November 21, 2024, 9:06 am

সাংবাদিক আবশ্যক
সাতক্ষীরা প্রবাহে সংবাদ পাঠানোর ইমেইল: 1linenewsagency@gmail.com
নির্বাসনে শেখ হাসিনার দুঃসহ দিনগুলি

নির্বাসনে শেখ হাসিনার দুঃসহ দিনগুলি

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার সময় বিদেশে অবস্থানের কারণে তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যান। পরে দীর্ঘ প্রবাসজীবন শেষে ভারত হয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেন তিনি।

১৫ আগস্ট জাতির জনককে হত্যার মধ্য দিয়ে পুনরায় ক্ষমতাসীন হয় দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের বিরোধীপক্ষ ৭১ এর পরাজিত শক্তি। মোশতাক-জিয়ার নেতৃত্বে পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন হয় আজীবন বাঙালিত্বের বিরোধিতাকারী অপশক্তি। ইতিহাসের চাকা ঘুরতে থাকে পেছনের দিকে। ১৯৭৬ সালের ৩ মে এক ফরমান জারি করে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক নিষিদ্ধ সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলগুলোকে পুনর্বাসিত করেন জিয়াউর রহমান।

১৯৭৬ সালের ২১ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সায়েমের কাছ থেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদ কেড়ে নিয়ে কিছুদিন পর স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হন জিয়াউর রহমান। ১৯৭৭ সালের ৩০ মে আইয়ুবীয় কায়দায় হ্যাঁ-না ভোটে ৮৮ দশমিক ৫ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতিতে ৯৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ ভোট তার পক্ষে দিয়েছে বলে প্রচার করেন। ১৯৭৬ সালের ২৮ জুলাই পিপিআর ঘোষিত হওয়ার পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত হয়। যদিও সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতায় আরও দুটি আওয়ামী লীগ তৈরির চেষ্টা করা হয়। আওয়ামী লীগে একাধিক বিভাজন সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের মূল আওয়ামী লীগই টিকে যায়।

এরপরও আওয়ামী লীগকে কোণঠাসা করতে কম চেষ্টা হয়নি। ‘রাজনীতি রাজনীতিকদের জন্য ডিফিকাল্ট’ করার রাজনীতির প্রবর্তক জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদের ব্যাপক জালিয়াতিপূর্ণ নির্বাচনে ২০৭টি আসন পেয়ে ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বরে গঠিত বিএনপি সংসদ দখল করে। প্রথমে মশিউর রহমান যাদু মিয়াকে সিনিয়র মন্ত্রী এবং পরে ১৯৭৯ সালের ১২ মার্চ তিনি মারা গেলে পাকিস্তানপন্থী মুসলিম লীগ নেতা শাহ্ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করেন। বাংলাদেশকে পাকিস্তানিকরণের ষোলোকলা পূর্ণ করলেন জিয়াউর রহমান।

এমন প্রেক্ষাপটে ১৯৮১ সালের ১৩-১৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সময় ভাগ্যক্রমে বিদেশে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া শেখ হাসিনা নির্বাসিত জীবনযাপন করছিলেন দিল্লিতে। সভাপতি পদ গ্রহণে শেখ হাসিনাকে রাজি করানো এবং দেশে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগের অংশ হিসেবে দিল্লিতে একাধিক বৈঠকে বসেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনে নানামুখী উদ্যোগ নেন তিনি। পাশাপাশি জনগণের গণতান্ত্রিক এবং ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অবিরাম সংগ্রাম শুরু করেন। তারই উদ্যোগে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী-সমর্থকদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা দেখা দেয়। দেশবাসীও উজ্জীবিত হয় নতুন প্রেরণায়।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ স্বৈরাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলে। তার নেতৃত্বেই দলটি দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ ধরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম অব্যাহত রাখলে ১৯৯০ সালে স্বৈরশাসক এরশাদের পতন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়। মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়সহ গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে কয়েকবার গৃহবন্দি হয়েছেন শেখ হাসিনা। ওয়ান-ইলেভেনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই গ্রেফতার হয়ে প্রায় ১১ মাস বিশেষ কারাগারে বন্দিও ছিলেন তিনি।

এর আগে রাজনৈতিক সংস্কারের নামে চেষ্টা চলে দুই নেত্রীকে বাদ দেওয়ার মাইনাস-টু ফর্মুলা বাস্তবায়নের। কূটচালের অংশ হিসেবে সে সময় বাধা দেওয়া হয়েছিল শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতেও। শেখ হাসিনার অবর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাকে বিপজ্জনক ব্যক্তি হিসেবে হুলিয়া জারি করে। ২০০৭ সালের ১১ এপ্রিল লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে শেখ হাসিনাকে ঢুকতে দেওয়া হলেও ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের বিমান তাকে নামিয়ে দেয় সেনাশাসকদের হুমকির ভয়ে।

সব নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ৭ মে দেশে ফিরেছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তার প্রবল জনসমর্থনে ভীত হয়েছিল শাসকরা। মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে সংসদের সাব জেলে ১০ মাস ২৫ দিন কারাবরণ করতে হয় শেখ হাসিনাকে। এরপরের ইতিহাস অর্জনের, এগিয়ে যাওয়ার।

সে সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী গণমাধ্যমকে স্পষ্ট বলেন দেন, ‘আমি জেলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। তারপরেও আমি আমার দেশে ফিরতে চাই। কেনো তারা (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) আমাকে ফিরতে দিচ্ছে না।’

তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এ পর্যন্ত চার মেয়াদে ক্ষমতাসীন হয়েছে। প্রথমবার ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে জাতীয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হয়ে ২৩ জুন সরকার গঠন করে তারা। দ্বিতীয়বার ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের ঐতিহাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ মহাজোট তিন-চতুর্থাংশ আসনে বিশাল জয় পেয়ে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করে।

তৃতীয়বার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিশাল বিজয় নিয়ে ১২ জানুয়ারি সরকার গঠন করে তারা। তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। এবং সবশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিশাল জয় পায় আওয়ামী লীগ। শত বাধা আর ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেও তিনি সমৃদ্ধ দেশ গড়তে কাজ করে চলেছেন নিরবধি।


Comments are closed.

ইমেইল: arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com