কপোতাক্ষ নদের পাইকগাছার বিস্তীর্ণ এলাকায় ফের ভয়াবহ ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। উপজেলার রাড়ুলীর মালোপাড়া, কপিলমুনির আগড়ঘাটা, রামনাথপুর, সোনাতনকাটি, মাহমুদকাটি, গোলাবাটি, কাশিমনগরসহ বিভিন্ন এলাকার কয়েক শ’ হেক্টর জমির ঘর-বাড়ী, গাছপালা, রাস্তা, কবরস্থান, ফসলি জমির পাশাপাশি বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। জেলে পল্লীর বহু পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়ে পেশাবদল করে অন্যত্র বসবাস করছে। সর্বশেষ পরিস্থিতিতে কাশিমনগর হাট-বাজার, গোলাবাটি আশ্রয়ন প্রকল্প, মাহমুদকাটি ও রামনাথপুর এলাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে চরম ঝুঁকির মুখে রয়েছে। যেকোন সময় সেখানকার ভূমি ধ্বসে বিলীণ হতে পারে নদী গর্ভে।স্থানীয়রা এসব এলাকার ভাঙ্গন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাশাপাশি স্থানীয় সংসদ সদস্যের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এদিকে কপোতাক্ষের ভয়াবহ ভাঙ্গনের খবরে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা পাউবোর কার্যসহকারী মো: আবু তাহের গাজী মাহমুদ কাটি, গোলাবাটি ও কাশিমনগর বাজার এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি জরুরী ভিত্তিতে রিংবাঁধের জন্য মাহমুদকাটির ৩৭৫ মিটার, গোলাবাটির ৩০০ ও কাশিমনগর বাজারসহ জেলেপল্লীর ২০০ মিটার এলাকা চিহ্নিত করেন।এসময় ভাঙ্গনরোধে বিষয়টি পাউবোর উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন বলেও জানান তিনি।পরিদর্শনকালে কপিলমুনি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক রাজু, স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, কপোতাক্ষের ভয়াবহ ভাঙ্গনে উপজেলার রাড়ুলী জেলে পল্লী, আগড়ঘাটা, রামনাথপুরসহ আশপাশের কয়েক শ’ হেক্টর এলাকায় বাড়ি-ঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কবরস্থানসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর সর্বশেষ কপোতাক্ষের ভয়াবহ ভাঙ্গন ও তীব্র স্রোতের মুখে মাহমুদকাটি, গোলাবাটি, কাশিমনগর জেলেপাড়াসহ স্থানীয় কাশিমনগর বাজার চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ভয়াবহ ভাঙ্গনের কবলে যেকোন সময় এলাকাগুলো নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকায় অনেকের নির্ঘুম রাত কাটছে বলেও জানান ভূক্তভোগী এলাকাবাসী।
সূত্র জানায়, গত প্রায় ৩ যুগ ধরে কপোতাক্ষের এসব এলাকায় কখনো করাল গ্রাস আবার কখনো নাব্যতা হ্রাস বিদ্যমান। নাব্যতা হ্রাসের কবলে কপোতাক্ষ নিশ্চিহ্ন হতে থকলে আন্দোলনের মুখে সরকার কপোতাক্ষ খননের মাধ্যমে নাব্যতা ফিরিয়ে ফের স্রোতসীনি করে তোলে। তবে কোথাও কোথাও পরিকল্পনাহীনতায় বাঁক (মোড়) সরলীকরণ না হওয়ায় বর্তমানে তার পিরীত পাশে ভয়াবহ ভাঙ্গন ও বাঁক এলাকায় ব্যাপকহারে পলিভরাট শুরু হয়েছে।
স্থানীয়রা আরো জানায়, উপজেলার রাড়ুলীর ৩নং ওয়ার্ড রাড়ুলী মালোপাড়ার অন্তত অর্ধশত পরিবার গৃহহারা হয়ে অন্যত্র বসবাস করছে। বোয়ালিয়া এলাকার অবস্থা আরো খারাপ। কপিলমুনির আগড়ঘাটা, ভেদামারি, হরিঢালীর রামনাথপুরের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। ভাঙ্গনের মুখে সহায়-সম্বল হারিয়ে অনেক পরিবার পথে উঠেছে। আগ্রাসী কপোতাক্ষ সেখানকার কয়েক শ’ ঘর-বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, কবরস্থানসহ ফলদ বাগান ও ফসলের ক্ষেত গিলে খেয়েছে। এখনো যারা টিকে রয়েছেন তারাও কপোতাক্ষে ঝুলে রয়েছে। ভাঙ্গনের মুখে বিলীণ হওয়ার আশংকায় প্রায় সবারই রাত কাটছে নির্ঘুম। এমনকি পাইকগাছা-খুলনা প্রধান সড়কটিও কয়েক বছর আগে ঐ এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
রাড়–লীর ক্ষতিগ্রস্থরা জানান, গত বছর ভাঙ্গনকবলিত এলাকার কিছু অংশে জিও ব্যাগে বালু ভরাট করে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হলেও বাকি অংশে ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে।রামনাথপুরের ক্ষতিগ্রস্থ পোস্ট মাস্টার মিজানুর রহমান জানান, এব্যাপারে তারা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন নিবেদন করলেও কার্যত কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
কপিলমুনি ইউপি চেয়ারম্যান মো: কওছার আলী জোয়ার্দ্দার বলেন, ইতোপূর্বে তারা স্থানীয়ভাবে সহযোগিতা ও স্বেচ্ছাশ্রমে আগড়ঘাটা এলাকায় ভাঙ্গরোধে বেশ কিছু এগিয়ে নিলেও তা ভাঙ্গন প্রতিরোধে পর্যাপ্ত নয়। বিষয়টি তারা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন বলেও জানান তিনি।এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড’র পাইকগাছা উপজেলা উপ-সহকারি প্রকৌশলী রাজু হাওলাদার জানান, ইতোমধ্যে কপোতাক্ষের পাইকগাছা উপজেলার ভাঙ্গকবলিত এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধে বাঁধ বরাদ্দের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।