December 21, 2024, 2:56 pm
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা সুন্দরবন সংলগ্ন গাবুরায় খোলপেটুয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে সরকারি খাস জায়গা দখল করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উপকূলীয় বেড়িবাঁধ থেকে মাত্র কয়েক ফুট সামনে নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে এভাবে বালু উত্তোলন করলে চলতি বর্ষা মৌসুমে বাঁধ ভেঙ্গে আবারও গাবুরা ইউনিয়ন প্লাবিত হতে পারে বলে আশংকা স্থানীয়দের।
বালু উত্তোলন করা কার্গোর মালিক জাকারিয়া বলেন, চেয়ারম্যান মাসুদুল আলমের চাপে পড়েই নদী থেকে বালু উত্তোলন করতে বাধ্য হচ্ছেন তিনি। প্রায় এক সপ্তাহ আগে চাঁদনিমুখা মাদ্রাসা ভরাটের নাম করে আমাকে ডেকে আনা হয়েছে। এখন দেখছি সরকারি জায়গা ভরাট করাচ্ছে। চেয়ারম্যান আমাকে এখানে আটকে রেখে বেশ কয়েক কারগোতে প্রায় ৩০ হাজার ফুট বালি তুলে নিয়ে টাকা পরিশোধ না করে এখন তালবাহানা করছেন। যে কারণে আমি এখান থেকে যেতে পারছি না।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ‘বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০’ এর তোয়াক্কা না করে চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের চাদনিমুখা গ্রামের বাজার সংলগ্ন খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধের গায়ে নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে খাস জমি ভরাট করে নিজেই দখলের চেষ্টা করছেন। ‘বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০’ এর ৪ এর ‘খ’ ধারায় সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা, অথবা আবাসিক এলাকা হতে সর্বনিম্ন ১ (এক) কিলোমিটার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত সীমানার মধ্যে থেকে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ থাকলেও সুন্দরবন সংলগ্ন গাবুরায় খোলপেটুয়া নদীর যে অংশ থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে সেখানে নদীর বেঁড়িবাঁধের তীর ঘেষে শতাধিক পরিবারের বসবাস। একটি স্কুল, মাদ্রাসা ও মসজিদের মতো ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও রয়েছে।
আইনটির ৪-এর ‘গ’ ধারায়, বালু বা মাটি উত্তোলন বা বিপণনের উদ্দেশ্যে ড্রেজিংয়ের ফলে কোন নদীর তীর ভাঙ্গনের শিকার হতে পারে এরূপ ক্ষেত্রেও বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। অথচ এসবের তোয়াক্কা না করেই একই আইনের ৫নং ধারার ভূ-গর্ভস্থ বা নদীর তলদেশ হতে বালু বা মাটি উত্তোলন সংক্রান্ত বিশেষ বিধানও অমান্য করে এলাকার চেয়ারম্যান নিজেই বালু উত্তোলন করে সরকারি জায়গা দখল করছেন।
স্থানীয়রা আরো জানান, বাড়ির মাত্র কয়েকফুট সামনেই নদী। এ নদী থেকে বালু উত্তোলন করায় আমাদের ঘরবাড়ি, বাড়ির সামনের ওয়াপদার রাস্তা ধ্বসে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। আবার নদীর পাড় ভেঙ্গে চলতি বর্ষা মৌসুমে বন্যার কবলে পড়ার ভয়ও কাজ করছে তাদের মধ্যে ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাবুরা ইউপি’র চাঁদনিমুখা গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানান, এভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করার ফলে আমদের ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর বালি কাটছে অবৈধভাবে, আবার সরকারি জায়গাও ভরাট করে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম বলেন, নদী থেকে বেশ কিছু বালু উঠানো হয়েছে। সরকারি জায়গায় বালি ফেলার কারণে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শ্যামনগর আমাকে ফোন দিয়ে বালু ফেলতে নিষেধ করেছেন এবং ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে পাঠানোর পর বালু উঠানো বন্ধ করে দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, এই বালু উঠিয়ে সেখানে একটি মৎস্য সেট করতে চেয়েছিলাম। সেজন্য নদী থেকে বালু উঠিয়ে নিচু জায়গা ভরাট করতে চেয়েছিলাম।
এ বিষয়ে গাবুরা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি শোনা মাত্রই সেখানে গিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ সহ আমাদের সরকারি খাস জায়গায় বালু ফেলা বন্ধ করে দিয়েছি। পরবর্তীতে আমি চলে আসার পরে রাতে নাকি শুনলাম সেখানে আবার বালু ফেলেছে। এটা যেই করুক না কেনো ঠিক করেনি।
এ বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা সহকারী কর্মকর্তা (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ’র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নদী থেকে বালু উত্তোলন করা তো সম্পূর্ণ বেআইনি। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে সরকারি জায়গায় ভরাট করলে সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর আমি ব্যাপারটা জানতাম না। নদী থেকে বালু উত্তোলন করে ফেলার সময় সেখান থেকে কিছু লোক আমাকে ফোনে জানানো মাত্রই আমি চেয়ারম্যানকে নদী থেকে বালু উত্তোলন না করতে ও সরকারি জায়গায় বালু ফেলতে নিষেধ করেছি। একই সাথে গাবুরা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে সেখানে পাঠিয়ে সরকারি জায়গায় বালু ফেলা বন্ধ করে দিয়েছি। এরপরও কেউ যদি সরকারি জায়গা দখলের চেষ্টা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিব।
Comments are closed.