January 15, 2025, 7:57 am
শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পশ্চিম দূর্গাবাটিতে প্রবল জোয়ারের চাপে ভয়াবহ ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার (১৫ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টার জোয়ারে পশ্চিম পোড়াকাটলা, দূর্গাবাটির ২টি গ্রাম, আড়পাঙ্গাশিয়া, বুড়িগোয়ালিনীর আংশিকসহ ৬টি ওয়ার্ডের মোট ৯ গ্রাম চোখের সামনেই প্লাবিত হয়। এছাড়া প্রায় ৪ হাজার বাগদা চিংড়ি ঘের লোনা পানিতে একাকার হয়ে যায়। এর আগে বৃহস্পতিবার মাঝরাতে এই ভাঙনের সৃষ্টি হয়। শুক্রবার (১৫ জুলাই) বিকাল ৫টায় ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। এসময় উপস্থিত ছিলেন শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম আতাউল হক দোলন, পানি উন্নয়ন বোর্ড’র (পওর বিভাগ-১) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের, শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক সাঈদ-উজ-জামান সাঈদ, উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তুষার মজুমদার, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. শাহিনুল ইসলাম, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
এসময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পানিবন্দী মানুষদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। খুব শীঘ্রই এই বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হবে। তাছাড়া এখানকার মানুষের এই মুহুর্তে সুপেয় খাবার পানির সংকট নিরসনের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে কথা বলেছি। আজই দূর্গাবাটিতে আর.ও (রিভার্স অসমোসিস) পানির প্লান্ট চালু করা হবে। এছাড়া ত্রাণ ও দূর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে এই অঞ্চলের ৩ হাজার পানিবন্দী মানুষকে জরুরি খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হবে।’
বুুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে রিং বাঁধ নির্মানের কাজ শুরু করেছে। তবে দুপুরের জোয়ারে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। জোয়ার নামতে নামতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। সন্ধ্যায় কাজ করা কঠিন হবে। তিনি অভিযোগ করেন পাশের খোলপেটুয়া নদী থেকে অবৈধভাবে প্রভাবশালীরা বালু উত্তোলন করায় চর দেবে যেয়ে পাশর্^বর্তী অংশের বাঁধে ভাঙন লেগেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী জাকির হোসেন জানান, ক্ষতিগ্রস্ত বেড়ীবাঁধ সংস্কারের জন্য তাৎক্ষনিক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে পুরো দিনই নদীতে প্রচন্ড জোয়ার থাকায় কাজ করার সুযোগ থাকছে না।
বিকেল ৪ টার পরে ৫০০ ফুট রিং বাঁধ দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। রিংবাঁধ নির্মাণের জন্য ১৫ হাজার জিওব্যাগ ও ১ লাখ সিনথেটিক ব্যাগ প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মকর্তা।
শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস.এস আতাউল হক দোলন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সারাদেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হলেও আমাদের উপকূলের বেড়িবাঁধের তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। তবে এই মুহুর্তে দূর্গাবাটি বেড়িবাঁধ মেরামত করার জন্য উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আমরা আগামী কাল থেকে এই বাঁধে কাজ করতে আসা সকল শ্রমিকদের জন্য আহারের ব্যবস্থা করবো। তাছাড়া পাউবো যে মালামাল বরাদ্দ দিচ্ছে তা দিয়ে আমরা সকরের সম্মিলিত উদ্যোগে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যেভাবে হোক এই বাঁধ মেরামতের কাজ সম্পন্ন করতে চাই।
পানি উন্নয়ন বোর্ড’র (পওর বিভাগ-১) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের জানান, আমাদের পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বস্তা, দঁড়ি, বাঁশ, পেরেক সরবরাহ করা হয়েছে। তাছাড়া গতকাল যেটি ১৩০ ফুট ছিল, সেই ভাঙনটি শুক্রবার সকালে ১৫০-১৬০ ফুট দীর্ঘ হয়েছে। সেক্ষেত্রে ৫৫০ ফুট পাইলিং করার জন্য আমরা প্রস্তুতি গ্রহন করেছি। তবে বর্তমানে তেজ কটালের তীব্র জোয়ারের কারনে সেটি করা সম্ভব না হলেও আমরা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগিতায় পর্যাপ্ত পরিমাণ জিও টিউব, বাঁশ, প্লাষ্টিক বস্তা সরবরাহ করেছি। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে বালু মজুদ করে এই পাইলিং এর কাজ শুরু করবো।
উল্লেখ্য, বেঁড়ী বাধ ভাঙ্গনের খবর পেয়েই রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে যান স্থানীয় সংসদ সদস্য এসএম জগলুল হায়দার ও শ্যামনগর উপজেলা আ.লীগের সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউল হক দোলন।
Comments are closed.