April 27, 2024, 12:16 pm

সাংবাদিক আবশ্যক
সাতক্ষীরা প্রবাহে সংবাদ পাঠানোর ইমেইল: arahmansat@gmail.com
শিরোনাম:
জুম্মার নামাজে মুসল্লিদের দোয়া চাইলেন মশিউর রহমান বাবু সাতক্ষীরায় অপহৃত ৮ম শ্রেণীর ছাত্রীকে উদ্ধার করলো পুলিশ সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে পৃথক বার্ন ইউনিট না থাকায় জরুরী সেবা ঝুঁকিতে এসিড দগ্ধ ও পোড়া রুগীরা দাবদাহ উপেক্ষা করে ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষকরা সাতক্ষীরায় সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলে নিহত জনপ্রিয়তার শীর্ষে নতুন মুখ প্রভাষক সুশান্ত কুমার মন্ডল আশাশুনীতে বাপ্পী সীড হাউজ দোকান উদ্বোধন দক্ষিণ খুলনার অস্ত্র ও মাদকের গডফাদার ওজিয়ার গ্রেফতার সাতক্ষীরায় টিটিসিতে ৭৫ দিন মেয়াদী দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণের মতবিনিময় তীব্র তাপদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত, বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ
কর্মহীন জেলেদের পেট বাঁচাতে অবৈধ প্রবেশ বৃদ্ধি সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

কর্মহীন জেলেদের পেট বাঁচাতে অবৈধ প্রবেশ বৃদ্ধি সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

তিন মাসের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে সাতক্ষীরা উপকূলের ৪০ হাজারের বেশী বনজীবি পরিবার। ফলে পেট বাচাতে অবৈধভাবে সুন্দর বনে প্রবেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর কতিপয় বন কর্মকর্তা কর্মচারী গুনছে অবৈধ টাকা। সুন্দরবনে প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা হয়েছে যে কারনে পেটের দায়ে জেলে পরিবারগুলো সুন্দরবনে অবৈধ প্রবেশ করে মাছ কাঁকড়া আহরন বৃদ্ধি করেছে। আর এ সুযোগে কতিপয় বন কর্মকর্তাকর্মচারীরা নিচ্ছে সাপ্তাহিক টাকা। কোন কোন সময় সুন্দরবনের বিভিন্ন অভ্যয়ারন্য এলাকায় বন বিভাগ অভিযান পরিচালনা করে মাছ কাঁকড়া সহ জেলেদের আটক করছে তবে জেলেরা বলছে যারা সাপ্তাহিক টাকা পরিশোধ করছে তাদের আটক করছে না আর যারা সময়মত টাকা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে তাদের বন বিভাগ আটক করে মামলা দিচ্ছে। জেলে পরিবারের সদস্যরা সাধারণত সুন্দরবন, সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদী ও তৎসংলগ্ন সাগরে মাছ, কাকড়া ও বনজ সম্পদ আহরণ এবং পর্যটক গাইড হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

সুন্দরবনের মৎস্য সম্পদ রক্ষায় গত ১ জুন থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলেও এখনো পর্যন্ত বনজীবী পরিবারগুলোর কাছে পৌঁছায়নি কোন সরকারি সহায়তা। ৪০ হাজার পরিবারের মধ্যে সমুদ্রে মৎস্য আহরণকারী ৭৯৫টি পরিবার দু’একের মধ্যেই সরকারি সহায়তা হিসেবে ৫৬ কেজি করে চাউল পাবে বলে জানিয়েছে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা মৎস্য দপ্তর। এছাড়া আগামী জুলাই মাসে আরও ৮৩২৪টি পরিবার ৩০ কেজি করে চাউল পাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে দপ্তরটি। তবে, প্রকৃত অর্থে সুন্দরবনে বনজ সম্পদ আহরণকারী (সুন্দরবন থেকে মাছ, কাকড়া, বনজসম্পদ) জেলে- বাওয়ালীরা এই সরকারি সহায়তা পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে। সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এমএ হাসান জানান, সাতক্ষীরা রেঞ্জে পর্যটক গাইডসহ নয় থেকে সাড়ে নয় হাজার মানুষ সুন্দরবনের বনজসম্পদ আহরণের সাথে জড়িত।

১ জুন থেকে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ায় বর্তমানে কেউই বনে প্রবেশ করতে পারছেন না। এক্ষেত্রে বনজীবীরা কোন সরকারি সহায়তা পাবেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তাদের সরকারিভাবে সহায়তার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো কোন নির্দেশনা আসেনি। এদিকে, শ্যামনগরের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুষার মজুমদার বলেন, শ্যামনগরে নিবন্ধনকৃত ২৩ হাজার মৎস্যজীবী আছে। এর মধ্যে কেউ খাল বিলে, কেউ কেউ নদ-নদীতে আবার কেউ কেউ সাগরে মাছ ধরেন। এদের মধ্যে সমুদ্রে মৎস্য আহরণকারী ৭৯৫ টি পরিবার দু’একের মধ্যেই ৫৬ কেজি করে চাল পাবে।

ইতোমধ্যে ডিও হয়ে গেছে। এছাড়া ৮৩২৪টি পরিবারের তালিকা পাঠানো হয়েছে। তারা আগামী অর্থবছরের শুরুতে অর্থাৎ জুলাইয়ের ২০ তারিখের মধ্যে ৩০ কেজি করে চাল পেতে পারেন। তবে, সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল পরিবারগুলো এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মৎস্য প্রজনন মৌসুম হওয়ায় আমরা শুধু সাগরে মৎস্য আহরণকারীদের জন্য সহায়তা দিয়ে থাকি। সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল পরিবারগুলোর কথা বনবিভাগ বলতে পারবে। নিজেদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে শ্যামনগরের পানখালী এলাকার জেলে সরোজ বৈদ্য বলেন, সুন্দরবনে মাছ, কাঁকড়া আহরণ করেই আমাদের চলে। তিন মাস পাস বন্ধ থাকবে। এক সপ্তাহ যেতে পারেনি, বনজীবী পরিবারগুলোয় সংকট দানা বাধতে শুরু করেছে। কেউ কেউ কোবাদক, কৈখালি, কদমতলা ও অন্যান্য ফরেষ্ট অফিসের সাথে যোগাযোগ করে বনে প্রবেশ করে মাছ কাঁকড়া ধরে কোন রকম খেয়ে পরে বেচে আছে। দাতিনাখালী গ্রামের শফিক বলেন, সুন্দরবনে পাস বন্ধ। ডাঙায়ও কাজ নেই। বেকার বসে আছি। সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। বাচ্চাদের জন্য ওষুধ পত্রও জোটাতে পারছি না। চুরি করে বা বন বিভাগের সাথে চুক্তিতে বনে গেলে কোন কোন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ধরে মামলা দিচ্ছে কি করে পরিবার পরিজন নিয়ে বেচে থাকব ।
গাবুরা ইউনিয়নের ৯নং সোরা গ্রামের ইউনুচ শেখসহ আরো কয়েকজন জেলে বাওয়ালী জানান, আমরা বাপ-দাদার আমল থেকে বন করে খাই। পাস পারমিট বন্ধ করে দেওয়ায় এখন খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। সরকারি সুযোগ-সুবিধাও পাচ্ছি না। বনজীবী পরিবারগুলোকে সরকারি সহায়তা দেওয়া না হলে না খেয়ে মরতে হবে। একইভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে সুন্দরবন কেন্দ্রিক পর্যটনের সাথে জড়িতরাও। এ প্রসঙ্গে নীলডুমুর ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম বলেন, তিন মাস সুন্দরবনে প্রবেশ নিষেধ। জেলে বাওয়ালী পর্যটক কেউই সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবে না। তাই জেলে বাওয়ালীদের সাথে ট্রলার মালিক ও শ্রমিকদেরও দুর্দিন চলছে। কারণ এখানকার ট্রলারগুলো শুধুই পর্যটকদের জন্য। এমতাবস্থায় জেলে বাওয়ালী পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সরকারি সহায়তা প্রদানের দাবি জানান তিনি। এব্যপারে সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এমএ হাসান বলেন, সরকারী নিষেধাজ্ঞার কারনে সব ধরনের নৌযান ও জেলে প্রবেশ নিষিদ্ধ রয়েছে। কেউ অবৈধ ভাবে প্রবেশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সুন্দরবনে মাছ কাঁকড়া ধরার দাবীতে জেলে পরিবারগুলো কয়েকবার মানববন্ধন করে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্বরকলিপি প্রদান করেছে।


Comments are closed.

ইমেইল: arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com