October 23, 2024, 9:23 pm
সময়ের বৈরিতা দেখেছেন, দিনযাপনের দৈন্যতা বোধ করেছেন, অনুভব করেছেন বিপ্লবে বিপ্লবে মানুষের অধিকার আদায়ের নীরব আর্তনাদ। পেয়েছেন রাজপথের বীরত্ব। খেটেছেন জীবনের জন্য, সবসময় ছুটেছেন জীবনের মূল্যবোধের পেছনে। ছাত্র জীবনের বামপন্থি রাজনীতিক থেকে হয়ে উঠেছেন রাষ্ট্রযন্ত্রের অন্যতম একজন সফল মন্ত্রী। সাধারণ এক থিয়েটারকর্মী থেকে হয়ে উঠেছেন অসাধারণ এক অভিনেতা। তিনি বরেণ্য অভিনেতা ও রাজনীতিবিদ আসাদুজ্জামান নূর।
সেই অভিনেতা তিনি বিখ্যাত ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে বাকের বাকের ভাই চরিত্রে অনন্য, অনবদ্য হিসেবে রাজপথে নেমে এসে দর্শক যার অভিনয়কে স্বীকৃতি দিয়েছিলো। রাজনীতিবিদ হিসেবেও তিনি একাধিকবার নির্বাচিত সাংসদ। পালন করেছেন দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের মন্ত্রিত্বের দায়িত্বও।
আজ তার জন্মদিন। ১৯৪৬ সালে ৩১ অক্টোবর নীলফামারী জেলায় জন্মগ্রহণ করা আসাদুজ্জামান নূর আজ ৭৪ বছরে পা রাখলেন।
তার বাবা স্কুল শিক্ষক আবু নাজেম মোহাম্মদ আলী ও মা স্কুল শিক্ষক আমিনা বেগম। এ দম্পতির বড় ছেলে আসাদুজ্জামান মোহাম্মদ আলী। যিনি অভিনয়ে এসে হয়ে যান আসাদুজ্জামান নূর।
১৯৮২ সালে ডাক্তার শাহীন আকতারকে বিয়ে করেন। এক ছেলে এক মেয়ে তার। ছেলে সুদীপ্ত লন্ডনে একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বর্তমানে দেশে একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত। মেয়ে সুপ্রভার বিয়ে হয়েছে।
এ অভিনেতার জন্মদিন নিয়ে মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্রপাড়ায় দারুণ আগ্রহ। তার ভক্তরাও এদিনে তাকে শুভেচ্ছা জানান শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায়৷ তবে নিজে কখনো বাড়তি উচ্ছ্বাস দেখাননি। জন্মদিন নিয়ে গণমাধ্যমে একবার এই কিংবদন্তি বলেছিলেন, ‘আমি কখনও ঘটা করে জন্মদিন উদযাপন করিনি। কারণ আমি চাই না আমার জন্মদিন বিশেষভাবে উদযাপন করা হোক। অন্য দিনের মতোই স্বাভাবিকভাবেই কাটুক না জন্মদিনের দিনটি। ছোটবেলাতেও আমার জন্মদিন কখনও বিশেষভাবে উদযাপন করা হতো না। সেদিন বাড়িতে হয়তো মা একটু বেশি রান্না করতেন।’
ছাত্র জীবনে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে যান। উত্তাল সব দিন পার করেছেন দেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখে দেখে।
১৯৬২ সালে স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে সকল আন্দোলনে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন আসাদুজ্জামন নূর। পরবর্তীতে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। আসাদুজ্জামান নূর মুক্তিযুদ্ধে ৬ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনেও একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
জীবনের বাঁকবদলে একটা সময়ে এসে হয়ে গেলেন সাংস্কৃতিক যোদ্ধা। আসাদুজ্জামান নূর মঞ্চ দিয়েই অভিনয় জীবনের শুরু করেন। তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে বিটিভির সোনালী যুগে প্রচার হওয়া নাটকের মাধ্যমে। বিশেষ করে আশির দশক থেকে শুরু করে নব্বই দশকের বেশ কিছু ধারাবাহিক নাটকে নূর দুর্দান্ত অভিনয় দিয়ে কালজয়ী সব চরিত্রে অনন্য হয়ে আছেন দর্শকের অন্তরে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘অয়োময়’, ‘বহুব্রীহি’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘আজ রবিবার’, ‘সবুজ ছায়া’, ‘নক্ষত্রের রাত’ নাটকগুলো।
আসাদুজ্জামান নূর অভিনীত প্রথম টিভি নাটক ‘রঙ্গের ফানুস’। তার অভিনীত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘শঙ্খনীল কারাগার’।
আসাদুজ্জামান নূরের ক্যারিয়ারে বিশেষ এক প্রভাব দেখা যায় তারই বন্ধু কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের৷ নূরের বিখ্যাত হওয়া বা কালজয়ী চরিত্রগুলোর প্রায় সবগুলোই হুমায়ূন আহমেদের রচিত৷ তার পরিচালিত অনেক নাটক-সিনেমাতেও অভিনয় করে প্রশংসা পেয়েছেন আসাদুজ্জামান নূর।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এসে সক্রিয় হন। ২০০১ এর নির্বাচন থেকে শুরু করে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নীলফামারী-২ (সদর) আসন থেকে এ পর্যন্ত টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর তিনি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
সংস্কৃতি ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য স্বাধীনতা পদক’সহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন এই কিংবদন্তি।
Comments are closed.