April 27, 2024, 7:44 am
কারখানা খোলার ঘোষণা শুনে গত শুক্রবার রাতে নাটোর থেকে রওনা দেন নারায়ণগঞ্জের একটি পোশাক কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল হোসেন। বাস চলাচল বন্ধ, তাই মরিয়া হয়ে ট্রাকে চড়ে বসেছিলেন তিনি। তিন দফা ট্রাক বদল করে গতকাল শনিবার সকালে পৌঁছান সাভারের নবীনগরে। এরপর মোটরসাইকেলে আমিনবাজার এবং সেখান থেকে হেঁটে গাবতলী পর্যন্ত আসেন।
শুধু আবুল হোসেনই নন, শুক্রবার রপ্তানিমুখী কারখানা খোলার ঘোষণার পর বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। কেউ ট্রাকে, কেউ অটোরিকশায়, কেউ মোটরসাইকেলে, কেউ ভ্যানে করে দূরের পথের যাত্রা করেন। দিনভর শ্রমিকের এই ভোগান্তির পর গতকাল সন্ধ্যা সাতটার পর সরকার জানায়, শ্রমিকদের চলাচলের জন্য আজ রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত বাস, লঞ্চসহ গণপরিবহন চলবে।
এ ঘটনায় সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমন্বয়হীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দায়িত্বশীলদের দূরদর্শিতার অভাব প্রকট। কারখানা খুললে শ্রমিকের যে ঢল নামে, তা গত বছরই দেখা গেছে। সবকিছু বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল। শ্রমিকেরা যেভাবে গাদাগাদি করে চলাচল করেছেন, তাতে করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ভোগান্তির পাশাপাশি শ্রমিকদের বাড়তি ব্যয়ও করতে হয়েছে। পোশাক কারখানার কর্মী দুই বোন মরিয়ম ও স্বপ্না কারখানায় যোগদান করার নির্দেশনা পেয়ে ময়মনসিংহের ফুলপুরে নিজেদের বাড়ি থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন শুক্রবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে। পিকআপ ভ্যান, রিকশা, পায়ে হাঁটাসহ নানাভাবে টঙ্গীর আবদুল্লাহপুরে পৌঁছান গতকাল সকাল ১০টার দিকে। দুজনের খরচ হয় ১ হাজার ৬৬০ টাকা।
কথা বলার একপর্যায়ে চরম বিরক্তি নিয়ে স্বপ্না বলেন, ‘আপনারা এসব লেইখখা কী করবেন? আমরা গরিব মানুষ, আমগোর কষ্ট সারা জীবনই থাকব। এক দিকে কারখানার চাপ, অন্যদিকে ভোগান্তি। আমরা যামু কই?’
অনেক শ্রমিককে মুঠোফোনে বার্তা পাঠিয়ে অথবা ফোন করে ঢাকায় আসতে বলা হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গাবতলীতে কথা হয় রত্না বেগম নামের ৩৫ বছর বয়সী এক নারীর সঙ্গে। তিনি কাজ করেন নারায়ণগঞ্জ ইপিজেড এলাকার একটি পোশাক কারখানায়। রত্না বেগম বলেন, শুক্রবার রাতে কারখানা থেকে মুঠোফোনে জানানো হয়, রোববার কাজে যোগ দিতে হবে।
সকাল ১০টার মধ্যে কারখানায় থাকতে হবে। ভোরে তাঁর ভাই মোটরসাইকেলে করে পাটুরিয়া ঘাটে নামিয়ে দিয়ে যান। ঘাট পার হয়ে দুই হাজার টাকায় একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে নবীনগর আসেন। সেখান থেকে মোটরসাইকেলে ৪০০ টাকা দিয়ে আমিনবাজার পর্যন্ত আসেন। তারপর হেঁটে আসেন গাবতলীতে।
গতকাল সকাল ১০টার দিকে গাবতলীতে গিয়ে দেখা যায় ঢাকামুখী মানুষের ঢল। আমিনবাজারের দিক থেকে গাবতলীর দিকে মানুষ হেঁটে আসছিলেন। সেখান থেকে কেউ হেঁটে, কেউ রিকশায় আবার কেউ মোটরসাইকেলে করে গন্তব্যের পথ ধরেন। শুধু ঢাকায় প্রবেশই নয়, রাজধানী থেকে সাভারের দিকেও বহু মানুষকে ছুটতে দেখা যায়।
ফেরিতে গাদাগাদি করে পদ্মা পার: বিধিনিষেধের কারণে পদ্মা পারাপারে লঞ্চ, স্পিডবোট ও ট্রলার চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে গতকাল সকাল থেকে ঢাকামুখী জনস্রোতের প্রচণ্ড ভিড় হয় ফেরিগুলোতে। শিমুলিয়া ও পাটুরিয়া ঘাটে যেসব ফেরি আসে, সেগুলোতে যেন তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। এদিন মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া নৌপথে নয়টি ফেরি চলাচল করে। আটটি ফেরি চলে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে।
গণপরিবহন চলার অনুমতি: উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল রাত থেকে শ্রমিকদের জন্য বাস ও লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গত রাতে প্রথম আলোকে জানান, রোববার পর্যন্ত সারা দেশ থেকে শ্রমিকদের ঢাকা নিয়ে আসার জন্য বাস চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মাঠপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
একই সময় বিআইডব্লিউটিএর জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, শ্রমিকদের আনার জন্য শনিবার রাত থেকে রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সারা দেশে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পরে সরকারের এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়, শ্রমিক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাজে যোগদানের সুবিধার্থে রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত গণপরিবহন চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
Comments are closed.