November 21, 2024, 8:55 am
পৌরসভার নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বিতরণ এবং গ্রহণের শেষ দিন ছিল আজ ( ১৩ ডিসেম্বর )। আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা বলছেন যে এবার পৌরসভার মনোনয়নের ক্ষেত্রে একটু ভিন্ন পথ অনুসরণ করা হয়েছে। নানা রকম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকৃত আওয়ামী লীগ যেন মনোনয়ন পায় সে ব্যাপারে নানারকম বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে এবং এক ধরনের নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে মনোনয়নপত্র বিতরণ এবং গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও মনোনয়ন বাছাই প্রক্রিয়াটিও হবে অন্যান্য বারের চেয়ে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা বলছেন অতীতে দেখা গেছে, যেহেতু আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে, সেজন্য বিভিন্ন রকম মানুষ যারা কখনও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন এমন ব্যবসায়ী, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন ফরম কিনে ফেলেন এবং দলকে একটি বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে রাখেন। এই মনোনয়ন ফরম কেনার সূত্র ধরেই তারা আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেন এবং পরবর্তীতে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করে দলের সুনাম নষ্ট করেন। এজন্য আওয়ামী লীগ এবার মনোনয়ন ফরম বিলির ক্ষেত্রেই সর্তকতা অবলম্বন করেছিল।
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা বলছেন যে এবার মনোনয়ন ফরম দেয়া হয়েছে একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির আলোকে। এ পদ্ধতিটি হলো- প্রথমত, আওয়ামী লীগের পৌর কমিটিগুলো একটি নাম প্রস্তাব করেছে এবং এই পৌর কমিটি যদি প্রথম শ্রেণীর পৌর কমিটি হয় তাহলে সেই প্রথম শ্রেণীর পৌর কমিটি একাধিক নাম প্রস্তাব করে সেটি জেলা কমিটির কাছে পাঠিয়েছে। জেলা কমিটি এটি যাচাই-বাছাই করেছে এবং সংযোজন-বিয়োজন করে কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়েছে। আবার যে পৌর কমিটিগুলোর দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণীর সে পৌর কমিটিগুলো নাম প্রস্তাব করে পাঠিয়েছে উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটির কাছে। উপজেলা আওয়ামীলীগ এটি পর্যালোচনা করেছে, সংযোজন-বিয়োজন করে জেলা কমিটিকে পাঠিয়েছে। জেলা কমিটি আবার পুনঃনিরীক্ষা করে এটি কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়েছে। এই প্রেক্ষিতেই এবার আওয়ামীলীগের যাদের নাম এসেছে, তারাই শুধু মনোনয়ন ফরম কেনার জন্য যোগ্য হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন, এছাড়াও যদি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কোনো নেতা, এমপি বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যদি কারো নাম সুপারিশ করেন তিনিও মনোনয়ন ফরম কিনতে পেরেছেন। এই ক্ষেত্রে যিনি ঐ ব্যাক্তির নাম প্রস্তাব করবেন তাকে বলতে হবে যে কেন ওই ব্যাক্তিকে মনোনয়ন ফরম দেয়া উচিৎ।
তিনি আরও বলেন, অনেক সময় দেখা যায় যে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের প্রভাবের কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রিয় নেতাকে মনোনয়ন ফরম দেয়া হয়নি। এরকম অভিযোগ কিছু কিছু তাদের আসার প্রেক্ষিতে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও তিনি জানান।
মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার পর মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে এবং এই সভাতে একবারে সব পৌরসভার চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেয়া হবে না বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছেন। ধাপে ধাপে মনোনয়ন দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে আগামী সপ্তাহ থেকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে এবার মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো দেখা হবে তার মধ্যে রয়েছে প্রথমত, যারা পৌরো কমিটি, উপজেলা কমিটির জেলা কমিটির নাম প্রস্তাব করবে তাদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে জনপ্রিয় বলে প্রস্তাব আসবে তাকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশ সারাদেশে মাঠ জরিপ হয়েছে এবং এই জরিপ এবারের মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় দেখা যায় যে পৌর কমিটি, উপজেলা কমিটি বা জেলা কমিটি যে নাম প্রস্তাব করেছে তার থেকে জরিপের ফলাফল ভিন্ন। জরিপে অন্য একজন সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি হিসেবে প্রমাণিত হয়েছেন। সে ক্ষেত্রে ওই জরিপ প্রাধান্য পাবে পৌর কমিটির সুপারিশের চেয়েও।
তৃতীয়ত, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর অতীত কর্মকান্ড দেখা হবে। তিনি কোন বিতর্কৃত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন কিনা, তার বিরুদ্ধে কোন টেন্ডার বাজি, চাঁদাবাজি বা দলের শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন কিনা সেটি পর্যালোচনা করা হবে।
চতুর্থত, নৌকা বিরোধী কোনো তৎপরতার সময় ঐ প্রার্থী অতীতে কখনও জড়িয়েছিলেন কিনা সেটি দেখা হবে।
পঞ্চমত, দলের জন্য তার অতীত ত্যাগ স্বীকার করা বিশেষ করাম বিশেষ করে ওয়ান এলিভেনের সময় ২০০১ সালে তার ভূমিকা কি ছিল ইত্যাদি বিষয়গুলো মূল্যায়ন করা হবে। এই সমস্ত মূল্যায়নের প্রেক্ষিতেই পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থীর দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করবে বলে জানা গেছে।
Comments are closed.