April 27, 2024, 7:43 am
আমতলীর সাড়ে ৩ হাজার তরমুজচাষি নিঃস্ব
হস্ত পরাগায়নের মাধ্যমে তরমুজের ফল ধরানো পদ্ধতি অবলম্বন করেও কাজে আসেনি। গাছে ফল ধরেনি। এতে আমতলী উপজেলার অন্তত সাড়ে ৩ হাজার তরমুজচাষি নিঃস্ব হয়ে গেছে। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে তারা ঘুরছেন। বিপাকে পড়েছেন দাদনে সার বিক্রি করা মহাজনেরা। নিঃস্ব চাষিরা সরকারিভাবে সহায়তার দাবি জানিয়েছেন। আমতলী কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আঠারোগাছিয়া, হলদিয়া, সদর, চাওড়া, কুকুয়া ও গুলিশাখালী ইউনিয়নের ৫ হাজার তরমুজচাষি এ বছর ৩ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ করেছেন। চাষিদের নিরলস প্রচেষ্টায় তরমুজ গাছ ভালো হয়েছে। কৃষকরা বাম্পার ফলনের আশায় বুক বেঁধেছিল। নিম্নমানের বীজ রোপণ ও অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারে তরমুজ গাছে প্রচুর ফুল ধরলেও ফল ধরেনি। উপজেলার অন্তত ৭০ ভাগ তরমুজ ক্ষেতে এমন অবস্থায় কৃষি বিভাগ হস্ত পরাগায়নের পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু হস্ত পরাগায়ন পদ্ধতি অবলম্বন করেও কাজে আসেনি। গাছে ফলন না ধরায় অন্তত দেড়শ কোটি টাকা লোকসান হবে বলে দাবি কৃষকদের। ফলে উপজেলার সাড়ে ৩ হাজার তরমুজচাষি নিঃস্ব হয়ে গেছে। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে তারা ঘুরছেন। দাদন নেয়া চাষিরা ঋণ পরিশোধের ভয়ে গাঢাকা দিয়েছেন। এছাড়া, মহাবিপাকে পড়েছে কৃষকদের দাদনে সার বিক্রি করা মহাজনেরা। অপরদিকে, আগাম তরমুজ চাষে বেশ সফলতা পেয়েছেন কয়েকশ চাষি। নিঃস্ব চাষিরা সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়েছেন।
শনিবার চাওড়া ইউনিয়নের পাতাকাটা, চন্দ্রা, হলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ রাওঘা, কুকুয়ার কৃষ্ণ নগর, আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাখালী, গুলিশাখালী, হলদিয়া ও টেপুড়া গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, মাঠভরা তরমুজ ক্ষেত। গাছে তরমুজ নেই। গাছের অধিকাংশ পুড়ে গেছে। হলদিয়া ইউনিয়নের টেপুরা গ্রামের কৃষক মো. আবুল কালাম মাস্টার বলেন, ধার দেনা করে ৩ একর জমিতে পৌনে দুই লক্ষ টাকা খরচ করে তরমুজ চাষ করেছিলাম, কিন্তু এক টাকাও বিক্রি করতে পারিনি। হস্ত পরাগায়ন করেও কোনো কাজে আসেনি। কীভাবে ঋণ পরিশোধ করবো সেই চিন্তায় ঘুম হারাম? স্ত্রীর ব্যবহৃত গহনা বন্ধক রেখেছি। সরকারি সহযোগিতা পেলে কিছুটা হলেও চাষিরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বলে জানান তিনি।
ওই গ্রামের চাষি মজিবর শেখ বলেন, মোর সব শ্যাষ অইয়্যা গ্যাছে। পাবনা মহাজনের গোলে ৬ লাখ টাহা দাদন আনছি। নিজের টাহা খুওয়াইছি। এ্যাহন কি হরমু হেই চিন্তা হরি। ঋণের দায়ে পালাইয়্যা যাইতে অইবে। তিনি আরো বলেন, কি দিয়া মুই ঋণ দিমু কইতে পারি না। হ্যারপর দাদনে সার আনছি হ্যাগো কি কমু? মুই সরহারি সাহায্য চাই। রাসেল ফকির বলেন, বলে লাভ নেই ভাই, সব শেষ হয়ে গেছে। ৫ লক্ষ টাকা ব্যয় করে ৯ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছিলাম, কিন্তু ৬ একর জমিতে কিছুই হয়নি। গাছ পুড়ে গেছে। ৩ একর জমিতে কিছু হয়েছে, তাকে কি হবে। এ বছর অন্তত ৪ লক্ষ টাকা লোকসান হবে।
পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের বাহাউদ্দিন হাওলাদার বলেন, ধারদেনা করে এ বছর ৮ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। গাছে তরমুজ হয়নি। অধিকাংশ গাছ পুড়ে গেছে। এতে অন্তত ৫ লক্ষ টাকা লোকসান হয়েছে।
তরমুজ ব্যবসায়ী মো. সোহেল রানা বলেন, এ বছরের মতন এমন অবস্থা তরমুজচাষিদের কখনো হয়নি। তরমুজচাষিরা পথে বসে গেছে। তিনি আরো বলেন, ঋণের বোঝা নিয়ে তরজুমচাষিরা দিশেহারা। অনেক চাষি ঋণের জন্য ইতোমধ্যে গাঢাকা দিয়েছেন। তিনি নিঃস্ব চাষিদের সরকারিভাবে প্রণোদনা দেয়ার দাবি জানান।
সোনাখালী গ্রামের কৃষক মজিবর হাওলাদার বলেন, মোর সব শ্যাষ অইয়্যা গ্যাছে, মুই এ্যাহন কি হরমু? দুই লাখ টাহা ধার কইর্যা তরমুজ দিছি, সেই খ্যাতে তরমুজ অয়নি। প্রধানমন্ত্রী যদি মোরে সাহায্য না হরে, মোর দ্যাশ ছাইরা পলাইয়্যা যাইতে অইবো। মুই সরকারের কাছে সাহায্য চাই।
কৃষক হাসান মৃধা বলেন, ধারদেনা করে তরমুজ চাষ করেছি কিন্তু তরমুজ হয়নি। লিয়াকত হাওলাদার, মিলন চৌকিদার, শাহীন মৃধা, ওহাব মৃধা, মোকলেস মৃধা, কালাম, মামুন ও জহিরুল বলেন, তরমুজ তো হয়নি এখন কীভাবে ঋণ পরিশোধ করব, সেই চিন্তায় ঘুম হারাম। রাওঘা গ্রামের চাষি মজিবর মৃধা বলেন, ৩ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি কিন্তু কিছুই হয়নি। হলদিয়া গ্রামের কৃষক শাহ আলম খান বলেন, ক্ষেতে তরমুজ হয়নি। গাছ পুড়ে গেছে। কীভাবে ঋণ শোধ করব ভেবে পাচ্ছি না।
সফল তরমুজচাষি ইউপি সদস্য আবু ছালেহ বলেন, টেপুড়া গ্রামের অন্তত ২ শতাধিক মানুষ তরমুজ চাষ করেছে। তার মধ্যে ১৫০ জনের অধিক চাষির ক্ষেতে তরমুজ হয়নি। গাছ পুড়ে গেছে। ওই চাষিদের নিঃস্ব হয়ে পথে বসতে হবে। হলদিয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, হলদিয়া ও উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামের অধিকাংশ চাষির ক্ষেতে তরমুজ হয়নি। কৃষি অফিসের পরামর্শে পরাগায়ন করেও লাভ হয়নি।
আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিএম রেজাউল করিম বলেন, মানসম্মত বীজ রোপণ করতে না পারা ও অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পরাগায়ন ঘটেনি। ফলে গাছে তরমুজ হয়নি। সরকারিভাবে তরমুজের বীজ না সরবরাহ করায় বেসরকারি কোম্পানিগুলো নষ্ট বীজ দিয়ে কৃষকদের সাথে প্রতারণা করেছে। তিনি বলেন, তরমুজ চাষাবাদের উত্তমাঞ্চল আমতলী ও তালতলী। এ অঞ্চলের তরমুজচাষিদের প্রশিক্ষণসহ বীজ সরবরাহ করা গেলে তারা বেশ উপকৃত হবে।
- সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: অধ্যক্ষ আবু আহমেদ
- সম্পাদক ও প্রকাশক: সৈয়দ হাসান ইমাম
- কাটিয়া টাউন বাজার, সাতক্ষীরা।
- মোবাইল: 01760995012, 01714509554