December 26, 2024, 3:24 pm

সাংবাদিক আবশ্যক
সাতক্ষীরা প্রবাহে সংবাদ পাঠানোর ইমেইল: 1linenewsagency@gmail.com
হাজারীবাগের আধুনিক শহর প্রকল্পের পরিধি বাড়ছে

হাজারীবাগের আধুনিক শহর প্রকল্পের পরিধি বাড়ছে

একসময় রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকায় অবস্থিত ট্যানারি কারখানার বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্যে ক্রমাগত দূষিত হতো পরিবেশ। মাত্রাতিরিক্ত দূষণে হাজারীবাগের পানির রঙ হয়ে উঠেছিল কালো, ধূসর, গাঢ় নীল। বেশির ভাগ কারখানায় ছিল না ড্রেনেজ ব্যবস্থা। বর্জ্যগুলো সরাসরি ফেলা হতো নদীতে। পরিবেশ দূষণ থেকে বাঁচতে অবশেষে হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্প স্থানান্তর করে সাভারে নিয়ে যাওয়া হয়।বিষে নীল সেই হাজারীবাগে ‘সবুজের স্বপ্ন’ দেখাচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। হাজারীবাগের ট্যানারি এলাকার ভূমি পুনঃউন্নয়নের মাধ্যমে বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তুলতে চায় রাজউক। বসবাস অযোগ্য হাজারীবাগকে রি-ডেভেলপমেন্টের (পুনঃউন্নয়ন) মাধ্যমে মডেল এলাকা হিসেবে গড়তে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি।রাজউক সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পে শতভাগ পরিবেশবান্ধবের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে ফিজিবিলিটি স্টাডি। আগামী ছয় মাসের মধ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও সোশ্যাল স্টাডি শেষ করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।প্রাথমিক পর্যায়ে ট্যানারি প্লটের ৬৬ একর জমি মডেল এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয়া হয়। কিন্তু আশপাশে আগে গড়ে ওঠা বিভিন্ন স্থাপনার বিষয়ে বেসরকারি ট্যানারি মালিক ও স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা করে আরও ৪৫ একর জমি এ প্রকল্পে সংযুক্ত করা হচ্ছে। অর্থাৎ হাজারীবাগের ট্যানারি এলাকায় মোট ১১১ একর জমিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে, ফলে আগের চেয়ে এ প্রকল্পের পরিধি বাড়বে।প্রকল্প এলাকার সীমানার মধ্যে রয়েছে- উত্তরে রায়েরবাজার, পূর্বে জিগাতলা ও পিলখানা, পশ্চিমে হাজারীবাগ ও বেড়িবাঁধ, দক্ষিণে বোরহানপুর। প্রথমে ৬৬ একর প্লটের জমি ব্যবহারের পরিকল্পনা থাকলেও বর্তমানে আরও ৪৫ একর জমি বাড়িয়ে ১১১ একরে উন্নীত করা হয়েছে। প্রকল্পের সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তী কার্যক্রমে নামবে রাজউক।চীন, জাপান, ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মডেলে হাজারীবাগে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে। এখানে ছোট ছোট ভবন রি-ডেভেলপমেন্ট (পুনঃউন্নয়ন) করে একসঙ্গে জমির মালিকদের হিস্যা অনুযায়ী আলাদা আলাদা ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেয়া হবে।হাজারীবাগকে বহুতল ভবনের একটি উন্নত আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়তে পার্ক, খেলার মাঠ, সুইমিংপুল, কমিউনিটি সেন্টার, মার্কেট, ইনডোর গেমসসহ নানা স্থাপনা তৈরির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।বর্তমানে হাজারীবাগের ট্যানারিগুলো সাভারের চামড়া শিল্পনগরে স্থানান্তরিত হওয়ার পর থেকে পুরো এলাকা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। সেখানে রয়েছে পুরোনো ও জরাজীর্ণ ভবন। পরিত্যক্ত ট্যানারিগুলো ভারী যন্ত্রাংশ ও আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।গবেষণা তথ্য বলছে, হাজারীবাগের মাটি অধিক পরিমাণে ক্রোমিয়াম ধাতু দ্বারা দূষিত, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বায়ুদূষণের মাত্রা কম থাকলেও তা পুরোপুরি বিশুদ্ধ হতে সময় লাগবে। প্রাথমিক জরিপ থেকে দেখা গেছে, হাজারীবাগ ট্যানারি এলাকাটির আয়তন ৫৯.৩৫ একর। এখানে ইমারতের মোট সংখ্যা ৮৫৫টি, যার মধ্যে শিল্পকারখানা রয়েছে প্রায় ৬০০টি।রাজউকের ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, হাজারীবাগ ট্যানারি এলাকার ভূমি উন্নয়নের মাধ্যমে বসবাসের উপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা গবেষণাসহ নানা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। একটি উন্নত আবাসিক এলাকার মতো এখানে থাকবে পার্ক, খেলার মাঠ, কমিউনিটি সেন্টার, মার্কেট, ইনডোর গেমস, সুইমিংপুল, ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়সহ নানা ব্যবস্থা।‘এটা বাস্তবায়ন হলে তা সবার জন্য খুবই ভালো হবে, যা দেখে পুরান ঢাকার মানুষও আরবান রি-ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে আধুনিক ও বাণিজ্যিক সুবিধাসমৃদ্ধ মডেল হিসেবে নিজ এলাকাও গড়তে আগ্রহী হবেন।’হাজারীবাগ এলাকার সম্পত্তি মূল্যায়ন পদ্ধতি এবং প্রকল্প-পরবর্তী সম্পত্তি মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা গেছে, বর্তমান বাজারমূল্যে বিদ্যমান জমির মূল্যায়ন হবে। ঘর-কাঠামোর প্রতিস্থাপন খরচ একই বিল্ডিং উপকরণের বর্তমান মূল্যে মূল্যায়ন হবে। বর্তমান কাঠামোর মূল্য নির্ধারণ (বিল্ডিং বয়স, উপকরণ খরচ এবং বাসস্থান ইউনিট) বর্তমান বাজারমূল্যে বিদ্যমান বাণিজ্যিক স্পেসের মূল্য নির্ধারণ করা হবে। মালিকানাধীন বেসরকারি জমির মালিক ও বাসিন্দা, যাদের মালিকানাধীন কোনো আইনি নথিপত্র নেই কিন্তু জমিটি দীর্ঘমেয়াদে ভোগদখল করছেন তারা কর্তৃপক্ষের অধীনে গঠিত সম্পত্তি মূল্যায়ন কমিটি দ্বারা নির্ধারিত সম্পত্তি পাবেন।মাল্টিপল লিনিয়ার রিগ্রেশন মডেল ব্যবহারের মাধ্যমে সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণ করা হবে। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নের পর উন্নত সুযোগ-সুবিধার কারণে জমির মূল্যবৃদ্ধি পাবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের পর নতুন আবাসিক ও বাণিজ্যিক জায়গা পাওয়া যাবে, যার বাজারমূল্য বর্তমানের অনুরূপ আবাসিক ও বাণিজ্যিক জায়গার চেয়ে বেশি হবে। বিষয়গুলো চিন্তা করে প্রকল্পের আগেই প্রকল্প-পরবর্তী প্রাপ্ত সম্পত্তির মূল্য হিসাব করা হবে।প্রসঙ্গত, ১৯৫৪ সালের দিকে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে থাকা ট্যানারিগুলো একত্রিত করে হাজারীবাগে ট্যানারি শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। হাজারীবাগ ট্যানারি এলাকা ঢাকার মধ্যে একটি প্রসিদ্ধ শিল্প এলাকা হিসেবে গড়ে ওঠে। কিন্তু ট্যানারি শিল্পের চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থে আশপাশের এলাকা ব্যাপকভাবে দূষিত করে। ফলে এলাকাটি পুরোপুরি বসবাসের অনুপযোগী হয়ে ওঠে।এছাড়া ট্যানারি কারখানা থেকে নির্গত দূষিত বর্জ্য সরাসরি বুড়িগঙ্গা নদীতে নিষ্কাশনের কারণে নদীর পানির দূষণমাত্রা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ২০০১ সালে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কারখানাগুলো সরিয়ে নিতে এবং ২০০৩ সালে সাভারে পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্পনগরী নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ধীরে ধীরে কারখানাগুলো সাভারে স্থানান্তর হয় গত দুই বছরে। ফলে হাজারীবাগের ট্যানারি স্থাপনাগুলো এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।


Comments are closed.

ইমেইল: arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com