April 27, 2024, 5:45 am

সাংবাদিক আবশ্যক
সাতক্ষীরা প্রবাহে সংবাদ পাঠানোর ইমেইল: arahmansat@gmail.com
শিরোনাম:
জুম্মার নামাজে মুসল্লিদের দোয়া চাইলেন মশিউর রহমান বাবু সাতক্ষীরায় অপহৃত ৮ম শ্রেণীর ছাত্রীকে উদ্ধার করলো পুলিশ সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে পৃথক বার্ন ইউনিট না থাকায় জরুরী সেবা ঝুঁকিতে এসিড দগ্ধ ও পোড়া রুগীরা দাবদাহ উপেক্ষা করে ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষকরা সাতক্ষীরায় সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলে নিহত জনপ্রিয়তার শীর্ষে নতুন মুখ প্রভাষক সুশান্ত কুমার মন্ডল আশাশুনীতে বাপ্পী সীড হাউজ দোকান উদ্বোধন দক্ষিণ খুলনার অস্ত্র ও মাদকের গডফাদার ওজিয়ার গ্রেফতার সাতক্ষীরায় টিটিসিতে ৭৫ দিন মেয়াদী দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণের মতবিনিময় তীব্র তাপদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত, বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ
আ’লীগের সম্মেলন আলোচনায় যারা

আ’লীগের সম্মেলন আলোচনায় যারা

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিল আগামীকাল শুক্রবার। কাল সম্মেলনের উদ্বোধন হলেও নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনসহ নানা চমক থাকবে শনিবার কাউন্সিলের দ্বিতীয় দিনে। এবারের সম্মেলনে সবার দৃষ্টি দলের সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে। আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের রেওয়াজ অনুযায়ী আগের সাধারণ সম্পাদকই পুনরায় আরেক মেয়াদে নির্বাচিত হবেন নাকি, নতুন কাউকে এবারের সম্মেলনে শেখ হাসিনা রানিংমেট হিসেবে বেছে নেবেন এই চমক দেখার অপেক্ষায় সংগঠনটির তৃণমূলের লাখ লাখ নেতাকর্মীসহ দেশবাসী।আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্রগুলো বলছে, সভাপতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই থাকছেন—এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসছে কি না, এটাই এখন মূল আলোচনার বিষয়। এ পদে পরিবর্তনের কোনো ইঙ্গিত আছে কি না, দলে নতুন কে আসছেন, কারা বাদ পড়ছেন—এসব বিষয়ে ধারণা পেতে নেতারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে শেষ মুহূর্তে যোগাযোগ রাখছেন।সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরই থাকছেন, নাকি নতুন কেউ?- এ প্রশ্নের উত্তর জানতে অপেক্ষা করতে হবে শনিবার দলটির ২য় কাউন্সিল অধিবেশন পর্যন্ত।এমনটিই ইঙ্গিত করেছেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার প্রশ্ন করা হয় খোদ আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে। এ বিষয়টি তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ছেড়ে দেন। বলেন, এ বিষয়টি নেত্রী আর আল্লাহ জানেন।এবারের সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসবে কিনা এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘আমাদের নেত্রী আসলে কী চান? কাকে চান? নতুন কাউন্সিল থেকে যে নেতৃত্ব আসবে এই নেতৃত্ব তিনি কোন মডেলে রিকাস্ট করবেন এবং কীভাবে সাজাবেন তিনি নিজেই সেটি ঠিক করবেন। এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। এ জন্য ২১ তারিখ বিকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’তবে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হতে যাচ্ছেন বলে যুগান্তরকে আভাস দিয়েছেন দলটির একাধিক নীতিনির্ধারক। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ সোমবার যুগান্তরকে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন পাঁচবার।অন্যান্য কাউন্সিল ঘেঁটে দেখা যাবে সবাই দুই মেয়াদে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও দুই মেয়াদে ছিলেন। তাছাড়া বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ভালো কাজ করছেন। তিনি আরেকটি মেয়াদ থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। তিনি এখন পুরোপুরি সুস্থ। কাউন্সিলে এ পদে নতুন কাউকে দেখব বলে মনে হয় না।তিনি আরও বলেন, ‘আমি তো দেখছি, আমাদের যিনি সাধারণ সম্পাদক আছেন তারই থাকার সুযোগ আছে। আমাদের সাধারণ সম্পাদকের শরীর তো এখন ভালো। ফলে তিনিই থাকতে পারেন।’প্রায় অভিন্ন সুরে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান। তিনি বলেন, যেসব কারণে সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসার কথা তেমন কিছু ঘটেনি। একটা সময় বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অসুস্থ থাকলেও তিনি এখন সুস্থ। কাজও করছেন স্বাভাবিকভাবে। এ পদে পরিবর্তন হওয়ার মতো কিছু দেখছি না।কেউ কেউ মনে করছেন, তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দলের ভেতর একটা নাড়া দিতে হলে পরিবর্তন দরকার। এ ক্ষেত্রে সবার আলোচনায় ঘুরেফিরে বেশ কিছু নাম আসছে। এই মুহূর্তে সাধারণ সম্পাদক পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। কেউ কেউ দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও আবদুর রহমানের নামও এই পদে বিবেচনায় রাখছেন। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা সবাইকে চমকে দিতে পছন্দ করেন—এমনটা ভেবে কেউ কেউ গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজমতউল্লাহ খানের নামও বলছেন।ড. আবদুর রাজ্জাকের নাম গত সম্মেলনের সময়ও আলোচনায় ছিল। ছাত্রজীবনে তিনি ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ছিলেন। দুই মেয়াদে মন্ত্রী হওয়ার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য তিনি।সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পরিবর্তনের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কমিটিতে পরিবর্তনের বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ওপরই আমরা ছেড়ে দিয়েছি। উনি যেভাবে চাইবেন সেভাবেই হবে। সাধারণ সম্পাদক পদে মনে হয় না পরিবর্তন আসবে। তবে অন্য পদগুলোতে পরিবর্তন আসতে পারে। কমিটিতে নারীর সংখ্যাও কিছু বাড়তে পারে।’আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নেতৃত্ব নির্বাচনের দায়িত্ব কাউন্সিলরদের; যদিও কাউন্সিলররা বরাবরই এ দায়িত্ব তুলে দেন সভাপতি শেখ হাসিনার কাঁধে। তাই পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক কে হবেন তা নির্ভর করবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর।

কাউন্সিলের শেষ দিন দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়ে থাকে। কিছুটা সময় নিয়ে পরে পুরো কমিটি ঘোষণা করা হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক পদে কে আসছেন সেটি জানতে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।

তবে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ইতিহাস বলছে, পর পর দুবার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করার নজির আওয়ামী লীগে নতুন নয়। আবদুল জলিল ছাড়া সবাই একাধিকবার এই দায়িত্বে ছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৫ বার এ দায়িত্ব পালন করেন। তাজউদ্দীন আহমদ তিনবার দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। জিল্লুর রহমান চারবার এ দায়িত্ব পালন করেন। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও আবদুর রাজ্জাক দুবার করে ওই পদে ছিলেন।

সর্বশেষ সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দুই দফায় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ওবায়দুল কাদেরও দ্বিতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেতে পারেন বলে মনে করছেন দলের নেতাকর্মীরা।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা যুগান্তরকে বলেন, এবারের সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অপরিবর্তিতই থাকছে। সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিক নেতার নাম উঠে এলেও রীতি অনুযায়ী কাউন্সিল অধিবেশনে কেউ প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন না। তারা আরও বলেন, সাধারণত তৃণমূলের নানা অভিযোগের কারণেই সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তনে গুরুত্ব দেন দলের হাইকমান্ড। বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে তেমন কোনো অভিযোগ নেই। তিনি সারা দেশে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। দলীয় কাজে তার প্রতি অনেকটাই সন্তুষ্ট আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। সে হিসেবে ধরেই নেয়া যায়, ওবায়দুল কাদেরই ফের সাধারণ সম্পাদক থাকছেন।

এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি যুগান্তরকে বলেন, আমি দ্বিতীয়বার পার্টির সাধারণ সম্পাদক থাকব কিনা, তা নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। তিনি বলেন, আমি নিজে প্রার্থী হব না। নেত্রী দায়িত্ব দিলে অমত করব না। তিনি চাইলে আবার দায়িত্ব দেবেন, না চাইলে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেবেন। ওনার (শেখ হাসিনা) সিদ্ধান্ত আমরা সবাই মেনে চলব।

মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা ওবায়দুল কাদের এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। গত ৩ মার্চ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। পরদিন ৪ মার্চ উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। ২০ মার্চ সেখানকার মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তার বাইপাস সার্জারি হয়। দীর্ঘ চিকিৎসার পর ১৫ মে সুস্থ হয়ে দেশে ফেরেন তিনি। এরপর থেকেই পুরোদমে দলে ও সরকারে কাজ করছেন ওবায়দুল কাদের।

প্রেসিডিয়ামসহ অন্যান্য পদে ব্যাপক পরিবর্তনের আভাস

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতাদের ভাষ্যমতে, দলের প্রেসিডিয়াম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক ও সম্পাদকীয় পদে চমক আসতে পারে।

দলীয় সূত্র বলছে, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া সভাপতিমণ্ডলীতে পদ ১৭টি। চার–পাঁচজনের বাদ পড়ার কথা শোনা যাচ্ছে। বর্তমানে তিনটি পদ ফাঁকা আছে। সব মিলিয়ে ব্যাপক রদবদলেরই আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

চারজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের বেশির ভাগেই নতুন আসতে পারেন। দলের হয়ে বিরোধীদের বক্তব্যের জবাব দিতে পারেন এমন নেতাদের বেছে নেয়া হবে। বর্তমান যুগ্ম সম্পাদকদের মধ্যে অন্তত দুজন সভাপতিমণ্ডলীতে যেতে পারেন।

৮ জন সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে দু–তিনজনের পদোন্নতি হতে পারে। বাদ যেতে পারেন দু–একজন। চার–পাঁচজন নতুন মুখ যুক্ত হতে পারেন সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে।

১৯ জন বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকের মধ্যে পাঁচ–ছয়জন ছাড়া অন্যরা এতটা সক্রিয় ছিলেন না। ফলে সম্পাদকমণ্ডলীতে বড় পরিবর্তনই আসতে পারে। কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও সম্পাদকমণ্ডলীতে কয়েকজন নারী এবং প্রয়াত নেতাদের পরিবারের সদস্যরা যুক্ত হতে পারেন।

তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সবাই চান শুদ্ধি অভিযানের ভেতর দিয়ে হতে যাওয়া কাউন্সিলে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন। বিশেষ করে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দেশে ফেরার পর যারা ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দুঃসময়ে মাঠে ছিলেন তারা কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে আসুক- এ রকম চাওয়া নেতাকর্মীদের। সেই চাওয়া অনুয়ায়ী অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাদের এবারের কমিটির গুরুত্বপূর্ণ ঠাই দেয়া হবে।

দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, ‘নতুন মুখ, নতুন নেতৃত্বের’ যে প্রত্যাশা আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড করছে, এর প্রতিফলন ঘটবে এবারের কাউন্সিলে।


Comments are closed.

ইমেইল: arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com