April 27, 2024, 10:36 am

সাংবাদিক আবশ্যক
সাতক্ষীরা প্রবাহে সংবাদ পাঠানোর ইমেইল: arahmansat@gmail.com
শিরোনাম:
জুম্মার নামাজে মুসল্লিদের দোয়া চাইলেন মশিউর রহমান বাবু সাতক্ষীরায় অপহৃত ৮ম শ্রেণীর ছাত্রীকে উদ্ধার করলো পুলিশ সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে পৃথক বার্ন ইউনিট না থাকায় জরুরী সেবা ঝুঁকিতে এসিড দগ্ধ ও পোড়া রুগীরা দাবদাহ উপেক্ষা করে ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষকরা সাতক্ষীরায় সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলে নিহত জনপ্রিয়তার শীর্ষে নতুন মুখ প্রভাষক সুশান্ত কুমার মন্ডল আশাশুনীতে বাপ্পী সীড হাউজ দোকান উদ্বোধন দক্ষিণ খুলনার অস্ত্র ও মাদকের গডফাদার ওজিয়ার গ্রেফতার সাতক্ষীরায় টিটিসিতে ৭৫ দিন মেয়াদী দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণের মতবিনিময় তীব্র তাপদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত, বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ
জেলায় রাতের আঁধারে চলছে অতিথি পাখি শিকার

জেলায় রাতের আঁধারে চলছে অতিথি পাখি শিকার

বাঙালি অতিথিপরায়ণ জাতি হিসেবে সুপরিচিত সারা বিশ্বে। শীতকাল শুরু হতেই অতিথি পাখি ভিনদেশ থেকে আসতে শুরু করে আমাদের দেশে আর তাদের নিয়ে আনন্দে মেতে উঠি আমরা। সীমান্তবর্তী সাতক্ষীরা অঞ্চল ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলাগুলোতে অতিথি পাখি এসে আশ্রয় নেয়। হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এসব পাখি আমাদের দেশে আসে শুধু আশ্রয় নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য। এদের আমাদের দেশে আশার মূলে রয়েছে শীত প্রধান দেশে শীতের মাত্রা এতটা তীব্র থাকে যে তা এই পাখিরা সহ্য করতে পারে না। হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে তারা এদেশে এসে নতুন পরিবেশ সৃষ্টি করে। শীত প্রধান দেশে তীব্র শীত দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খাবারের অভাবও দেখা দেয়। শীতে উত্তর মেরু, সাইবেরিয়া, ইউরোপ ও এশিয়ার কিছু অংশে প্রবল তুষারপাত হয়ে থাকে।তীব্র তুষারপাতে এসব পাখি নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় নিরাপদ আশ্রয় খোঁজে এবং বাংলাদেশের মতো অপেক্ষাকৃত কম শীতের দেশে এসে উপস্থিত হয়। শহরের কাছেই গ্রাম আর গ্রামের পাশেই বিল ও জলাশয়। বিলের মধ্যে মৎস্য ঘের। ঘেরের মাঝে পানিতে বাঁশ পুতে রেখে ফাঁস জাল টানিয়ে রাখা। আর একটু সরে গিয়ে একাধিক জায়গায় লোহার চিকন তার দিয়ে ফাঁদ পেতে রাখা। কূয়াশা ঢাকা ভোরে পরিযায়ী পাখিরা এবং রাতে রাতচরা পাখি ফাঁদে আটকে যায়। দূরে ওৎ পেতে থাকা শিকারীরা ফাঁদে আটকানো পাখি ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। ঠিক এইভাবে ফাঁস জাল, সাউন্ড সিস্টেম ও বিশেষ ফাঁদ পেতে পাখি শিকার চলছে সাতক্ষীরার বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন বিল অঞ্চলে।এ কারণে সাতক্ষীরার জলাশয়-বিলগুলো এখন অতিথি পাখির জন্য অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। পাখি শিকার করছে সদরের ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের গোয়ালপোতা বিল, খড়িয়াডাঙা বিল, ধুলিহর এলাকার আছানডাঙা বিল, কোমরপুর বিল, এল্লারচর, বকচরা। আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলার ঘেরগুলোসহ সীমন্তবর্তী সকল বিলে বিভিন্ন সিস্টেমে পাখি ধরেছে অসাধু ও প্রকৃতির কিছু শত্রুরা। অন্যদিকে, তালা উপজেলার নওয়াপাড়া, ধলবাড়ীয়া, কলিয়া ও লক্ষণপুর গ্রামের মাঝখানে বাগের বিল অবস্থিত। কলিয়া গ্রামের উত্তর-পশ্চিমে ও লক্ষণপুর গ্রামের দক্ষিণ-পশ্চিমে বাগের বিলের অন্তত চারটি জায়গায় পাখি ধরার ফাঁস জাল ও লোহার তারের বিশেষ ফাঁদ পেতে পরিযায়ী ও রাতচরা পাখি ধরতে দেখা গেছে ইতোপূর্বে। তালা উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের টিআরএম প্রকল্পের পাখিমারা মধূখালি বিলে কারেন্ট জাল টানিয়ে পাখি শিকার করছে।বন্যপ্রাণি (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এ উল্লেখ রয়েছে, কোন ব্যক্তি পাখি বা পরিযায়ী পাখি শিকার অথবা হত্যা করলে অপরাধ বলে গণ্য হবে। এ অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ এক বছর পর্যন্ত কারাদন্ড অথবা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকার অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। দন্ডিপ্রাপ্ত ব্যক্তি অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদন্ড, দুই লাখ টাকার অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। এই অনুচ্ছেদে আরও উল্লেখ রয়েছে, কোন ব্যক্তি পাখি বা পরিযায়ী পাখির ক্রয়-বিক্রয় বা পরিবহন করলে সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত কারাদন্ড অথবা সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে দন্ড দ্বিগুণ হবে। সংবিধানে এত গুরুত্বপূর্ণ আইনের উল্লেখ থাকলেও  বাস্তবতায় তার কোন প্রয়োগ নেই বললেও চলে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন যদি পরিযায়ী পাখি ও প্রকৃতি রক্ষায় সোচ্চার হয় তবেই প্রকৃতিকে বাঁচানো সম্ভব বলে মনে করছেন প্রকৃতি কর্মীরা।এদিকে, সাতক্ষীরায় পাখি ও প্রাণ প্রকৃতি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন সেচ্ছাসেবী সংঘটন ‘সেভ ওয়াইল্ড লাইফ’। এই সংগঠনটি পাখি শিকার বন্ধে অনবরত কাজ করে চলেছে। প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে তারা পাখি শিকারী ও পাখি ব্যবসায়ীদের আইনী শাস্তি বাস্তবতায়সহ নানাবিধ কাজ করছেন। সেভ ওয়াইল্ড লাইফের সভাপতি ইমরান হোসাইন বলেন, প্রতি বছর শীত ঋতুতে পরিযায়ী পাখিরা আমাদের প্রকৃতিকে সমৃদ্ধ করছে। এরা এদেশের জলবায়ুর জন্য আশির্বাদ স্বরুপ। এরা বেঁচে থাকার তাগিদে অতিথি হয়ে আমাদের দেশে আসে। দু:খজনক, একশ্রেণির নির্মম-নিষ্ঠুর মানুষ প্রকাশ্যে বা কখনো গোপনে এয়ারগান, ফাঁসজাল, খাঁচা ও ফাঁদ পেতে পরিযায়ী ও দেশীয় প্রজাতির পাখি ধ্বংস করে চলেছে। শিকারীদের হাত থেকে পাখিদের রক্ষায় পুলিশ ও প্রশাসনকে প্রচলিত আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে তবেই পরিযায়ী পাখি নিধন বন্ধ সম্ভব।এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, পরিযায়ী পাখি শিকারের বিষয়ে আজকে জেলার সকল ইউএনও’কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জেলার সকল থানার ওসিকে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তিনি আরও জানান, উল্লে¬খিত বিলগুলোতে প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া, যারা পাখি শিকার করেন তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা। সকল পাখি শিকারীকে বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইনের আওতায় আনা হবে।


Comments are closed.

ইমেইল: arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com