November 21, 2024, 8:41 am
ব্যাপক সংঘর্ষ-সংঘাত: রক্তক্ষরণ ও প্রাণহানির মধ্য দিয়ে গত ১১ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদের দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে সরকারি দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ১৩১ ইউনিয়ন পরিষদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই থাকতে পারে নি। সরকারি দলের মনোনয়ন পাওয়ার ইঁদুর দৌড়ে ব্যাপক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মনোনয়ন বাগিয়ে নিলেও জনগণ তাদের গ্রহণ করেন নি। অনেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকারও করতে পারেন নি। কেউ কেউ জামানতও হারিয়েছেন। ১১ নভেম্বর ৮৩৩ টি ইউপিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৪৮৫টি ইউপিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক। অবশ্য নির্বাচনে ৭টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ কাউকে দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে উন্মুক্ত রেখেছিল। সে হিসেবে দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচনে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ৫৯ শতাংশ ইউপিতে বিজয়ী হয়েছে।
প্রথম ধাপে দু’দফায় গত এপ্রিল ও জুনে ৩৬৫টি ইউপিতে ভোট হয়েছিল। সেখানে ১৩টিতে আওয়ামী লীগের নৌকার কোনো প্রার্থী ছিল না। সেই নির্বাচনে ২৬৯টিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছিল। সেই হিসেবে ৭৬ শতাংশ ইউপিতে জয় পায় আওয়ামীলীগ। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের ফলাফল তুলনা করলে দেখা যায় প্রথম ধাপের তুলায় দ্বিতীয় ধাপে নৌকার জয়ের হার কমেছে। আসলে দলীয় কোন্দল, প্রার্থী বাছাইয়ে সাংসদের প্রভাব, তৃণমূলের নেতাদের মতামতে গুরুত্ব না দেয়া সহ মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে এমন ফল ঘটেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অবশ্য আওয়ামী লীগ নীতি নির্ধারনী নেতারাও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন।
২০১৬ সাল থেকে ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন শুরু হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছিল। তবে অনেক জায়গায় তাদের প্রার্থী ছিল না। মোট ২০৭ টি ইউপিতে বিনাপ্রতিদ্বন্দিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন ওই নির্বাচনে। তখন মোট ইউপির ৫ শতাংশে চেয়ারম্যান পদে ভোটের দরকার হয় নি। এবার বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেনা। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী প্রার্থী বাড়ছে। প্রথম দু’ধাপে ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আর দ্বিতীয় ধাপে ভোট ছাড়া নির্বাচিত হয়েছেন ৮০ জন চেয়ারম্যান।
মূলত: স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আত্মীয়তা, ব্যক্তি গত যোগাযোগ, বন্ধু-বান্ধব ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা ভোট যুদ্ধে এগিয়ে থাকেন। কিন্তু দলগত ভাবে নির্বাচন শুরু হবার পর থেকেই রাজনৈতিক প্রভাব, অর্থ বিনিয়োগ সহ নানা কারণে অনেক ক্ষেত্রেই মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে থাকলেও সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেন। দু’দফার ভোটের পরিসংখ্যানে তা আরো স্পষ্ট হয়েছে। ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ইউপি নির্বাচনের তৃতীয় ধাপ। ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে। সরকার দলীয় মনোনীত নৌকার প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ করে অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন যুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচন অনুষ্ঠানের ফল বিশ্লেষণ করলে আমরা বুঝতে পারবো সরকারি দলের মনোনয়ন কতটা জন বান্ধব। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে যেভাবে প্রাণহানি ঘটেছে প্রভাব প্রতিপত্বি বিস্তারের জন্য; তার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে। আমরা চাই নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হোক প্রতিহিংসামূলক নয়।
Comments are closed.