April 27, 2024, 11:23 am

সাংবাদিক আবশ্যক
সাতক্ষীরা প্রবাহে সংবাদ পাঠানোর ইমেইল: arahmansat@gmail.com
শিরোনাম:
জুম্মার নামাজে মুসল্লিদের দোয়া চাইলেন মশিউর রহমান বাবু সাতক্ষীরায় অপহৃত ৮ম শ্রেণীর ছাত্রীকে উদ্ধার করলো পুলিশ সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে পৃথক বার্ন ইউনিট না থাকায় জরুরী সেবা ঝুঁকিতে এসিড দগ্ধ ও পোড়া রুগীরা দাবদাহ উপেক্ষা করে ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষকরা সাতক্ষীরায় সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলে নিহত জনপ্রিয়তার শীর্ষে নতুন মুখ প্রভাষক সুশান্ত কুমার মন্ডল আশাশুনীতে বাপ্পী সীড হাউজ দোকান উদ্বোধন দক্ষিণ খুলনার অস্ত্র ও মাদকের গডফাদার ওজিয়ার গ্রেফতার সাতক্ষীরায় টিটিসিতে ৭৫ দিন মেয়াদী দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণের মতবিনিময় তীব্র তাপদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত, বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ
দুবৃর্ত্তরা ধরা পড়ায় অপরাধ কমেছে শ্যামনগরে: গা ঢাকা দিয়েছে পান্ডারা

দুবৃর্ত্তরা ধরা পড়ায় অপরাধ কমেছে শ্যামনগরে: গা ঢাকা দিয়েছে পান্ডারা

রূবেল হােসেন:

মাত্র কিছুদিন আগেও সাতক্ষীরার গুরুত্বপুর্ণ উপজেলা শ্যামনগরে অপরাধ প্রবনতা মারাত্মকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। সাধারণ মানুষ তো দুরের কথা খোদ প্রশাসন পর্যন্ত তটস্থ ছিল উঠতি বয়সী কতিপয় দুবৃর্ত্তের নানান অপতৎপরতায়। চুরি, ছিনতাই, দখলবাঁজি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড আর মাদক বেঁচা কেনা থেকে শুরু করে ডাকাতির ঘটনাও ছিল নিত্যকার বিষয়।তবে সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশি তৎপরতায় এসব অপকর্মের সাথে জড়িতদের সিংহভাগ আইনের আওতায় চলে আসায় বর্তমানে শ্যামনগরে অপরাধ প্রবনতা দারুনভাবে কমেছে। সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসনের ভুমিকার প্রশংসা করে সুধী সমাজের প্রতিনিধিরা অপরাধীদের পান্ডাগুলোকেও আইনের আওতায় আনার জোরালো দাবি জানিয়েছে।শ্যামনগর সদর ইউনিয়নের পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন স্তরের সাধারণ মানুষ ও ভুক্তোভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এক সময়ে নিরবিচ্ছিন্ন শান্তির আধাঁর ছিল সীমান্তঘেঁষা উপকুলবর্তী এ উপজেলা। মাঝেমধ্যে দু’চারটি ডাকাতির ঘটনা (যা বহিরাগতরা সংঘটিত করতো) আর জায়গা জমি নিয়ে গোলযোগের বাইরে চাঁদাবাজি কিংবা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ছিল কল্পনারও অতীত। মাদকের বিকিকিনি আর গ্যাং ষ্ট্যার বাহিনীর তৎপরতাসহ “হেয়ারিং” প্রবনতার সাথে এ অঞ্চলের মানুষের কোন পরিচিতিই ছিল না।
কিন্তু ২০০০ সালের পর থেকে হঠাৎ করেই উঠতি বয়সী কিছু যুবক মাদক সেবনসহ দখলবাঁজির মত নানান অপকর্মে জড়িয়ে পড়লে ক্রমেই অশান্ত হতে শুরু করে শ্যামনগর। এসময় উপজেলা সদরসহ বংশীপুর, নুরনগর ও কালিঞ্চি এলাকার কিছু চিহ্নিত অপরাধী মটর সাইকেল চুরি, ছিনতাই, বনদস্যুদের লালন, অস্ত্রের যোগান দেয়ার মত গুরুতর অপরাধেও জড়িয়ে পড়ে।স্থানীয় কিছু মহা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠে পৃথক বেশ কয়েকটি মাদক বিক্রি সিন্ডিকেট। পুলিশের কিছু বিপদগামী সদস্যকে প্রভাবিত করে অপরাধীচক্রের সদস্যরা প্রবল দাপটে নিয়ন্ত্রণ নেয় সুন্দরবন তীরবর্তী এ শ্যামনগর উপজেলার গোটা অপরাধ জগতের।
ফলে এক সময়ের শান্তির আধাঁর হিসেবে পরিচিতি পাওয়া শ্যামনগর অপরাধ ও সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত হয়। যার কারনে আন্তঃ বাহিনী সংঘর্ষ, গ্যাং ষ্ট্যার বাহিনী অপতৎপরতা, দখলবাঁজি, চাঁদাবাজি, মাদকের বিস্তৃতি, সীমান্তপথে চোরাচালানসহ নানান ধরনের অপরাধ দিনকে দিন ডানা মেলতে শুরু করে শ্যামনগরে।
এসময় শ্যামনগর থানার ভিতর থেকে খোদ পুলিশ সদস্যের মটর সাইকেল চুরিসহ চন্ডিপুরস্থ ব্র্যাক অফিস এলাকা থেকে প্রকাশ্যে চার লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটে। মাদক স¤্রাজ্যে পরিণত হওয়া শ্যামনগর হয়ে ওঠে আন্তঃজেলা মটর সাইকেল ছিনতাই ও চুরি সিন্ডিকেটের গডফাদারদের আবাসস্থলে।আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সোর্স পরিচয় দিয়ে উপজেলা সদরের বাদঘাটা গ্রামের রেজাউল ইসলাম ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে গোটা শ্যামনগরের অপরাধ জগৎ।প্রায় বছর পনের রাম-রাজত্ব চালানোর পর বছর দুয়েক আগে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে শ্যামনগরের সন্ত্রাসের গডফাদারের স্বীকৃতি পাওয়া আলোচিত রেজাউল বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলে আবারও শান্তির সুবাতাস বইতে শুরু করে উপকুলীয় এ অঞ্চলে।
তবে বিধি বাম হওয়াতে বছর না ঘুরতেই আবারও শ্যামনগরের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে শুরু করে। রেজাউল এর অন্তর্ধানের পর তার সাঙ্গপাঙ্গরা কিছুদিন গা ঢাঁকা দিয়ে চললেও স্বল্প সময়ের ব্যবধানে পুনরায় তারা যথারীতি পুর্বেকার যাবতীয় অপকর্ম শুরু করে। কিছুদিন সবকিছু ঠিকঠাক চললেও হঠাৎ করেই শ্যামনগর সদরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা আবারও নুতনভাবে আত্মপ্রকাশকারী অপরাধীদের পদচারণায় অশান্ত হয়ে ওঠে।যার অংশ হিসেবে কয়েক মাস আগে নির্দিষ্ট চুক্তির বিনিময়ে দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার জনৈক আব্দুর রহিমের ঘের দখল করতে যায় শ্যামনগরের একটি চিহ্নিত গ্যাং ষ্ট্যার গ্রুপ। সম্প্রতি ভারত থেকে একই বাহিনীর নিয়ে আসা ফেন্সিডিলের একটি বড় চালান সীমান্তঘেঁষা আস্তাখালী এলাকা থেকে পুলিশ আটক করতে সক্ষম হয়।এর আগে গোপালপুর পিকনিক কর্ণারের ম্যানেজার রেজাউল ইসলামকে মারপিট করে চেইন ছিনতাই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা চলমান থাকা সত্ত্বেও এ বাহিনীর সদস্যরা রীতিমত ধরাকে সরাজ্ঞান করে চলছিল। কিছুদিন আগেও তারা জোবেদা সোহরাব মডেল একাডেমীর শিক্ষক আব্দুল বারীর জায়গা দখল করে দেয়ার শর্তে একটি নুতন হান্ক মটর সাইকেল কমিশন হিসেবে নেয়। পরবর্তীতে আবার একই গ্রপের সদস্যরা আব্দুল বারির পক্ষে হয়ে দখলদারদের বিতাড়িত করতে কয়েক দফায় হাজার হাজার টাকা গ্রহণ করে নুতন করে আলোচনায় আসে।অনুসন্ধানকালে স্থানীয়রা জানিয়েছে সম্প্রতি গোপালপুর গ্রামের এক পুলিশ কর্মকর্তার বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে প্রকাশ্য দিবালোকে কতিপয় দুবৃর্ত্ত কয়েকটি তালা ভেঙে কয়েখ লাখ টাকার মালামাল লুট করে। এ ঘটনার কিছুদিন আগে ধুমঘাটের জনৈক মহাদেব বাবুর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনাও ঘটে। কয়েক সপ্তাহ আগেও গোপালপুর গ্রামের কাজল কান্তি সরকারের বাড়ি থেকে দুবৃত্তৃরা প্রায় দুই লাখ টাকার মালামাল লুট করে।
জানা গেছে রেজাউল ‘চ্যাপ্টার ক্লোস’ হওয়ার পর গোপালপুর ও বাদঘাটা গ্রামের কিছু উৎশৃঙ্খল তরুণ উপজেলাকে আবারও সন্ত্রস্থ করে তুলেছে। ‘গেছো বাহিনী’ নামে পরিচিত, তাদেরই একটি গ্রুপ গোপালপুর পিকনিক কর্ণারে বেড়াতে আসা নানা বয়সী তরুণ-তরুণীদের অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ছবি (গাছে বসে ভিডিও করে) পরবর্তীতে ব্লাক মেইলিংও করে।
তবে আসার কথা এসব অপরাধীদের কয়েক সদস্য আল আমিন, আকরাম হোসেন বাবু, আব্দুর রাজ্জাকসহ জাহাঙ্গীর, উজ্জল, হাসান, সাইফুল, রমজান ও রফিকুল সম্প্রতি পুলিশের হাতে আটক করে কারাগারে রয়েছে।
ইতিমধ্যে জাহাঙ্গীর বিজ্ঞ বিচারকের নিকট ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীতে অপরাধের সাথে নিজে জড়িত থাকার পাশাপাশি পালের গোদাসহ ১৭ সহযোগীর নাম প্রকাশ করেছে। এছাড়া অপর একটি মামলায় পুলিশ উজ্জলসহ তার তিন সহযোগীকে এক দিনের জন্য রিমান্ডে নেয়ার পর থেকে মুলত উপজেলা সদরসহ শ্যামনগরে অপরাধ প্রবনতা দারুনভাবে কমে গেছে। এসব দুবৃর্ত্তদের ‘বস’ দের দেখাও যেমন মিলছে না, তেমনী তাদের অপরাপর সহযোগীরা রীতিমত আত্মগোপনে চলে গেছে।
অনুসন্ধানকালে জানা যায় গত চার মাসে প্রায় ২৬টি জায়গাতে চুরির ঘটনা ঘটলেও এসব অপরাধীদের আটকের পর থেকে শ্যামনগরের পরিবেশ তুলনামুলক অনেক শান্ত।
এমন সুন্দর সুশৃঙ্খল পরিবেশ উপহার দেয়ার জন্য পুলিশ বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি স্থানীয়রা অপরাধীদের পান্ডাদেরও অইনের আনার দাবি জানিয়েছে।


Comments are closed.

ইমেইল: arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com