November 21, 2024, 8:51 am
আবু শাহেদ ইমন তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে অন্যতম। তার পরিচালিত ‘জালালের গল্প’ চলচ্চিত্রটি অস্কারের ৮৮তম আসরের জন্য বিদেশি ভাষার ছবির বিভাগে বাংলাদেশ থেকে নির্বাচিত হয়। এটি ২০১৪ সালে ১৯তম বুসান চলচ্চিত্র উৎসবের এশিয়ান সিনেমা ফান্ড পেয়েছিল। উৎসবটির মূল প্রতিযোগিতা বিভাগ ‘নিউ কারেন্টস’-এ প্রথম বাংলাদেশি ছবি হিসেবে বিশ্ব প্রিমিয়ার হয়। পরের বছর পর্তুগালে অনুষ্ঠিত ১৯তম আভাঙ্কা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা ছবি নির্বাচিত হয়। এতে অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার অর্জন করেন মোশাররফ করিম। এ ছাড়া ছবিটি বিশে^র বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার ও প্রশংসা অর্জন করে। তবে ইমন এখন শুধু পরিচালনা নয়, মানসম্মত সিনেমা প্রযোজনাতেও সমানভাবে কাজ করছেন। তারই সূত্র ধরে এখন তিনি রয়েছেন কোরিয়ার বিশ্ববিখ্যাত বুসান চলচ্চিত্র উৎসবে। তার প্রযোজিত সিনেমা ‘পায়ের তলায় মাটি নাই’ এবারের বুসান চলচ্চিত্র উৎসবে জায়গা করে নিয়েছে। অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাইলে ইমন বলেন, ‘এবার বাংলাদেশ থেকে আসাটা বেশ জটিল ছিল। কারণ ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন শেষ করে উৎসবে অংশ নেওয়ার নিয়ম করা হয়েছে। এ ছাড়া ৭২ ঘণ্টা আগে পিসিআর টেস্ট করতে হয়েছে। এবার বুসানে ৭০টি দেশের ২২৮টি ছবি নির্বাচিত হয়েছে। কিন্তু করোনার জন্য পুরো উৎসবই বেশ সংক্ষিপ্ত পরিসরে হচ্ছে। চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ছাড়া কোনো ধরনের পার্টি, সেমিনার কিছুই হয়নি। আমি তো অনেক বছর ধরেই বুসানে আসছি, কিন্তু এমন চিত্র আগে কখনোই দেখিনি। এবার শুধু সেই ছবির নির্মাতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে যে ছবিগুলো এখানেই ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হচ্ছে আর যে টিমের ভ্যাকসিন নেওয়া আছে। সেদিক থেকে বাংলাদেশের দুটি সিনেমার ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়েছে বুসানে। এ জন্যই বাংলাদেশ থেকে যে তিনটি সিনেমা অংশ নিয়েছে তার কোনো কলাকুশলীই আসতে পারেননি। নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘নো ল্যান্ডস ম্যান’ ও মোহাম্মদ রাব্বী মৃধা পরিচালিত ‘পায়ের তলায় মাটি নাই’। এ ছাড়া আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ নির্বাচিত হয়েছে। এই কোয়ারেন্টাইন ও ভ্যাকসিন জটিলতার কারণে বাংলাদেশ থেকে আমি ছাড়া তিনটি সিনেমার কেউই অংশ নিতে পারেননি।’ তবে বাংলাদেশ থেকে এবার তিনটি সিনেমা নির্বাচিত হওয়ায় বুসানে বিষয়টিকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে বলে জানালেন ইমন। তিনি বলেন, ‘এর বড় কারণ সাদের “রেহানা মরিয়ম নূর”। ছবিটি এরই মধ্যে দেশের প্রথম সিনেমা হিসেবে কানের অফিশিয়াল সিলেকশন পেয়েছে। ফারুকী ভাইয়ের ছবিটিও একটা মাস্টারপিস। এটিতে এমি অ্যাওয়ার্ড মনোনীত অভিনেতা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী থেকে শুরু করে অস্কারজয়ী মিউজিশিয়ান এর আর রহমান যুক্ত আছেন। আর আমাদের ‘পায়ের তলায় মাটি নাই’ মোহাম্মদ রাব্বী মৃধার প্রথম সিনেমা হলেও নির্মাতা হিসেবে তার মুনশিয়ানা সারা বিশে^র কাছে সমাদৃত হতে যাচ্ছে। আমি আশা করব, দেশে ভালো সিনেমা নির্মাণের যাত্রা অব্যাহত থাকবে।’
বুসানে ৭ ও ৮ অক্টোবর ‘পায়ের তলায় মাটি নাই’ ছবিটি প্রদর্শিত হয়েছে। ১৩ অক্টোবর আরেকটি শো আছে। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে অডিটরিয়ামগুলোয় সিট সংখ্যাও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই হিসাবে প্রথম শো দুটি হাউজফুল ছিল। ছবিটি দেখেছেন বিভিন্ন দেশের প্রোগ্রামার থেকে শুরু করে ভালো দর্শকরা। তারা সবাই খুব উপভোগ করেছেন বলে জানালেন ইমন। ছবিটি সাইফুল নামের একজন অ্যাম্বুলেন্সচালকের গল্প। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে একজন সাধারণ মানুষের জীবনে কী ভয়াবহ প্রভাব পড়তে পারে তা চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে ছবিতে। এই ছবির শ্যুটিং অভিজ্ঞতা নিয়ে ইমন বলেন, ‘শ্যুটিং শুরু করা হয় গত বছর কোরবানির ঈদের পর ৪ আগস্ট। বগুড়ার সারিয়াকান্দি থেকে শুরু করে ঢাকার বিভিন্ন লোকেশনে শ্যুটিং হয়েছে। দেড় মাসের বেশি সময় ধরে শ্যুটিং হয়েছে। যেকোনো ছবির শ্যুটিংই আসলে কঠিন। এটা সুখকর কোনো অভিজ্ঞতা না। তারপরও শিল্পের প্রতি ভালোবাসা থেকে আমরা হাসিমুখে কাজটি করি। এ ছবিতেও প্রতিটি শিল্পী, কলাকুশলী অসাধারণ কাজ করেছেন। মোস্তফা মনোয়ার, দিপান্বিতা মার্টিন, প্রিয়াম আর্চি প্রত্যেকেই অসম্ভব ভালো অভিনেতা; বিশেষ করে মোস্তফা মনোয়ারের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ সুনাম আছে সাদের প্রথম ছবি ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’র সুবাদে। এ ছবিতে অবশ্য তাকে একেবারেই অন্যভাবে দেখা যাবে। তার অভিনয় বড় তারকার মতোই দর্শক মনে আন্দোলন সৃষ্টি করবে। ছবির সম্পাদক সামির আহমেদ, শব্দগ্রাহক রিপন নাথ, কালারিস্ট শামছুল আরিফিন সাদি, সংগীতে ইমন চৌধুরী খুব ডেডিকেশনের সঙ্গে কাজ করেছে বলেই এত দ্রুত আমরা ছবিটি বুসানের মতো উৎসবে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার করতে পেরেছি।’ বক্সঅফিস মাল্টিমিডিয়া নিবেদিত, গল্পরাজ্য ফিল্মসের নির্মাণে ইমপ্রেস টেলিফিল্মস চ্যানেল আই ও বাতায়ন ফিল্মসের সহায়তায় আবু শাহেদ ইমনের প্রযোজনায়, মীর মোকাররম হোসেনের নির্বাহী প্রযোজনায়, ফরিদুর রেজা সাগর ও তাহরিমা খানের সহপ্রযোজনায় ছবিটি নির্মিত হয়েছে।
ইমনের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বক্সঅফিস মাল্টিমিডিয়া ও গল্পরাজ্য ফিল্মস থেকে আরও বেশ কিছু ভালো মানের সিনেমা আসতে যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে নূর ইমরান মিঠু পরিচালিত নুরসাত ফারিয়া, আফসানা মিমি, মামুনুর রশীদ, রওনক হাসান, অর্ষা, ফজলুর রহমান বাবু, মৌটুসী বিশ্বাস অভিনীত ‘পাতাল ঘর’, অ্যাপল বক্স ফিল্মস থেকে পিপলু আর খানের নির্দেশনায় জয়া আহসানকে নিয়ে নাম ঠিক না হওয়া একটি সিনেমা, ব্রিটিশ বাংলাদেশি নির্মাতা সাদিক আহমেদের হরর মিস্ট্রি ফ্যান্টাসি সিনেমা ‘এ ব্লেসড ম্যান’ এবং ইকবাল হাসান চৌধুরীর প্রথম সিনেমা ‘বলি’। এ ছাড়া তিনি ইমপ্রেস টেলিফিল্মসের চলচ্চিত্রবিষয়ক পরামর্শক হিসেবে গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ‘পাপ পুণ্য’, নিয়ামুল মুক্তার ‘রক্তজবা’, রায়হান রাফির ‘দামাল’, সাইফুল ইসলাম মান্নুর ‘পায়ের ছাপ’ সিনেমাগুলোর কাজ নিয়ে ব্যস্ত। এর বাইরে নিজের পরিচালনায় ‘এ ফুলিস ম্যান’ সিনেমার প্রি-প্রোডাকশনের কাজ করছেন ইমন।