November 21, 2024, 8:56 am
এক সময় বলা হতো যে কুইনাইনে জ্বর সারবে বটে কিন্তু কুইনাইন সারাবে কে। এখন লকডাউন নিয়ে সেই একই প্রবচন যেন নতুন করে আসছে। লকডাউন করোনা সারাবে বটে কিন্তু লকডাউন সারাবে কে। লকডাউনের কারণে করোনা কমছে কি কমছে না সেটি বৈজ্ঞানিক হিসাব বিচার-বিশ্লেষণ কিন্তু লকডাউনের কারণে যে অর্থনীতি ক্রমশ মুখ থুবড়ে পড়ছে সেটি এখন দৃশ্যমা ন হচ্ছে। গতকাল উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠক হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামা ন খান কামালের নেতৃত্বে। সেই বৈঠকে স্বরা ষ্ট্রমন্ত্রী সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন যে, শিল্প-কলকারখানা খোলা এখন সম্ভব নয়। ৫ আগস্টের পর এটি পুনর্বিবেচনা করা হবে। কিন্তু বিজিএমইএসহ গার্মেন্ট মালিকদের বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, এই ৫ আগস্ট পর্যন্ত লকডাউন থাকলে তারা সর্বনাশের কিনারে চলে যাবেন এবং তাদের আন্তর্জাতিক বাজার হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। তারা বলছেন যে, আন্তর্জাতিক বাজার আমাদের উপর নির্ভর করে না। এটা নির্ভর করে তাদের চাহিদার উপর। তারা যে চাহি দার কথা জানাবে সেই চাহিদা গুলো যদি আমরা ঠিকমতো পূরণ করতে না পারি তা হলে এই সমস্ত অর্ডারগুলো অন্য দেশে চলে যাবে। তারা উদাহরণ দিয়ে বলছেন যে, ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ কিন্তু
তারপরও ইন্দোনেশিয়া সবকিছু বন্ধ করেনি। শুধুগার্মেন্টস না, অন্যা ন্য কল-কারখানা শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিনের এই (প্রায় তিন সপ্তাহ) বন্ধের কারণে একটা কঠিন সমস্যার মধ্যে পড়ছে। অনেকে বলছেন যে, এই কল-কারখানাগুলো একটা কঠিন আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়বে। তিন ধরনের সংকট শিল্প কা রখানাগুলোতে দেখা গেছে। প্রথমত, উৎপাদন বন্ধ থাকার ফলে বাজারে একটা সংকট দেখা দিবে। দ্বিতীয়ত, আয়-উপার্জন না থাকার কারণে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়বে, ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারবেনা। তৃতীয়ত, পহেলা আগস্ট থেকে নতুন মাস। শিল্প কারখানার মালিকদের কলকারখানা চলুক না চলুক বিপুল অঙ্কের টাকা বেতন হিসেবে গুনতে হবে। এই ত্রিমুখী সমস্যার সমাধান কিভাবে হবে সেটি নিয়ে এক বড় প্রশ্ন উঠেছে। শিল্প-কলকারখানাগুলো বড়লোক ব্যবসায়ীদের। কিন্তু যারা ক্ষুদ্র-মাঝারি আয় করেন এবং বাংলাদেশে যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হয় সেগুলো এর চেয়েও বড় সংকটে পড়েছে। এর ফলে একটা বড় অংশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে, কিছুকিছুবন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। কারণ, এগুলো এক মাস বন্ধ রাখার মতো অর্থনৈতিক সামর্থ্য এই প্রতিষ্ঠানগুলোর নেই। বাংলাদেশের গত ১৪ এপ্রিল থেকেই বিভিন্ন রকম লকডাউন চলছে এবং এই লকডাউনে দোকান মালিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, হোটেল-রেস্তোরাঁ, পর্যটন খাত ইত্যাদি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই ক্ষতি সামনের দিনগুলোতে পুষিয়ে ওঠার আর কোন উপায় নেই। ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন মহল মনে করছেন যে, লকডাউনের বিরুদ্ধে এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেশে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশেও বিক্ষোভ হয়েছে। একা ধিক সরকা র টালমাটাল অবস্থায় পড়ে গেছেন লকডাউন দিতে গিয়ে। বাংলাদেশে যদি আর লকডাউন বাড়ানো হয় তাহলে এই লকডাউন বিরোধী আন্দোলনে র শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছেনা। করোনার উদ্বেগের চেয়ে লকডাউনের উদ্বেগ মানুষের কাছে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
Comments are closed.