November 21, 2024, 9:04 am
আগামী মাস থেকে শুরু হচ্ছে ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী’। এতে হতদরিদ্রদের মাঝে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণ করা হবে। প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাবে উপকারভোগী হতদরিদ্র পরিবার। সেপ্টেম্বর থেকে টানা তিন মাস চলবে এই কর্মসূচী। এই কর্মসূচীতে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে আরও ৫০ হাজার পরিবার। মোট ৫০ লাখ পরিবার এই কর্মসূচীর আওতায় সুবিধা ভোগ করবে।
এ ব্যাপারে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ১০ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়ানো শেখ হাসিনা সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার। প্রতি বছর আমরা এই কর্মসূচী চালিয়ে আসছি। আগামীতেও এই কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, সারাদেশে ৫০ লাখ হতদরিদ্র পরিবার বছরে মোট পাঁচ মাস ১০ টাকা কেজি দরে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাবে। সেপ্টেম্বর থেকে নবেম্বর পর্যন্ত টানা তিন মাস এই কর্মসূচী চলবে।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, এর পাশাপাশি দেশের সকল সিটি কর্পোরেশন ও পৌর এলাকায় চলছে ওএমএস কর্মসূচী। সারাদেশে ৭৩৭ ডিলার প্রতিদিন নির্ধারিত পরিমাণের দ্বিগুণ চাল ও আটা এই কর্মসূচীর আওতায় বিক্রি করছেন। এতে প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা এবং প্রতি কেজি আটা ১৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ মানুষ প্রতিদিন লাইন দিয়ে এই কর্মসূচীর আওতায় চাল ও আটা কিনছেন।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে চালের বাজার দর কমতে শুরু করেছে। বেসরকারী পর্যায়ে চাল আমদানির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়া খাদ্য মজুদ পরিস্থিতিও সন্তোষজনক। আমদানির চাল আসলে দাম আরও কমে আসবে। জানা গেছে, বর্তমানে সরকারের মজুদের পরিমাণ প্রায় ১৭ লাখ মেট্রিক টন। যা সরকারকে স্বস্তিতে রেখেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ কর্মসূচীর উপকারভোগীদের সংখ্যা ৫০ লাখ হওয়ার কথা থাকলেও এতদিন ৫০ হাজারের মতো কম ছিল। এখন এ উপকারভোগীদের অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মারা যাওয়া ও স্থানান্তর হওয়া উপকারভোগীদের বিবেচনায় নিয়ে তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে। হালনাগাদ তালিকা অনুযায়ী, আগামী সেপ্টেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য শুরু হচ্ছে ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী’। খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদফতর থেকে এ তথ্য জানা গেছে। উল্লেখ্য, বছরে মোট পাঁচ মাস চলে এই কর্মসূচী। এপ্রিল ও মে এই দুই মাস এবং সেপ্টেম্বর থেকে নবেম্বর তিন মাস মিলে বছরে মোট পাঁচ মাস চলে এই কর্মসূচী।
খাদ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীতে যে সংখ্যক উপকারভোগী থাকার কথা, সেটার চেয়ে সাড়ে ৪৬ হাজারের মতো কম ছিল। এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট আমরা পেয়েছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে নির্দেশনাও পাঠানো হয়েছে। ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী’র আওতায় সারাদেশে হতদরিদ্র পরিবারগুলোকে প্রতি মাসে ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হয়। বছরে পাঁচ মাস দেয়া হয় এ সহায়তা।
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীতে নতুন করে অতিদরিদ্র উপকারভোগী অন্তর্ভুক্ত করে সেপ্টেম্বর থেকেই চাল বিতরণের নির্দেশনা দিয়ে গত ১৯ আগস্ট খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, এর আগে খাদ্য অধিদফতরের পাঠানো উপকারভোগীর তালিকা অনুসারে সারাদেশে ৪৯২টি উপজেলার তথ্য যাচাই করে দেখা যায় যে, ৫০ লাখ উপকারভোগীর তালিকায় প্রায় ৪৬ হাজার ৫০০ অতিদরিদ্র ব্যক্তিকে তালিকাভুক্ত করা যায়নি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে দেশের দারিদ্র্য মানচিত্র ২০১৬ (গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল) প্রকাশিত হয় ২০২০ সালের নবেম্বরে। ওই প্রকাশনা অনুসারে ২২৪টি উপজেলায় যে পরিমাণ উপকারভোগী থাকার দরকার এর চেয়ে কম রয়েছে। উপজেলা অনুযায়ী খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীতে নতুন করে যে সংখ্যক উপকারভোগী অন্তর্ভুক্ত করা যাবে সে তালিকা করা হয়েছে।
এমতাবস্থায় জরুরী ভিত্তিতে যথাযথভাবে নীতিমালা অনুসরণ করে আগামী সেপ্টেম্বরে চালু হতে যাওয়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীতে ২২৪টি উপজেলায় ৪৬ হাজার ৬১৫ নতুন উপকারভোগীকে অন্তর্ভুক্ত করে খাদ্যশস্য বিতরণের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে চিঠিতে।
এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সংগ্রহ ও সরবরাহ অনুবিভাগ) খাজা আব্দুল হান্নান বলেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর অধীনে ৫০ লাখ উপকারভোগী থাকার কথা, কিন্তু এর মধ্যে ৫০ হাজারের মতো কম ছিল। সেটা হিসাব করে খাদ্য অধিদফতরকে পূরণ করতে বলা হয়েছে। নতুন করে ৫০ হাজার হতদরিদ্র এ কর্মসূচীতে যুক্ত হবেন। এতে সংখ্যাটা ৫০ লাখে গিয়ে পৌঁছাবে। তিনি বলেন, আগামী সেপ্টেম্বর থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী আবার শুরু হবে। আশা করি এর আগেই নতুন সুবিধাভোগীরা যুক্ত হয়ে যাবেন।
খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) শেখ মুজিবর রহমান বলেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীতে যে সংখ্যক উপকারভোগী থাকার কথা, সেটার চেয়ে সাড়ে ৪৬ হাজারের মতো কম ছিল। আমরা এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট পেয়েছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে আমরা নির্দেশনাও পাঠিয়ে দিয়েছি।
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় আমাদের উপজেলাভিত্তিক সংখ্যাগুলো দিয়েছে, কোন উপজেলা থেকে কতজনকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, তা দারিদ্র্য মানচিত্র থেকে তালিকা দিয়েছে।
আগামী সেপ্টেম্বর থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী শুরু হচ্ছে জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, আমরা আশা করছি এর আগেই তালিকা পেয়ে যাব। আগামী সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নবেম্বর মাসে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী চলবে।
মহাপরিচালক আরও বলেন, আগের যে তালিকা সেটিও আমরা যাচাই করতে বলেছি। অনেক মানুষ তো মারাও যায়। তাদের বাদ দিয়ে যেন নতুন নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এছাড়া অনেকে স্থান পরিবর্তন করেন, সে বিষয়গুলোও বিচেনায় নেয়ার জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন। পল্লী অঞ্চলের কর্মাভাবকালীন মার্চ, এপ্রিল, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নবেম্বর এই পাঁচ মাস খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণ শুরুর পর তালিকায় সচ্ছল ব্যক্তিদের নাম থাকা, বাইরে বেশি দামে চাল বিক্রি করা, ওজনে কম দেয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভুয়া সুবিধাভোগীদের কার্ড বাতিল, ডিলারশিপ বাতিল, ডিলারদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ও বিভাগীয় মামলা, জরিমানাসহ বিভিন্ন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হয়।
২০১৭ সালের শুরুর দিকে উপকারভোগীর তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে খাদ্য বিভাগ। এ কর্মসূচীর আওতায় সাধারণ চাল ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে পুষ্টি চালও বিতরণ করেছে সরকার।