April 27, 2024, 6:07 am
চার মামলায় জেলা ছাত্রলীগের বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমান সাদিকের রিমান্ড শুনানি আজ বৃহস্পতিবার। গত রবিবার দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাদিককে হাজির করলে বিজ্ঞ বিচারক শুনানির জন্য এ দিন ধার্য করেন। মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে, আশাশুনি ও সদরের দুইজন জনপ্রতিনিধির দায়েরকৃত পর্ণোগ্রাফী আইনে ২টি মামলা, অস্ত্র ও মাদক আইনের দুটিসহ মোট ৪টি মামলা।আদালতের অফিসার ইনচার্জ অমল রায় নিশ্চিত করেন। সাতক্ষীরা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-১ এর বিজ্ঞ বিচারক রেজানুজ্জামানের আদালতে এই শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।পুলিশী রিমান্ডে সাদিকের কাছ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে তার অপরাধ জগতের চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিকাশের ২৬ লাখ টাকা ছিনতাই মামলার মাস্টার মাইন্ড সাদিকের সহযোগীদের নাম পরিচয় ইতোমধ্যে বেরিয়ে আসলেও তাদের অনেকেই ধরা ছোঁয়ার বাইরে। নারীকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, রাজনীতিক, জনপ্রতিনিধি ও উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের নগ্ন ভিডিও তৈরি করে ফাঁদে ফেলে ব্লাকমেইল করে গোনে গোনে টাকা আদাইয়ের সাথে জড়িতদের নাম ও পরিচয় বেরিয়ে আসতে পারে সাদিকের রিমান্ডে।এছাড়া ছিনতাই, চাঁদাবাজি, সোনার চালান লুটের তথ্যও বেরিয়ে আসতে পারে পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে। বে-আইনী অস্ত্রের উৎস ও অস্ত্র কোথায় রেখেছে তাও বেরিয়ে আসতে পারে বলে মনে করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। বেরিয়ে আসতে পারে কতজনকে ফাঁদে ফেলে ভিডিও তৈরি করে কি পরিমাণ টাকা আদায় করেছিলো সে তালিকাও। সুমাইয়া আক্তার শিমুকে যে ডিভাইস দিয়ে ভিডিও করানো হতো সে ডিভাইসের উৎস কোথায় সেটিও বেরিয়ে আসতে পারে পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে। এছাড়া রিমান্ডে মাদকের সাথে সংশ্লিষ্টদের নাম-ঠিকানাও পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এদিকে, বিকৃত মানসিকতা সম্পন্ন হিং¯্র বর্বর প্রকৃতির এই সিন্ডিকেট সদস্য সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবির ‘আমার এমপি’র এ্যাম্বাসেডর, জয়যাত্রা টেলিভিশনের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি আকাশ ইসলাম, সদর আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবির নিকট আত্মীয় জেলা ছাত্রলীগের বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমান সাদিক, টোপ হিসেবে ব্যবহার করে নগ্ন ভিডিও বানিয়ে ঐ ভিডিওকে টাকা ইনকামের মেশিন বানানোর মামলায় গ্রেপ্তারকৃত শিমু ইতোমধ্যে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। শিমু কমপক্ষে ৮জনের নাম প্রকাশ করেছে। এই ৮জনের মধ্যে জয়যাত্রা টেলিভিশনের আকাশ, অন্তর মাল্টিমিডিয়ার তুহিন, সংগ্রাম টাওয়ারের তুহিন, বাংলাদেশ প্রতিদিনের মনি, সাদিকের পাতানো চাচা মিলন, দীপ ও রুমনের নাম রয়েছে। শিমু এই মামলার বাদী ছাড়াও আরো ৩/৪ জনের সাথে সে মেলামেশা করে গোপন ডিভাইসে ভিডিও করে তা সাদিকের কাছে এনে দিয়েছে বলে স্বীকার করেছে।এরআগে, গত ১৭ ডিসেম্বর ঢাকার কলাবাগান এলাকা থেকে সুমাইয়া আক্তার শিমুসহ সৈয়দ সাদিকুর রহমান সাদিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন সাতক্ষীরা আদালতে হাজির করলে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিলাস মন্ডলের আদালতে ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে কালিগঞ্জের পাওখালিতে ছিনতাইয়ের ২৬ লাখ টাকার ১৫ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়ার কথা স্বীকার করে। ওইদিন তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। বহু অপকর্মের মাস্টার মাইন্ড সাদিককে ২২ডিসেম্বর রিমান্ড শুনানির জন্য আদালতে হাজির করলে ২৬ ডিসেম্বর ফের দিন নির্ধারণ করা হয়।এদিকে বিকাশের ২৬ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুলিশি অনুসন্ধান শেষে সরাসরি জড়িত সাইফুল ও দ্বীপকে আটক করে। তাদের নিয়ে ৩০ নভেম্বর শহরের বাইপাস সড়কের বকচরা এলাকায় অস্ত্র উদ্ধারে গেলে পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে সাইফুল ও দ্বীপ নিহত হয়। এসময় দুটি অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর ৪ডিসেম্বর জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমানকে দল ও পদ থেকে বহিস্কারের ঘোষণা দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সম্পাদক। এরপর ১৬ ডিসেম্বর শহরের মুনজিতপুরে অভিযান চালিয়ে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১৬৭ বোতল ফেন্সিডিলসহ সাদিকের দুই সহযোগি পিচ্চি রাসেল ও মোস্তাফিজুর রহমান বাবুকে আটক করে। এসব মামলায় সাদিককে আসামী করা হয়।১৫ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা সদরের ও আশাশুনির পৃথক দুইজন জনপ্রতিনিধি সাতক্ষীরা সদর থানায় পর্ণোগ্রাফী আইনে দুটি মামলা করেন। সৈয়দ সাদিকুর রহমান সাদিকসহ তার একাধিক কিশোর গ্যাংএর সদস্যদের আসামী করা হয়। এতে সাদিক নারী দিয়ে ওই জনপ্রতিনিধিদের শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও করে ২০ লাখ ও ১৫ লাখ টাকা করে চাঁদা দাবী করেন। এতে সে ৫ লাখ ও ৪ লাখ টাকা করে চাঁদা আদায় করেছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। তার নামে মোট ৬টি মামলার মধ্যে বৃহস্পতিবার ৪টি মামলার রিমান্ড শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। সাদিক তার সহযোগি আকাশ ইসলাম ও নারী সদস্য শিমু ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে এসব কথা স্বীকার করেছে।