February 5, 2025, 11:57 am

সাংবাদিক আবশ্যক
সাতক্ষীরা প্রবাহে সংবাদ পাঠানোর ইমেইল: 1linenewsagency@gmail.com
সাতক্ষীরা আশ্রয়ণ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ, তড়িঘড়ি মেরামত

সাতক্ষীরা আশ্রয়ণ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ, তড়িঘড়ি মেরামত

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার হাড়দ্দহ এলাকায় মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে নতুন ঘর নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। গরীবের পরিবর্তে ঘর পেয়েছে অনেক বিত্তশালী। ঘর হস্তান্তরের দু’সপ্তাহ পার না হতেই খসে পড়ছে দেয়ালের প্লাস্তার। বসে যাচ্ছে ঘরের মেঝে। বৃষ্টির সঙ্গে সামান্য বাতাস হলেই ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে মেঝে থই থই করছে। বাথরুমে গ্যাস পাইপ না থাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এদিকে আশ্রয়ন প্রকল্পে টিউবওয়েল না থাকায় খালের পানিতে গোসল ও থালা বাসন মাজার কাজ করতে হচ্ছে। স্থানীয়রা ওই খালে পাট ভেজানোর হুমকি দেওয়ায় সেখানে বসাবাসরত ভূমিহীনদের মধ্যে হাতাশা বিরাজ করছে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শ্রীরামপুরের মৃত গফফর গাজীর মেয়ে আম্বিয়া খাতুন জানান, ১৩ বছর আগে তার শাহীনুজ্জামানের সঙ্গে বিয়ে হয়। এক প্রতিবন্ধি ছেলে তাদের। চার বছর আগে তাকে তালাক দিয়ে স্বামী অন্যত্র বিয়ে করায় এাকমাত্র সন্তানকে নিয়ে বাপের বাড়িতেই অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বদৌলতে হাড়দ্দহ আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পেয়ে দু’সপ্তাহ সেখানে অবস্থান করছেন। কিন্তু কপাল এতটাই খারাপ যে ঘরে ওঠার পরদিন থেকে দেয়ালের ও ঘরের মেঝের কয়েকটি জায়গায় প্লাস্তার খসে পড়তে দেখেন। কয়েকদিন আগে সাংবাদিকরা এসে দেখে গেছে এ খবর পেয়েই গত রোববার তড়িঘড়ি করে সরকারিভাবে নতুন করে দেয়ালে ও মেঝেতে পুটিং করে দেওয়া হয়েছে।
আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসকারি বৈচানা গ্রামের শম্ভু দাসের স্ত্রী সন্ধ্যা রানী দাস বলেন, প্রায় এক মাস নতুন ঘরে এসেছেন। তিন দিন যেতে না যেতেই রান্না ঘরের মেঝেতে তার পা বসে যায়। প্লাস্তার খসে যায় বেশ কিছুটা অংশ জুড়ে। এছাড়া শোয়ার ঘরের দেয়ালের প্লাস্তার খসে পড়েছে। অন্যদের মত গত রোববার তার বাড়িতেও পুটিং করে দেওয়া হয়েছে। বাথরুমে গ্যাস বের হওয়ার পাইপ না থাকায় প্রতি মুহুর্তে দুর্গন্ধ পোহাতে হয়। টিউবওয়েলের ব্যবস্থা না থাকায় দূর থেকে জল আনার পাশপাশি পাশের রাধারনগর খালের জলেই তাদের থালা বাসন মাজা ও স্নানের কাজ সারতে হয়।আশ্রয়ণ প্রকল্পের আরেক বাসিন্দা মারুফা খাতুন জানান, তার ঘরের প্লাষ্টার খসে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘরে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে এমন খবর সাংবাদিকরা জানার পর তড়িঘড়ি করে পুটিং করা হয়েছে তার ঘর। এ অবস্থা শুধু তাদের কয়েক জনের নয়। ৪৭টি বাড়ির প্রত্যেকটিতে একই অবস্থা। নিম্ন মানের বালি, ইট ও সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে অভিযোগ করে মারুফা বলেন, ঠিকাদার থেকে প্রকল্পের সদস্যরা সকলেই এই অনিয়মের সাথে জড়িত। তা না হলে এত খারাপ ঘর কিভাবে ছাড় পেলো। ঘরের মেঝের তলায় একটির বেশি দু’টি ইট নেই। ফলে একটু ঝড় হলেই এ ঘরের টিন উড়ে যেয়ে ও দেয়াল চাপা পড়ে মরতে সময় লাগবে না। মিন্টু মোল্লা বলেন, তার ঘরের দেয়ালের ও মেঝের প্লাস্তার খসে পড়েছে। নতুন করে পুটিং করা হয়েছে। ঘরের চালের টিন এত ছোট যে, বৃষ্টির সঙ্গে স্মাান্য বাতাস হলেই ঘরের মেঝেতে পানি জমছে। রান্না খাওয়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পানিতর ও রাধানগর বিলের পানি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ভিতরের খাল দিয়ে কুমড়োর খালে পড়ার সময় দুু’তীর উপচে তাদের ঘরের মেঝে প্লাবিত হচ্ছে। ফলে বর্ষাকালে এ ঘর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে।

শারীরিক প্রতিবন্ধি ৬৭ বছরের বৃদ্ধ আবু বক্কর বলেন, ঘর তৈরিতে নিম্ন মানের ইট ব্যবহার করা হয়েছে। যাতে তা সাধারণ মানুষ বুঝতে না পারে সে কারণে তড়িঘড়ি করে কাদা মাটির গাথুনি করে একটি সিমেন্ট ও পাঁচটি বালি দিয়ে দেয়াল ও মেঝে প্লাস্তার করা হয়েছে। যেকারণে এখন তা খসে পড়ছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয়রা প্রতি বছরের ন্যয় এবারও বিলের পাট এখানে পঁচাতে চায়। তারা আপত্তি করায় হুমকি দেওয়া হয়েছে। একে আশ্রয় প্রকল্পে কোন টিউবওয়েল নাই তাতে খালের পানিতে পাট পঁচালে এখানে বসবাস করা মুশকিল হবে। তবে স্থানীয়রা কয়েকজন জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পে ভূমিহীনদের পরিবতর্তে কয়েকজন বিত্তশালীকে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে বিত্তশালীদের ঘর দেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে ভোমরা ইউনিয়ন সহকারি ভূমি কর্মকর্তা কান্তি লাল সরকার ও সার্ভেয়ার বরকতুল্লাহ সরেজমিনে তদন্ত করে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাওয়া জনৈক আব্দুস সাত্তারের নিজস্ব পাকা বাড়ি থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় গত রোববার তার ঘরে তালা মারা হয়েছে। ওই ঘরটি একজন ভূমিহীনকে দেওয়া হবে।

ভোমরা ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, হাড়দ্দহে রাধানগর খালের দু’ পাশে প্রায় দু’ একর জমির মধ্যে ৯৪ শতক সরকারি খাস জমিতে ৪৭টি ভূমিহীন পরিবারের বসতি নির্মাণ করা হয়েছে। জমিসহ একটি ঘরের খরচ ধরা হয় এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি নাগাদ ঘর নির্মাণের কাজ শুরু হয়। মে মাসের মাঝামাঝি নাগাদ নির্মাণ কাজ শেষ হয়। তবে তিনটি ঘরের কাজ জুলাই এর প্রথম সপ্তাহে শেষ হয়েছে। ৪৭টি ঘরের মধ্যে ৩০টির দলিল রেজিষ্ট্রি হয়েছে। বাকী ১৭টা খুব শিগগিরই রেজিষ্ট্রি হবে।

সাতক্ষীরা সদরের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইয়ারুল ইসলাম কিছু কিছু বাড়ির দেয়াল ও মেঝের প্লাস্তার খসে পড়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়ার পর তা আবার সংস্কার করা হয়েছে। ২০১৮ সালের নকশা ও বাজেট অনুযায়ি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ভুমিহীনদের অসুবিধার বিষয়টি নজরে আসায় দু’ এক দিনের মধ্যে অস্থায়ীভাবে দু’টি টিউবওয়েল বসানো হবে। তবে আগামী দু’মাসের মধ্যে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর পক্ষ থেকে সেখানে স্থায়ীভাবে পাঁচটি টিউবওয়েল বসানো হবে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে তারা যাতে রাধানগর খালে পাঠ না পঁচিয়ে দূরের কুমড়োর খালে পাট পঁচান সেজন্য সকলের সঙ্গে কথা বলা হবে বলে তিনি জানান।


Comments are closed.

ইমেইল: arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com