বাংলাদেশে ধর্ষণ ও ধর্ষণ করে হত্যার মহোৎসব চলছে। ঘরে, বাইরে, রাস্তাঘাটে, যানবাহনে, কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, ধর্ষণ চেষ্টা বা যৌন হয়রানি, উত্যক্তকরণ, এসিড আক্রমণসহ নানাবিধ সহিংসতার শিকার হচ্ছে নারী ও শিশু। পরিবার, সমাজ, এমন কিরাষ্ট্র এবং আইন-শৃঙ্খলারক্ষার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তির কাছেও নিরাপদ নয়।অংশগ্রহণকারীরা দাবি করেন এবং বলেন, নারী ও শিশুর উপর সকল সহিংসতার বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নির্মাণ করি। দেশে আইনের শাসন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী ও ঐক্যবদ্ধ হই।সহিংসতার শিকার নারী ও শিশুকে সকল সেবা পেতে সাহায্য করি। সহিংসতার ঘটনা লুকিয়ে না রেখে অভিযোগ দাখিল করতে সাহায্য করি। নারীর উপর যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ নারীর জন্য লজ্জা না বরং নির্যাতনকারীর লজ্জা, তাই যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার নারীকে দোষারোপ করার চর্চা বন্ধ করি। ভোগ্যবস্তু নয় নারীকে মানুষ ভাবি।মানববন্ধন থেকে জাতীয় সংসদের কাছে দাবি জানানো হয়, কার্য তালিকায় নারীর উপর যৌন সহিংসতা ও ধর্ষণ সংক্রান্ত আইনের প্রয়োগ ও প্রতিবন্ধকতা বিষয় অন্তর্ভুক্ত করুন, নারীর উপর যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণসহ সকল সহিংসতা প্রতিরোধ ও প্রতিকার করতে যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন এবং সংস্কার করুন, সহিংসতার শিকার নারীর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি পূরণের বিধান রেখে আইন প্রণয়ন ও সংস্কার করুন।বিচার বিভাগের কাছে জানানো দাবির মধ্যে রয়েছে আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করুন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিচার কাজ সম্পন্ন করুন।সরকারের কাছে যেসব দাবি করা হয় তা হচ্ছে, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থল এবং প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন ও সক্রিয় করুন, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করুন, থানা, হাসপাতাল ও আদালতকে নারীবান্ধব করার সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণকরুন, পাঠ্যসূচীতে নারীর প্রতি নেতিবাচক ও বৈষম্যমূলক বিষয় পরিহার করুন, ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরুণ, সরকারী দলিলসমূহ এবং প্রচার মাধ্যমে নারীকে নিয়ে অবমাননাকর শব্দ-বাক্য ব্যবহার বন্ধ করুন, জাতীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করে নারীর উপর সহিংসতা, যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ সংক্রান্ত সকল আইন বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও প্রতিবন্ধকতা নিয়মিত পরিবীক্ষণ এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দিন।সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, আসুন আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই: নারীর উপর যেকোন ধরনের নির্যাতন ও সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হবো এবং রুখে দাঁড়াব; কোন অবস্থায়ই আমরা সঙ্কুচিত হব না, ভীত হব না, পিছপা হব না। আর একজন নারীকেও ধর্ষণের শিকার হতে দেব না, একজন পুরুষকেও ধর্ষক হতে দেব না।
Comments are closed.