May 19, 2024, 5:29 am

সাংবাদিক আবশ্যক
সাতক্ষীরা প্রবাহে সংবাদ পাঠানোর ইমেইল: arahmansat@gmail.com
সাতক্ষীরায় সরিষার আবাদ লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে

সাতক্ষীরায় সরিষার আবাদ লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে

সাতক্ষীরায় উচ্চ ফলনশীল জাতের বারি-১৪ ও বিনাসরিষা-৯ জাতের সরিষার চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বল্প সময়ে বেশি উৎপাদন হওয়ায় বারি-১৪ ও বিনাসরিষা-৯ জাতের সরিষা চাষে ঝুঁকছেন সাতক্ষীরার কৃষক। স্থানীয় জাতের সরিষার উৎপাদন যেখানে বিঘাপ্রতি তিন থেকে সাড়ে তিন মণ, সেখানে এই দুই জাতের সরিষা প্রতি বিঘায় ছয় থেকে সাড়ে ছয় মণ পর্যন্ত উৎপাদন হচ্ছে। এছাড়া দুর্য়োগ ও জলাবদ্ধতার প্রতিকূলতা রোধ করেও মাত্র ৮০ দিনে চাষীদের ঘরে উঠছে এই সরিষা। তাছাড়া সরিষা উঠিয়ে সেখানে আবার বোরো চাষ হচ্ছে। ফলে বছরে তিনটি লাভজনক ফসল উৎপাদন করতে পারছেন কৃষকরা। সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে জেলার সাতটি উপজেলায় ১৪ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৪ হাজার ৩২০ হেক্টর, কলারোয়ায় ৬ হাজার ৬৫০, তালায় ৮৯৬, দেবহাটায় ১ হাজার ৭৫, কালীগঞ্জে ৪৫০, আশাশুনিতে ৩৫০ ও শ্যামনগরে ২৮০ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রায় ১ হাজার হেক্টর বেশি। উল্লেখ্য, চলতি মৌসুমে জেলায় ১৩ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

সাতক্ষীরা কলারোয়া উপজেলার তুলসীডঙ্গা গ্রামে ২৫ জানুয়ারি বিনাসরিষা-৯ জাতের সরিষার এক মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে উপস্থিত কৃষকরা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন।

কৃষক গোলাম হোসেন জানান, গত বছর চার বিঘা জমিতে বিনাসরিষা-৯ জাতের সরিষা চাষ করে প্রায় ২৫ মণ সরিষা উৎপাদন করেন। যা স্থানীয় টরি-৭ জাতের তুলনায় অন্তত ৪০ শতাংশ পরিমাণ বেশি। তাই চলতি মৌসুমে ছয় বিঘা পরিমাণ জমিতে বিনাসরিষা-৯ ও বারি-১৪ সরিষা চাষ করেছেন। জমি চাষ, সেচ, সার-কীটনাশক দিয়ে প্রতি বিঘায় ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা খরচ হয় সরিষা উৎপাদনে।

তিনি আরও বলেন, গত মৌসুমে চার বিঘা জমির সরিষা উৎপাদনে আমার ৪০ হাজার টাকার বেশি লাভ হয়। চলতি বছর আমি ছয় বিঘা জমিতে ৭০-৭৫ হাজার টাকা লাভ হবে বলে আশা করছি। তাছাড়া সরিষা উত্তোলন করে একই জমিতে বোরো চাষ করব।

সাতক্ষীরার বালিথা গ্রামের কৃষক আজগর আলী জানান, চলতি মৌসুমে দুই বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা করেছেন। গত বছর একই পরিমাণ জমিতে ১৩ মণ সরিষা উৎপাদন হয়। সেখানে উৎপাদন খরচ উঠিয়ে ২৮ হাজার টাকা লাভ হয়েছিল। এরই মধ্যে জমির সরিষা উত্তোলন শেষ করেছেন। এবার বোরো রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।

কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুলী বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিনা ময়মনসিংহ এর উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বিনাসরিষা-৯ জাতের উদ্ভাবক ড. রেজা মোহাম্মদ ইমন, বিনা উপকেন্দ্র সাতক্ষীরার উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড.বাবুল আকতার,কলারোয়া পৌরসভার মেয়র মোঃ মনিরুজ্জামান, কলারোয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবুল হোসেন মিয়া প্রমূখ।

বিনা উপকেন্দ্র সাতক্ষীরার উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড.বাবুল আকতার বলেন, বর্তমানে যে বিপুল পরিমাণ তেল আমদানী করতে হয় সেখানে বিরাট সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে বিনাসরিষা-৯ এর চাষ যার ফলে পতিত জমি সমূহ চাষের আওতায় এনে তেলের ঘাটতি অনেকাংশে পূরণ সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, বিনা উপকেন্দ্র, সাতক্ষীরার মাধ্যমে এই অঞ্চলে কৃষকদের প্রশিক্ষন, বীজ ও সার সহায়তার মাধ্যমে পতিত জমি সমূহতে এবং দেশী কম ফলনশীল সরিষার জাত প্রতিস্থাপন করে এই উন্নত উচ্চ ফলনশীল জাতের চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মোঃ জামাল উদ্দিন জানান, বারি-১৪ ও বিনাসরিষা-৯ জাতের সরিষা কৃষকদের মাঝে বেশ আশা জাগিয়েছে। জেলার মোট আবাদের কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ চাষ হয়েছে বারি-১৪ জাতের সরিষা। একইভাবে বাড়ছে বিনাসরিষা-৯ জাতের চাষও।

তিনি বলেন, স্থানীয় জাতের তুলনায় এ সরিষার ফলন প্রায় দ্বিগুণ। স্থানীয় টরি-৭ জাতের সরিষা প্রতি বিঘায় উৎপাদন তিন থেকে সাড়ে তিন মণ, সেখানে বারি-১৪ ও বিনসারিষা-৯ জাতের সরিষা ছয় থেকে সাড়ে ছয় মণ হচ্ছে। ফলে বর্তমানে এই দুই জাতের সরিষা চাষে কৃষকরা বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন।


Comments are closed.

ইমেইল: arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com