November 21, 2024, 8:45 am
শহীদ মিনার আমাদের শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করায় ১৯৫২’র ভাষা শহীদদের। যাদের পবিত্র রক্তস্রোতের ওপর দিয়ে পেয়েছি বাংলা ভাষা। প্রতিবছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদ মিনার সাজ্জিত হয় বর্ণিল সাজে। জাতীয় শহীদ মিনার রঙিন হয় চেতনার রঙে। মিনারে এদিন ভাবগম্ভীর পরিবেশে বাঙালি নৈবেদ্য দেয় শ্রদ্ধার ফুল।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২১ উদযাপন উপলক্ষে ইতোমধ্যে প্রস্তুত হয়েছে ভাষাশহীদদের স্মৃতি বিজড়িত জাতীয় শহীদ মিনার। মূল মিনারসহ চারদিকে রঙ করা হয়েছে। প্রস্তুত হয়েছে মূল বেদি। আলপনা ও সাজসজ্জার কাজও সম্পন্ন। আশপাশের দেয়ালে শোভা পেয়েছে ভাষা আন্দোলনের নানা স্লোগান, কবিতা, চিত্র। চারদিকে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা।
একুশে উদযাপন উপলক্ষে শহীদ মিনারের যত্ন বেড়ে গেলেও অন্য সময় এখানে দেখা যায় ভিন্ন রূপ। শহীদ মিনার এলাকা হয়ে ওঠে ভবঘুরেদের আস্তানা, লেপ্টে থাকে ময়লা-আবর্জনা। শহীদ মিনার হয়ে ওঠে সন্ত্রাসী, ধর্ষক ও মাদকসেবীদের আখড়া। খুন-ধর্ষণ ও মাদকের ছড়াছড়িতে প্রতিনিয়ত অপবিত্র হয় এই পবিত্র স্থান। যার সর্বশেষ সংযোজন গত ৩০ জানুয়ারি শহীদ মিনারের বেদির পেছনে ধর্ষণচেষ্টায় হত্যার শিকার হওয়া ১৪ বছরের কিশোরী মীম। মাদকসেবী এবং গাঁজা বিক্রেতাদের উৎপাত দেখা যায় হরহামেশাই। অনেক সময় জুতা পায়ে শহীদ মিনারে উঠতেও দেখা যায় দর্শনার্থীদের। এভাবে অযত্ন-অনাদর-অবহেলায় বছর কাটে পবিত্র শহীদ মিনারের।
সংবিধানের ১০২ নং অনুচ্ছেদ ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনায় শহীদ মিনারের আশপাশে ভবঘুরেদের অবস্থান, অসামাজিক কার্যকলাপ, মিটিং মিছিল ও পদচারণার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এসব নিয়ম-কানুন সম্বলিত নোটিশ বোর্ড রয়েছে শহীদ মিনার অঙ্গনে। তবে সেদিকে নজর দেয়ার যেন সময়ই নেই কারও। জাতীয় শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষায় কমপক্ষে ৩ জন নিরাপত্তাকর্মী এবং ৩ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকার কথা। তবে তাদের কাউকে সেখানে খুঁজে পেতে হিমশিম খেতে হয়।
বিষয়টি নজর এড়ায়নি দর্শনার্থী ও শিক্ষার্থীদের। একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে জাতীয় শহীদ মিনারে আলপনার কাজ চলছে। যারা আলপনা আঁকছেন তাদের একজন কাওসার হোসেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থী। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, একুশে উদযাপন উপলক্ষে প্রতিবছর আমরা শহীদ মিনারকে রাঙিয়ে তুলি। নিরাপত্তায়-সৌন্দর্যে এদিন শহীদ মিনার থাকে পরিপাটি সম্ভ্রমে। কিন্তু তারপর সারা বছর মিনার পড়ে থাকে অবহেলায়, অযত্নে। বছরের যেকোনো সময় দেশ-বিদেশের দর্শনার্থীরা যাতে শহীদ মিনারে পুষ্প অর্পণ করতে পারে, শ্রদ্ধা জানাতে পারে- তেমন পরিবেশ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা থাকা উচিত। পরিকল্পনা নিয়ে শহীদ মিনারকে সারা বছর মর্যাদার স্থান হিসেবে বিবেচনা করার মতো অবস্থা যেন থাকে সেদিকে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি দিতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভাষা সৈনিক রেজাউল করিম বলেন, বছরজুড়ে শহীদ মিনার যে অবহেলার শিকার হয় আমি তার প্রতিবাদ জানাই। ওখানে ভবঘুরে, ফকির, চোর-বাটপারের বিচরণ সারাক্ষণ। শহীদ মিনার সারা বছর করুণ ও অরক্ষিত অবস্থায় থাকে। রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে যারা থাকেন, তাদেরকে নিয়মিত হতে হবে। নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। দরকার হলে শহীদ মিনার রক্ষণাবেক্ষণে লোকবল বাড়াতে হবে।
শহীদ মিনার রক্ষণাবেক্ষণের মূল দায়িত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রাব্বানী বলেন, শহীদ মিনার আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য। এটা দেখাশোনার দায়িত্ব আমাদের সবার। জাতীয় শহীদ মিনার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। এলাকাটি উন্মুক্ত। নাগরিক দায়িত্ব ও শ্রদ্ধাবোধ থেকে সবাইকে শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষা করতে হবে।
Comments are closed.