May 19, 2024, 3:02 pm

সাংবাদিক আবশ্যক
সাতক্ষীরা প্রবাহে সংবাদ পাঠানোর ইমেইল: arahmansat@gmail.com
বিভিন্ন জেলায় ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত নষ্ট হয়েছে ফসলের খেত

বিভিন্ন জেলায় ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত নষ্ট হয়েছে ফসলের খেত

কালবৈশাখীতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে বিদ্যুৎ সংযোগ। ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলের খেত। ফলে তীব্র দাবদাহে ফসল নষ্ট হওয়ার পর আরেক দফা ক্ষতিগ্রস্ত হলেন কৃষক। বিস্তারিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মুন্সীগঞ্জ, ত্রিশাল প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে।

ঝড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন নাসিরনগরের ৭ গ্রাম

নাসিরনগরে কালবৈশাখীর তাণ্ডবে ৭টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে বন্ধ বিদ্যুৎ সরবরাহ। ৪০টির মতো বসতঘর, দোকানপাট ও হাঁস-মুরগির খামার ক্ষতিগ্রস্ত। গত রোববার সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত থাকা কালবৈশাখীতে এমনটি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো হলো- উপজেলা সদর ইউনিয়ন, নাসিরপুর, দাতমণ্ডল, ধনকুড়া, কুলিকুণ্ডা ও মন্নরপুর। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোববার সন্ধ্যায় ঝড়ে এসব এলাকার বসতঘর, খামার ও দোকানপাটের টিনের চাল প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে উড়ে যায়। তাছাড়া প্রতিটি গ্রামের গাছপালা ভেঙে বিদ্যুতের তারের ওপর ঝুলে আছে। ভেঙে গেছে পল্লী বিদ্যুতের পাঁচটি খুঁটি ও বেশ কিছু ট্রান্সমিটার। চার শতাধিক সংযোগ লাইন ও দুই শতাধিক মিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নাসিরনগরে কালবৈশাখীতে সদরে ৯টি, কুলিকুণ্ডা ৩টি, দাতমণ্ডল ১০টি, নাসিরপুর ৫টি, ধনকুড়া ৪টি মন্নরপুর গ্রামে ৮-১০টি ও বুড়িশ্বর গ্রামে ৩টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নাসিরনগর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জোনাল ম্যানেজার প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন বলেন, ‘রোববারের কালবৈশাখী ঝড়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক জায়গায় বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশকিছু খুঁটি ও মিটারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা জেলা অফিসে যোগাযোগের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে খুঁটি মেরামতের কাজ করছি। ঝড়ে ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিকল্প পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ সরবারহের চেষ্টা করা হলেও সে লাইনটি কাজ করছে না। ফলে রাত থেকে বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না গ্রাহকরা।’

মুন্সীগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত বাঙ্গি খেত

রোববার দিনগত রাতে মুন্সীগঞ্জে ৩০ মিনিটের ঝড়-শিলা বৃষ্টিতে বিভিন্ন জায়গায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে মেঘনা নদী তীরবর্তী পৌরসভার অন্তত ৩ এলাকায় ৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করা খেতের বাঙ্গি পুরোপুরি বিনষ্ট হয়ে ক্ষতি কয়েক লাখ টাকা বলে দাবি কৃষকের। কৃষি অফিস জানিয়েছে, কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টিতে জেলা সদর ও গজারিয়া উপজেলার বাঙ্গি-সবজিসহ অন্তত ৬১০ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে। এ ছাড়া বেশিরভাগ খেতের বাঙ্গি শিলাবৃষ্টিতে পুরোপুরি বিনষ্ট হয়ে গেছে। মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার খাসকান্দি, রমজানবেগ ও চরকেওয়ার ইউনিয়নের চরমশুরা এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। এছাড়াও সদর উপজেলার পঞ্চসার, রামপাল ইউনিয়নে ঝিঙ্গা, তীল, বোরো ধান, ভুট্টা করলা, চিচিঙ্গাসহ শাকসবজির ক্ষেত শীলাবৃষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছে। সোমবার সকালে সরেজমিনে পৌরসভার খাসকান্দি এলাকায় গেলে ক্ষেতের পাশে বিমর্ষ অবস্থায় বসে থাকা বাঙ্গি চাষি জয়নাল হাসানের সঙ্গে দেখা হয়। তিনি জানান, ‘এবার ৮৬ শতাংশ জমিতে বাঙ্গি আবাদ করেছি। মাত্র বাঙ্গিগুলো পরিপক্ব হতে শুরু করেছিল। আর কিছুদিন পরে সেগুলো খেত থেকে তুলে বাজারে বিক্রি করার কথা। কিন্তু রোববার রাতে সর্বনাশ হয়ে গেছে। আমার মাথায় হাত পড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতির শিকার আগে হইনি।’ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমাদের মাঠ কর্মীদের কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে যে তথ্য পেয়েছি তাতে জেলা সদর ও গজারিয়া উপজেলার ৬১০ হেক্টর জমির ফসল শিলাবৃষ্টি ও কালবৈশাখী ঝড়ে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে কিছু বেঁচে যাবে আবার কিছু ক্ষতির মুখে পড়বে। তিনি জানান, ৬৫ হেক্টর জমির সবজি, ১৪০ হেক্টর জমির ভুট্টা, ১২০ হেক্টর জমির তীল, ৪২ হেক্টর জমির পাট, ৫ হেক্টর জমির বাঙ্গি, দেড় হেক্টর জমির মরিচ ও ২৭৪ হেক্টর জমির বোরো ধান আক্রান্ত হয়েছে।’ এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বাঙ্গির ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষকের বেগ পেতে হবে। এ ছাড়া অন্যান্য ফসলের ক্ষতিও ব্যাপক। তবে আর্থিক পরিমাণ নিরুপণ করা এখনি সম্ভব নয়।’

ত্রিশালে শিলাবৃষ্টিতে ধানের ক্ষতি

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শিলাবৃষ্টিতে কৃষকের বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া অনেক টিনের ঘরের (উপরের অংশ) চাল ছিদ্র হয়ে গেছে। উপজেলা রামপুর ইউনিয়নের কাকচর এলাকার ব্যবসায়ী আবু ইয়াহিয়া বলেন, ‘গতকাল রাতে শিলা বৃষ্টিতে আমাদের ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমার জন্মের পর কখনো এমন শিলা বৃষ্টি দেখিনি।’ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. শহিদউল্লাহ বলেন, ‘ইতোমধ্যে জাতীয় সংসদ সদস্য এবিএম আনিছুজ্জামান শিলা বৃষ্টির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জেনে তাকে অবহিত করতে বলেছেন। আমরা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের তালিকা দেওয়ার জন্য অবগত করেছি।’


Leave a Reply

ইমেইল: arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com