November 21, 2024, 9:05 am

সাংবাদিক আবশ্যক
সাতক্ষীরা প্রবাহে সংবাদ পাঠানোর ইমেইল: 1linenewsagency@gmail.com
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে: সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে: সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুই দেশের মধ্যেকার প্রীতির সম্পর্ককে সুসংহত করে আমরা আরও এগিয়ে যেতে চাই। গতকাল বুধবার গণভবনে সদ্য সমাপ্ত ভারত সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। সাম্প্রতিক সফরে দুই দেশের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি কোভিড মহামারির প্রেক্ষিতে দীর্ঘ তিন বছর বিরতির পর আমার এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। তিনি বলেন, সফরের পুরো সময় জুড়ে আমরা ভারতের আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ ও সৎ প্রতিবেশী হিসেবে সমতা ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে দু’দেশের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার লক্ষ্য করেছি। ভারতীয় নেতৃত্বের শীর্ষ পর্যায়ে, সংবাদ মাধ্যমে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আমি বাংলাদেশের জন্য যে প্রীতি ও সৌহার্দ্য লক্ষ্য করেছি তা সত্যিই অসাধারণ। এই প্রীতির সম্পর্ককে সুসংহত করে আমরা আরও এগিয়ে যেতে চাই। সফরের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন হলে দুই দেশের মানুষ উপকৃত হবে আশাবাদ ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, এই সফরে সহযোগিতার যে সব ক্ষেত্র চিহ্নিত হয়েছে এবং বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করলে উভয় দেশের জনগণ উপকৃত হবে বলে আমি মনে করি। তিনি বলেন, সব মিলিয়ে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে এ সফরের মাধ্যমে দুই দেশের একসঙ্গে নতুনভাবে এগিয়ে চলার গতি সঞ্চার হয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, উভয় দেশের জনগণের কল্যাণে এই সহযোগিতার ধারা অব্যাহত থাকবে এবং বাংলাদেশ ও ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়া অচিরেই একটি সমৃদ্ধশালী অঞ্চলে পরিণত হবে। ঐতিহাসিক ভাবে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্কের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত আমাদের কাছের প্রতিবেশি এবং বন্ধুরাষ্ট্র। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। ভাষা ও সংস্কৃতির সাযুজ্যের কারণে আমাদের সম্পর্ক প্রগাঢ় হয়েছে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধকালে সহায়তা ও স্বাধীনতা পরবর্তীকালে সহযোগিতা এ বন্ধুত্বকে বিশেষত্ব দিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশ ভারত অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে ইতোমধ্যেই প্রভূত সাফল্য অর্জন করেছে। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সদ্য ভারত সফরের বেশ কিছু অর্জনের কথা তুলে ধরেন। অর্জনগুলো হলো: কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টনে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, যার মাধ্যমে ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত। সীমান্তে প্রাণহানির সংখ্যা শূণ্যে নামিয়ে আনতে কাজ করতে দুই দেশ সম্মত হয়েছে। ভুটানের সঙ্গে রেল যোগাযোগ ও অন্যান্য আন্তঃসীমান্ত রেল সংযোগে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হবে। চিনি, পেঁয়াজ, আদা, রসুনের মত নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য রপ্তানি বন্ধের আগে বাংলাদেশকে আগাম বার্তা দিতে ভারত সরকার পদক্ষেপ নেবে। বাংলাদেশের মুজিবনগর থেকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত ঐতিহাসিক ‘স্বাধীনতা সড়ক’ চালু করা হবে। নদী দূষণ এবং অভিন্ন নদ-নদীর ক্ষেত্রে নদীর পরিবেশ এবং নদীর নাব্যতা উন্নয়নের লক্ষ্যে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। রেলওয়ে সেবার মান বাড়াতে আইটি সল্যুশন বিনিময় করা হবে। ২০২২ সালের মধ্যে সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি নিয়ে দু’দেশের বাণিজ্য কর্মকর্তাদের কাজ শুরু করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অর্থপাচারকারীদের সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, অর্থপাচারকারী এমন অনেকের তথ্য আছেÑ সেটা আপনারা লিখবেন কিনা সন্দেহ। আমি সোজা কথা বলি, অনেক স্বনামধন্যের তথ্য আমার কাছে আছে। দুর্নীতি দমন কমিশন আর বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সামনে তাদের নাম আসবে, তবে আপনারা ছাপাবেন কিনা আমি সেটা দেখবো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিতীয় কথা হচ্ছেÑঅর্থপাচারকারীর তথ্য নেওয়া হচ্ছে। সুইস ব্যাংকে কিন্তু আমরা বহু আগে ডিমান্ড পাঠিয়েছিলাম। আমরা তালিকা চেয়েছিলাম। কিন্তু তালিকা আসেই নাই। সবাই হাওয়ায় কথা বলে যায় কিন্তু কেউ সঠিক তথ্য দিয়ে বলে না। মানি লন্ডারিং বন্ধে যথেষ্ট উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ডলার সংকট বাংলাদেশের একার না, বিশ্বব্যাপী। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর আমেরিকা স্যাংশন দিলো, তাতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে গেলো। তিনি আরও বলেন, তারপরও আমি বলবো, আমরা ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর রিজার্ভ কত ছিল, করোনার সময় কোনও খরচ ছিল না, আমাদের রিজার্ভ বেড়েছে। এরপর যখন আমদানি শুরু হয়েছে তখন তো কিছু কমেছে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ যেখান থেকে ঋণ নেয় সবসময় ঠিক সময়ে শোধ করে। আমরা কোনোদিন খেলাপি হইনি। সেটা করতে গিয়েও রিজার্ভে একটু টান পড়ে। ডলার নিয়ে কিছু একটা খেলা শুরু হয়েছিল, কিন্তু ভালোভাবে নজরদারি করা হয়েছে বলেই আজকে একটা স্থিতিশীল পরিস্থিতি আছে। কিন্তু সংকট তো আন্তর্জাতিক বিষয় থেকে এসেছে। এখন যে সংকট দেখছেন, হয়তো সামনের বছর আরও বেশি সংকট দেখা দিতে পারে। আমার তো শঙ্কা সারা বিশ্বে দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে, চরম অর্থনৈতিক অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করা দলীয় বিষয়, এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে যাবে না বলে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক সেটাই আমরা চাই। আর যদি কেউ না করে সেটা যার যার দলের সিদ্ধান্ত। সেজন্য আমাদের সংবিধান তো আমরা বন্ধ করে রাখতে পারি না। সংবিধানের যে ধারা সে অনুযায়ী গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত থাকবে। আমরা চাই গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত থাকুক। নির্বাচনী জোট নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এই বিষয়টা তো সময় আসলে বলতে পারব, নির্বাচন যখন হবে। হ্যাঁ, আমরা ১৪ দল করেছি, আমরা জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করেছি। জাতীয় পার্টি আমাদের সাথে ছিল। কিন্তু আমরা আলাদা নির্বাচন করেছি, কিন্তু আমাদের একটা সমঝোতা ছিল। ভবিষ্যৎ নির্বাচনে কে কোথায় থাকবে সেটা তো সময়ই বলে দেবে। আওয়ামী লীগ উদারভাবে কাজ করে আওয়ামী লীগের দরজা খোলা। আর আমাদের সাথে কে থাকবে না থাকবে অথবা নতুন জোট হবে, হবে হোক অসুবিধা নেই তো। বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এত কাজ করার পরে জনগণ অবশ্যই আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে। এটা আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। যদি এই চলমান উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখতে চায়, আর না চাইলে তো কিছু করার নাই, সেটা জনগণের ইচ্ছা। আওয়ামী লীগের প্রার্থী নমিনেশন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, যে কোন নির্বাচনে নমিনেশনের ব্যাপারে পরিবর্তন এটা তো খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। আমরা অবশ্যই যাচাই করে দেখব কার জেতার সম্ভাবনা আছে কার নেই অথবা আমাদের বেশ কিছু নিবেদিতপ্রাণ কর্মী আছে, হয়তো বেশি দিন বাঁচবে না বয়স হয়ে গেছে, বয়োবৃদ্ধ হয়ে গেছে বা কিছু আছে তাদের আর কষ্ট দিতে চাইনি নমিনেশন দিয়েছি আর পরিবর্তন আনিনি। কে ভোট পাবে না পাবে জিতবে কে জিতবে না সবকিছু বিবেচনা করেই নমিনেশন দেওয়া হয়। নির্বাচনের এখনো এক বছর বাকি আছে, সময় যত যাবে ততই বিষয়টা পরিষ্কার হবে।


Comments are closed.

ইমেইল: arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com