April 27, 2024, 9:40 am
দৈর্ঘ্যরে দিক দিয়ে দেশের প্রথম দীর্ঘতম সেতু যমুনাকে (বঙ্গবন্ধু সেতু) ছুঁলো নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু। দুদিনের চেষ্টায় রোববার পদ্মা সেতুর ৩২তম স্প্যান বসানো হয়েছে। দীর্ঘ চার মাস পর পদ্মা সেতুতে স্প্যান বসল। ৩২তম এই স্প্যান স্থাপনের পর দৈর্ঘ্যরে দিক থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান দূরত্বে পৌঁছে গেল পদ্মা সেতু। এটির আকার ৪৮০০ মিটার বা ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার।
রোববার সকালে স্প্যান বসানো কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। এটি মাওয়া প্রান্তে ৪ এবং ৫ নম্বর খুঁটিতে বসানো হয়েছে। পদ্মা সেতু সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান দূরত্ব হবে পদ্মা সেতু। তবে যমুনা নদীর সেতুর এই দূরত্বে পৌঁছতে ৩৮টি স্প্যান লেগেছিল। ৩২তম স্প্যান বসানোর পর পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৪৮০০ মিটার। পদ্মা সেতুতে মোট ৪১টি স্প্যান বসাতে হবে। এর মধ্যে বাকি ছিল ১০টি। এখন বাকি রয়েছে ৯টি স্প্যান। এগুলো বসানোর পর শরীয়তপুর এবং মুন্সীগঞ্জের মধ্যে সেতুর সংযোগ ঘটবে। দৃশ্যমান হবে পুরো ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের পদ্মা সেতু।
সেতু সচিব বেলায়েত হোসেন এ বিষয়ে জানিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে বাকি ৯টি স্প্যান বসানো সম্পন্ন হবে। এর মধ্যে ২৫ অক্টোবরের মধ্যেই আরও দুটি স্প্যান বসানোর লক্ষ্য আছে আমাদের। ৩৩ নম্বর স্প্যান বসবে ৩ ও ৪ নম্বর পিলারে। বাকি ৯টি স্প্যানের মধ্যে ছয়টিই ওয়্যারহাউজে তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। এগুলো সেতুর ওপর তুলতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। বাকি তিনটি তৈরির কাজ চলছে। এভাবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই সবগুলো স্প্যান বসানোর কাজ সম্পন্ন করার ইচ্ছে রয়েছে আমাদের। তা ছাড়া লক্ষ্য আছে আগামী বছর সেতুর এরপর নির্মাণকাজ শেষ করার। অন্যদিকে পদ্মা সেতুর ওপর সড়ক পথের নির্মাণকাজ প্রায় ২ কিলোমিটার এগিয়েছে।
সেতু সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী সূত্রে জানা যায়, শনিবার স্প্যানটি বসানোর পূর্বপ্রস্তুতি অনুযায়ী সকালে কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ভাসমান ক্রেন তিয়ান-ই এর মাধ্যমে পিয়ারের অনেক কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া হয়। তবে নদীতে স্রোতের কারণে বিকাল পর্যন্ত চেষ্টা করেও শেষ অবধি বসানো যায়নি স্প্যানটি। পরে ক্রেনটিকে আরও কিছুটা দূরে নদীতে নোঙর করে রাখা হয়। রোববার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে পুনরায় স্প্যান বসানোর কাজ করা শুরু হয়। এরপর ক্রেনটিকে নির্ধারিত স্থানে এনে প্রকৌশলীদের মাপজোক শেষে ধীরে ধীরে ইঞ্চি মেপে নির্ধারিত পিয়ারে ভূমিকম্প সহনশীল বিয়ারিংয়ের ওপর স্প্যানটি বসানো হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় থেকে শুরু হওয়া স্প্যানটি বসানোর পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় লাগে তিন ঘণ্টার মতো।
স্প্যানটি বসানোর মাধ্যমে পুরো সেতুতে বাকি রইল আর মাত্র ৯টি স্প্যান বসানোর কাজ। যেগুলোর সবগুলোই মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের ১-২, ২-৩, ৩-৪, ৭-৮, ৮-৯, ৯-১০, ১০-১১, ১১-১২ ও ১২-১৩নং পিয়ারে বসানো হবে। সেতুর জাজিরা প্রান্তে সবগুলো স্প্যানের এর মধ্যেই বসানোর কাজ শেষ হয়। আর চলমান অক্টোবর মাসে আরও তিনটি স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের ১০ জুন পদ্মা সেতুতে সর্বশেষ বসানো হয়েছিল ৩১তম স্প্যান। করোনা আর বন্যা পরিস্থিতির কবলে সেতুর অন্যান্য কাজ চললেও এরপর আর কোনো স্প্যান বসানো হয়নি। সেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮১ ভাগেরও বেশি এবং মূল সেতুর প্রায় ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। সেতু সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, আরও তিনটি স্প্যান ‘ওয়ান-এ’, ‘ওয়ান-বি’, ‘ওয়ান-সি’ সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। পরবর্তী চারটি স্প্যান পিয়ার ১-২, ২-৩, ৩-৪ নম্বর পিয়ারে বসানো হবে।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এরপর একে একে বসানো হয় ৩১টি স্প্যান। এতে দৃশ্যমান হয়েছে সেতুর ৪ হাজার ৬৫০ মিটার অংশ। ৪২টি পিলারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে সব কটি পিয়ার এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেড। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখি সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার পর আগামী ২০২১ সালেই যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
Comments are closed.