October 22, 2024, 4:27 pm

সাংবাদিক আবশ্যক
সাতক্ষীরা প্রবাহে সংবাদ পাঠানোর ইমেইল: arahmansat@gmail.com
নোবেল শান্তি পুরস্কার কি শুধুই আনুষ্ঠানিকতা?

নোবেল শান্তি পুরস্কার কি শুধুই আনুষ্ঠানিকতা?

নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গতকাল ঘোষণা করা হয়েছে এ বছর শান্তিতে নোবেল বিজয়ীর নাম। নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী গড়তে ও যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিকে (ডব্লিউএফপি) প্রদান করেছে এবারের শান্তি পুরস্কার। ২০২০ সালে এ পুরস্কার পাওয়ার দৌঁড়ে ২১১ জন ব্যক্তি ও ১০৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে ছিলো পরিবেশকর্মী গ্রেটা থানবার্গ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তাই শেষ পর্যন্ত বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির শান্তিতে নোবেল পাওয়ার খবরে অবাক হয়েছেন অনেকেই।

নরওয়ের আইনজীবী ও দীর্ঘ সময় ধরে নোবেল শান্তি পুরস্কার মনোনয়ন প্রক্রিয়ার সমালোচনাকারী ফ্রেডরিক হেফারমেল বলেছেন, নোবেল কমিটি বেশিরভাগ সময় শান্তি প্রতিষ্ঠার একটি মাত্র দিক বিবেচনা করে এ পুরস্কার প্রদান করে। এ কারণে পৃথিবীতে সত্যিকারের শান্তি স্থাপন করা কঠিন হয়ে পড়ছে। তারা আলফ্রেড নোবেলের উইলের অনুসরণ করছে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।

জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত বিপর্যয় পৃথিবীর প্রাণ-প্রকৃতিকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এর সাথে যোগ হয়েছে উগ্র জাতীয়তাবাদ। উন্নত দেশগুলো নিজেদের স্বার্থে পরিবেশের কথা বিবেচনা না করে উৎপাদন ও ভোগের পরিমাণ বাড়িয়েছে। আর এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো। সতেরো বছরের কিশোরী গ্রেটা থানবার্গ পৃথিবীর মানুষকে সচেতন করার অভিপ্রায়ে শুরু করেছে পরিবেশবাদী আন্দোলন। তাকে শান্তি পুরস্কার প্রদান করে নোবেল কমিটি বিশ্বে পরিবেশবাদী আন্দোলনকে স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে আরো ত্বরান্বিত ও কার্যকর করতে পারতো বলে মনে করেন অনেকে।

এছাড়া করোনা মহামারী মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিরলসভাবে কাজ করার প্রচেষ্টাও পেতে পারতো স্বীকৃতি। কিংবা কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসানে ও সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাওয়া গণতন্ত্রকামী কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির হাতে উঠতে পারতো এ পুরস্কার। আর তেমনটা হলে তা বিশ্বে সত্যিকারের শান্তি প্রতিষ্ঠায় অনেক অবদান রাখতে পারতো। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি যদিও ক্ষুধা দূরীকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে, এরপরেও সামগ্রিক বিবেচনায় ডব্লিউএফপির চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিলো গ্রেটা, ডব্লিউএইচও এবং মানবাধিকার কর্মী ও সংস্থাগুলো।

নোবেল কমিটির এমন সিদ্ধান্তের পেছনে শক্তিশালী দেশগুলোর মন রক্ষার বিষয়টি কাজ করতে পারে বলে অনেকের ধারণা। গ্রেটার পরিবেশবাদী আন্দোলনকে অনেক উন্নত দেশই বাঁকা চোখে দেখে। তার দাবিগুলো মেনে নিলে সেসব দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিধায় তারা তার কথায় খুব একটা কর্ণপাত করে না। আর সেই গ্রেটা ও তার পরিবেশবাদী আন্দোলনকেই যদি শান্তিতে নোবেল দেয়া হয় তবে তার প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী। ওদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের এখন দা-কুমড়া সম্পর্ক। তাকে নোবেল দিয়েও হয়তো বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশটির রোষানলে পড়তে চায়নি নোবেল কমিটি। একই কথা প্রযোজ্য মানবাধিকার কর্মী ও সংস্থাগুলোর বেলায়। বিশ্বের কর্তৃত্ববাদী শাসকদের অস্বস্তিতে ফেলতো তাদের এমন সম্মাননা।

এসব দিক বিবেচনায় নোবেল কমিটির কাছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিকে শান্তি পুরস্কার দেয়াই হয়তো নিরাপদ মনে হয়েছে। আর তাদের এই মনোভাব নোবেল শান্তি পুরস্কারকে পরিণত করেছে শুধুই আনুষ্ঠানিকতায়। নরওয়ের নোবেল কমিটি যেন এখন কাউকে শান্তিতে নোবেল দিতে হয় বলেই দিচ্ছে!


Comments are closed.

ইমেইল: arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com