April 27, 2024, 10:04 am

সাংবাদিক আবশ্যক
সাতক্ষীরা প্রবাহে সংবাদ পাঠানোর ইমেইল: arahmansat@gmail.com
শিরোনাম:
জুম্মার নামাজে মুসল্লিদের দোয়া চাইলেন মশিউর রহমান বাবু সাতক্ষীরায় অপহৃত ৮ম শ্রেণীর ছাত্রীকে উদ্ধার করলো পুলিশ সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে পৃথক বার্ন ইউনিট না থাকায় জরুরী সেবা ঝুঁকিতে এসিড দগ্ধ ও পোড়া রুগীরা দাবদাহ উপেক্ষা করে ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষকরা সাতক্ষীরায় সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলে নিহত জনপ্রিয়তার শীর্ষে নতুন মুখ প্রভাষক সুশান্ত কুমার মন্ডল আশাশুনীতে বাপ্পী সীড হাউজ দোকান উদ্বোধন দক্ষিণ খুলনার অস্ত্র ও মাদকের গডফাদার ওজিয়ার গ্রেফতার সাতক্ষীরায় টিটিসিতে ৭৫ দিন মেয়াদী দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণের মতবিনিময় তীব্র তাপদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত, বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ
জয় হোক সকল কন্যাশিশুর

জয় হোক সকল কন্যাশিশুর

রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে রোকেয়া বেগম। পাঁচ বছর আগে রোকেয়ার বিয়ে হয় পাশের গ্রামের শহিদ উদ্দিনের সাথে। রোকেয়ার দরিদ্র বাবা অভাবের কারণে মাত্র ১৫ বছর বয়সে তার বিয়ে দেন। শহিদ উদ্দিন ক্ষেতমজুর। বিয়ের প্রথম বছরের মাথায় রোকেয়া কন্যাসন্তানের জন্ম দেয়। দ্বিতীয়বারের মতো কন্যা সন্তান প্রসব করার পর স্বামী, শাশুড়ি, আত্মীয়-স্বজনসহ সবারই মন খারাপ। সকলের আচার-আচরণ, ভাবভঙ্গি দেখে মনে হলো কন্যাসন্তান জন্ম দেয়ায় রোকেয়া পরিবারে অমঙ্গল বয়ে এনেছে। রোকেয়ার প্রতি স্বামী, শাশুড়ি আর শ^শুর বাড়ির লোকজনদের অবহেলা দিন দিন বাড়তে লাগল। একদিন শারীরিক নির্যাতন করে দুই কন্যাসন্তানসহ রোকেয়াকে শ্বশুরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় তার স্বামী ও শ্বাশুড়ি। সন্তান সৃষ্টিকর্তার আশির্বাদ হলেও কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়াই যেন কাল হলো রোকেয়ার।

আমাদের দেশে এ ধরণের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষেত্রে একজন নারীর কোনো ভূমিকা নেই এবং এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। অথচ কোনো অন্যায় না করে আমাদের দেশে হাজার হাজার নারী কন্যাসন্তান জন্ম দেয়ায় অত্যন্ত অমানবিকভাবে মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এর জন্য অজ্ঞতা, অশিক্ষা, কুসংস্কার এবং নারীর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা অনেকাংশে দায়ী।

শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-গরিব নির্বিশেষে আমাদের সমাজে অনেক ক্ষেত্রেই আমরা লক্ষ্য করে থাকি কন্যাশিশুর প্রতি অন্যরকম দৃষ্টিভঙ্গি ও বৈষম্যমূলক আচরণ জয় হয় এবং তা পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরেই। কন্যাশিশুর চাইতে ছেলেশিশুকে একটু বাড়তি খাবার খাওয়ানো, কন্যাশিশুর প্রতি একটু বেশি বাড়াবাড়ি, যেকোনো অবদার পূরণেও কন্যাশিশুকে কম গুরুত্ব দেয়া এগুলো খুব স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে দেখতে পাওয়া যায়। জন্মের পর থেকেই এক ধরণের অবজ্ঞা ও অযৌক্তিক বিধিনিষেধের বেড়াজালে কন্যাশিশুরা বেড়ে ওঠে যদিও অবস্থা এখন আর তেমন নেই। কন্যশিশুর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু হয় মূলত পরিবার থেকেই। অনেক বাবা-মা ধরেই নেন মেয়েকেতো পরের ঘরে দিতেই হবে, তাকে এতো লেখাপড়া ও আদর-যতœ করার প্রয়োজন নেই।

বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। তাই দেশের ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়নের জন্য পুরুষের পাশাপাশি নারীর স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি। আর উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন বৈষম্যহীন পারিবারিক ও সামাজিক ব্যবস্থা, যেখানে কন্যাশিশুরা নিরাপদ ও স্বাধীনভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ পাবে। কন্যাশিশুদের জন্য সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব, যদিও আমাদের বাস্তব অবস্থা একটু ভিন্ন ধরণের। কারণ বিদ্যমান অসম ব্যবস্থায় বিরাট সংখ্যক কন্যাশিশু বেড়ে উঠছে নানা বঞ্চনা ও বৈষম্যের মধ্য দিয়ে এবং তা পরিবার থেকে শুরু করে সমাজ অবধি। বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি জরিপের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১০-১২ বছর বয়সী কিশোরদের তুলনায় কিশোরীরা শকতরা ৮ ভাগ কম ক্যালরি পায়, ১৩-১৫ বছর বয়সী কিশোরী শতকরা ১৮ ভাগ কম ক্যালরি পায়। পুষ্টির এ বঞ্চনা অধিকাংশ কিশোরীর স্বল্প উচ্চতা ও স্বল্প ওজনের কারণ।

মানবজাতিকে টিকিয়ে রাখার গুরুত্বপূর্ণ কাজটি নারী করে থাকে অথচ তাদের জীবন প্রক্রিয়া কন্টকাকীর্ণ। অনেক পরিবারে কন্যাশিশুর পর্যাপ্ত পুষ্টিচাহিদা পূরণের উদ্যোগ পর্যন্ত নেওয়া হয় না। কিন্তু শিশুর মেধার বিকাশ ছোট বেলাতেই হয়। কিশোরী বয়সে তার মুক্ত চিন্তা ও স্বাধীন চলাফেরার সুযোগ থাকা প্রয়োজন। তার অনুভূতিগুলো প্রকাশের সুযোগ থাকা দরকার। পরিবারে একটি কন্যাশিশু ও তার সমবয়সী একটি ছেলেশিশুর মতো আদর-যতœ দিয়ে লালন পালনের প্রতি সকল মা-বাবাকেই সচেতন ও সচেষ্ট থাকতে হবে। তা না হলে এর প্রভাব পড়বে ভবিষ্যত প্রজন্মের ওপর।

ইউনিসেফ-এর প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ৬৬ ভাগ কিশোরী বাল্যবিয়ের শিকার হয়। এদিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয় সর্বোচ্চ। ফলে প্রতি তিন জনের মধ্যে একজন কিশোরী অল্প বয়সেই মা হয়, যা মাতৃমৃত্যু ও স্বল্প ওজনের শিশু জন্মের অন্যতম প্রধান কারণ।

টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত নারী-পুরুষের সমতা হলেও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। কর্মক্ষেত্রে নারীর মজুরি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরুষের চেয়ে অনেক কম। এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের নারীরা ৪৫ রকম গৃহস্থালি কাজের সঙ্গে যুক্ত। অথচ নারী তার অবদানের স্বীকৃতিটুকু পর্যন্ত পায় না।

বর্তমান সরকার নারীবান্ধব সরকার। সরকারের বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপের ফলে প্রাথমিক শিক্ষায় কন্যাশিশুদের অগ্রগতি ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও নারী শিক্ষার প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, পারিবারিক কাজের দায়ভার, নিরাপত্তাহীনতা, বাল্যবিয়ে ইত্যাদি কারণে এখনও নারীরা মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চতর শিক্ষায় পিছিয়ে রয়েছে। এমনকি পরিবার অর্থনৈতিক সংকটে পড়লে, মেয়েশিশুটির লেখাপড়াই বন্ধ করে দিয়ে ছেলেশিশুদের লেখাপড়া চালিয়ে নেয়ার প্রবণতা এখনও দৃশ্যমান। অথচ কন্যাশিশুটি পরিবারে যে শ্রম ও মেধা দিয়ে সাহায্য করে, তার হিসাব কেউ রাখে না। তারা মেধাবী নয়, সৃষ্টিশীল নয়, এমন নানা অজুহাতে অনেক সময় যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পরিবার কন্যাশিশুদের তাদের প্রাপ্ত সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে।

শিক্ষার মাধ্যমে নারীর জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি করে মানব সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কন্যাশিশুর প্রতি বৈষম্য ও বঞ্চনা দূরীকরণের জন্য সরকার শিক্ষাকে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হিসেবে গ্রহণ করেছে। সে লক্ষ্যে সরকার বিগত বছরগুলোতে ছাত্রী ও নারীদের শিক্ষায় অংশগ্রহণ উৎসাহিত করার জন্য নারীবান্ধব কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। দেয়া হয়েছে মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বৃত্তি এবং উপবৃত্তি। ফলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলসমূহে মেয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি এবং জেন্ডার সমতা নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করেছে। শিক্ষা নারীর ক্ষমতায়নের চাবিকাঠি। শিক্ষা কন্যাশিশুর উন্নয়ন, বাল্যবিবাহ রোধ এবং শিশুমৃত্যুর হার কমানোর নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।

কন্যাশিশু ও নারীকে অবজ্ঞা, বঞ্চনা ও বৈষম্যের মধ্যে রেখে কখনোই একটি ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। এই বাস্তবতায়, ক্ষুধা-দারিদ্র্য, বৈষম্যমুক্ত এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে, নারী ও কন্যাশিশুর শিক্ষার প্রসার অত্যন্ত জরুরি। সেটি শুরু করতে হবে কন্যাশিশুর জন্য সর্বোচ্চ বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে। পুষ্টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সকল ক্ষেত্রে তাদের জন্য সমসুযোগ ও সমঅংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তাদেরকে দক্ষ মানব সম্পদে পরিণত করতে হবে। আর এই মানবসম্পদ গড়ার প্রক্রিয়াটি শুরু করতে হবে পরিবারের কন্যাশিশুর জন্মলগ্ন থেকেই। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না আজকের কন্যাশিশুই আগামীদিনের নারী এবং একজন মা। তাই সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য কন্যাশিশুর অধিকার নিশ্চিত করা সময়ের এবং অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার গুণগতমানের অনিবার্য দাবি।


Comments are closed.

ইমেইল: arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com