April 27, 2024, 9:11 am
উৎসবমুখর পরিবেশে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে। ১২ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন সকাল দশটায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। সম্মেলনে সকাল থেকে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে খ- খ- মিছিল নিয়ে শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে উপস্থিত হন নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। হাতে প্লাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন নারী-পুরুষ সবাই শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কের সবুজ চত্ত্বরে মিলিত হন। দূর-দূরান্ত থেকে বাস, মিনিবাস, ট্রাক, পিকআপ, ইজিবাইক, গ্রামবাংলা ও মোটরসাইকেল যোগে আসেন নেতা-কর্মীরা। গোটা শহর জুড়ে বিরাজ করে উৎসবমূখর পরিবেশ। পার্কমূখী সড়কগুলোতে এসময় জন¯্রােত লক্ষ্য করা যায়। তিল ধারণের ঠাঁই ছিলো না শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কের সবুজ চত্ত্বরে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে তোলেন সম্মেলনের ময়দান। শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কের সবুজ চত্ত্বরের বিশাল প্যান্ডেল সাজানো হয় রং-বেরংয়ের ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে। শব্দ তরঙ্গে প্রচারিত হয় নেতৃবৃন্দের দুর্নীতি বিরোধী, সন্ত্রাস বিরোধী ও জঙ্গিবিরোধী উদ্দীপ্তময় বক্তব্য।আলোচনা সভা শুরু হয় সকাল সাড়ে ১২টায়, চলে বিকাল তিনটা পর্যন্ত। সাতক্ষীরা শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে শহিদ মিনার বেদিমূলে তৈরি করা হয় বিশাল মঞ্চ। শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কের প্রবেশ দ্বারে নির্মাণ করা হয় তিনটি বিশাল তোরণ। গোটা প্যান্ডেল জুড়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের ছবি সম্বলিত সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদ প্রত্যাশী নেতাদের ছবি শোভা পায়। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে যায় গোটা এলাকা। কাউন্সিলের সাফল্য কামনা করে ফেস্টুনে ফেস্টুনে তুলে ধরা হয়েছে প্রিয় নেতাদের ছবি ও পরিচিতি। বিলবোর্ডে জানানো হয়েছে মুজিবীয় শুভেচ্ছা।সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনকে ঘিরে শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্ককে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে দেওয়া হয়। পার্কের প্রত্যেকটি প্রবেশ পথে নিরাপত্তাকর্মীদের অবস্থান ও শৃঙ্খলা লক্ষ্য করা যায়। পার্ককে সাজানো হয় অপরূপ সৌন্দর্যের মোড়কে। সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামের পরিচালনায় এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য পীযুস কান্তি ভট্টাচার্য। প্রধান অতিথি ও বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান।বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগাঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন, শ্রম ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কার্যনির্বাহী সদস্য এসএম কামাল হোসেন, এড. আমিরুল আলম মিলন ও মারুফা আক্তার পপি। এছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, এসএম জগলুল হায়দার, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবুসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি ও নেতারা উপস্থিত ছিলেন।প্রধান অতিথি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। নতুন বছরে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই উপহার দিয়েছেন শেখ হাসিনা। বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা, কৃষিতে ভর্তুকি, শিক্ষা ভাতা, উপবৃত্তি, চিকিৎসাভাতা সব কিছুই শেখ হাসিনার অবদান। তিনি আরও বলেন, সাতক্ষীরাকে ২০১৩ সালে বিএনপি-জামাত রক্তে রঞ্জিত করেছিলো। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নির্মমভাবে হত্যা করেছিলো। বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নি সংযোগ ও ভাঙচুর করেছিলো। গাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছিলো। রাস্তা কেটে, গাছ কেটে বিচ্ছিন্ন করেছিলো যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। তাই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কলঙ্ক মুছে ফেলতে হবে। রুখে দাঁড়াতে হবে সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে। অনুপ্রবেশকারী, টেন্ডারবাজ ও চাঁদাবাজদের দলে কোন জায়গা হবেনা।আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি বলেন, সাতক্ষীরার সন্তানদের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও প্রমোশন হয়না। সাতক্ষীরাবাসিকে আজও শুনতে হয় সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের অপবাদ। সাতক্ষীরায় বাড়ি বললেই সবাই মনে করে ওরা জামাত, ওরা জঙ্গি, ওরা সন্ত্রাসী। কিন্তু এই সাতক্ষীরার শ্যামনগরে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে সবার আগে হানাদার মুক্ত হয়। এই সাতক্ষীরার ইতিহাস ঐতিহ্য অনেক গর্বের। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সাতক্ষীরাবাসির উন্নয়নে মেডিকেল কলেজ, বাইপাস সড়ক, রেল লাইন, পর্যটন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন উন্নয়ন উপহার দিয়েছেন। এখনো সাতক্ষীরায় অনেক কাজ বাকী আছে। সাতক্ষীরায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি এখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। সাতক্ষীরার উন্নয়নে সকল ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।শ্রম ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সারা বছর মানুষের পাশে থাকতে হবে। ভালোবাসা দিয়ে মানুষের মন জয় করতে হবে।কার্যনির্বাহী সদস্য এসএম কামাল হোসেন বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। শেখ হাসিনার সরকার সন্ত্রাস বিরোধী সরকার। বঙ্গবন্ধু কন্যার সরকার দুর্নীতি বিরোধী সরকার। শেখ হাসিনার সরকার শান্তি ও সমৃদ্ধির সরকার। তাই আগামী দিনে সকল ভেদাভেদ ভুলে আবারও শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে হলে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।