November 21, 2024, 8:35 am
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে চলমান কঠোর বিধিনিষেধ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ঈদ-উল-আজহার পর গত ২৩ জুলাই থেকে চলমান বিধিনিষেধ ৫ আগস্ট মধ্য রাত পর্যন্ত চলার কথা রয়েছে। করোনার উচ্চ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এই বিধিনিষেধ বাড়ানোর বিকল্প নেই। অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ এবিএম খুরশীদ আলম শুক্রবার এই কথা বলেছেন।
জানা গেছে, গত ১৫ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে সরকার কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করে। তখনই দেশের স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শক কমিটি বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু সরকার কমিটির সুপারিশ আমলে না নিয়ে বিধিনিষেধ শিথিল করে। উচ্চ সংক্রমণের মধ্যেই বিধিনিষেধ শিথিলের সিদ্ধান্তে পরিস্থিতি নাজুক হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, আমরা আরও দশদিন আগেই কেবিনেট মিটিংয়ে বিধিনিষেধ বাড়ানোর সুপারিশ করেছি। যদিও এ ব্যাপারে এখনও কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি। আমরা বলেছি কেবল জরুরী সেবা ছাড়া যেভাবেই হোক সবকিছু সীমিত রাখতে হবে। এগুলো মনিটর করতে হবে। সব খুলে দিলে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাবে।
তিনি বলেন, যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে, আমরা কিভাবে এই সংক্রমণ সামাল দেব? রোগীদের কোথায় জায়গা দেব? সংক্রমণ যদি এভাবে বাড়তে থাকে তাহলে কি পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব? অবস্থা খুবই খারাপ হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। এসব বিবেচনাতেই আমরা বিধিনিষেধ বাড়ানোর সুপারিশ করেছি।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২৩ জুলাই কঠোর বিধিনিষেধ শুরুর দিনে করোনায় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৬৩৬৪ জন। এছাড়া ২৪ জুলাই করোনায় ৬৭৮০ জন, ২৫ জুলাই ১১২৯১ জন, ২৬ জুলাই ১৫১৯২ জন, ২৭ জুলাই ১৪৯২৫ জন, ২৮ জুলাই ১৬২৩০ জন ও ২৯ জুলাই ১৫২৭১ জন রোগী নতুন শনাক্ত হয়েছেন।
শনাক্তের হার বিবেচনায় ২৩ জুলাই সারাদেশে নমুনা সংগ্রহের বিপরীতে ৩১.০৫ শতাংশ রোগী শনাক্ত হয়েছে। পরদিন সর্বোচ্চ ৩২ দশমিক ৫৫ শতাংশ রোগী শনাক্তের ঘটনা ঘটেছে। ২৫ জুলাই নমুনা সংগ্রহের বিপরীতে করোনা শনাক্তের হার ছিল ৩০ দশমিক ০৪ শতাংশ। ২৬ জুলাই ২৯ দশমিক ৮২ শতাংশ রোগী শনাক্ত হয়েছে। ২৭ জুলাই করোনা রোগী শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ। ২৮ জুলাই করোনা শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ১২ শতাংশ। ২৯ জুলাই করোনা শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ২১।
২৩ জুলাই করোনায় মারা গেছেন ১৬৬ জন। পরদিন ২৪ জুলাই ১৯৫ জন, ২৫ জুলাই ২২৮ জন, ২৬ জুলাই ২৪৭ জন, ২৭ জুলাই ২৫৮ জন, ২৮ জুলাই ২৩৭ জন ও ২৯ জুলাই ২৩৯ জন করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন। সবমিলে গত সাতদিনে ১৫৭০ জন মারা গেছেন। গত সাতদিনে মোট মৃত্যুর ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মৃত্যু ঘটেছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বলেছে, ঈদ-উল-আজহা উদ্যাপন, জনসাধারণের যাতায়াত, ঈদের আগে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা, দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে ২৩ জুলাই সকাল ছয়টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করা হলেও ওইদিন ছয়টা থেকে ১৪ দিন খুবই কঠোর বিধিনিষেধ থাকবে। এই বিধিনিষেধ চলবে আগামী ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত। এরই মধ্যেই বিধিনিষেধ আরও ১০ দিন বাড়ানোর সুপারিশ করল স্বাস্থ্য অধিদফতর। এটি বাস্তবায়নে পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী মাঠে রয়েছে।
খুরশীদ আলম বলেন, বিধিনিষেধ বর্ধিত করার কথা বলেছি। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। বিধিনিষেধ বাড়ানোর বিষয়ে জাতীয় পরামর্শক কমিটি এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি বা আলোচনা করেনি বলেও জানা গেছে।
করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে সরকার এ বছরের ৫ এপ্রিল থেকে ধাপে ধাপে বিধিনিষেধ দিয়ে আসছে। এর পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনও বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ বিধিনিষেধ জারি করেছিল। তবে এখন পর্যন্ত করোনা নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
এদিকে ৫ আগস্টের পর বিধিনিষেধ বহাল থাকবে কিনা সেটি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোন নির্দেশনা আসেনি। এর আগেই গার্মেন্টস ও পোশাক খাতের সংশ্লিষ্টরা দ্রুত কারখানা খোলার দাবি জানিয়েছিলেন। গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কারখানাসহ সবকিছুই বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও কেবিনেট সচিব উপস্থিত ছিলেন। সেখানেও ৫ আগস্টের পর বিধিনিষেধ থাকবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা হয়নি।
তবে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ বিষয়ক সরকারের পরামর্শক কমিটির সদস্য ডাঃ ইকবাল আর্সলান বলেন, দেশে করোনার সংক্রমণ উচ্চহারে বাড়ছে। এটি নিয়ন্ত্রণে কঠোর বিধিনিষেধের বিকল্প নেই। সরকারের ঈদ উপলক্ষে বিধিনিষেধ শিথিলের সিদ্ধান্তই ভুল ছিল। তাই করোনা নিয়ন্ত্রণে বিধিনিষেধ অব্যাহত রাখা উচিত।
Comments are closed.