April 27, 2024, 12:03 pm
শ্যামনগর প্রতিনিধি:
জহুর আলীর ছেলে একব্বার গাজীর নিকট থেকে মাস তিনেক আগে প্রতিবেশী রুবেল হোসেন সামনের কিছু জায়গাসহ একটি কাঁচা বসত ঘর ক্রয় করেন এক লাখ ত্রিশ হাজার টাকায়। বেঁচাবিক্রি সম্পন্নের পরপরই রুবেল হোসেন সেখানে গড়ে তুলেছেন একতলা আলিশান বাড়ি। প্রায় ১২শ’ বর্গফুটের ঐ বাড়ির সামনের অংশেও গড়ে তোলা হচ্ছে আরও একটি পাকা বাড়ি। এ ঘটনা শ্যামনগর উপজেলা সদরের বাদঘাটা গ্রামের উত্তর পাড়া বাস টার্মিনাল সংলগ্ন এলাকার।তবে বাড়ি কেনা বেঁচা কেনা নিয়ে কারও কোন আপত্তি নেই। বিক্রেতা ও ক্রেতা দু’জনেই খুশি কেনা বেঁচার ঘটনায়। কেননা সরকারি জায়গা বিক্রি করে ক্রেতা যে দাম পেয়েছে তাতেই সে খুশি। একইভাবে ক্রেতা রুবেলও খুশি গুরুত্বপুর্ন একটি জায়গা নামমাত্র মুল্যে কিনতে পারায়।তবে শুধু যে একব্বার গাজী আর রুবেল হোসেনরা এমন জায়গা-জমি কেনা বেঁচা করছে তা নয়। বরং তাদের মতো স্থানীয় আরও অনেকে অভিন্ন কান্ড ঘটিয়ে রীতিমত সরকারি জায়গা-জমি টাকার বিনিময়ে হাত বদলের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ধুমছে। এর আগে আবু বক্কার নামের এক ভদ্রলোকের পরিবার তাদের বসতবাড়িসহ কিছু জায়গা বিক্রি করে দেয় জনৈক মানিক গাজীর ছেলে মোবারক হোসেনসহ অন্যদের নিকট।সাইদুর ও সফিকুল ইসলামও নামের দুই ব্যক্তিও একইভাবে অন্যদের কাছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সরকারি জায়গা বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা বাগিয়ে নেয়।তসব কান্ড ঘটছে যেসব জায়গা-জমি নিয়ে তা মুলত পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারি সম্পত্তি। কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলার সুযোগে স্থানীয় সুবিধাভোগীরা সরকরি এসব জায়গা দিনের পর দিন হাত বদল করে হাতিয়ে নিচেছ মোটা অংকের টাকা।পাউবোর নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারি এসব জায়গা নিয়ে এমন ধুন্ধুমার ব্যবসা চালু থাকলেও কর্তৃপক্ষ রয়েছে সম্পূর্ণ অন্ধকারে। তারা জানেই না যে, তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারি জায়গা বেঁচা-বিক্রি হচ্ছে আর একের পর এক পাকা বসত বাড়ি গড়ে তোলা হচ্ছে।স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি নাম গোপন রাখার শর্তে অভিযোগ করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় কিছু নিম্ম পদস্থ কর্মচারী যমুনার পাড়ে থাকা পাউবোর জায়গা জমি বিক্রির বিষয়ে পুর্বে থেকে অবগত। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তারা অদ্যাবধি বিষয়গুলো উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানায় না।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব ব্যক্তির অভিযোগ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশব্যাপী সকল সরকারি জায়গা থেকে যাবতীয় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় পাউবো কর্মকর্তারা অদ্যাবধি পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখলকারী অবৈধ দখলদরদের বিরুদ্ধে দৃশ্যত কোন ব্যবস্থা নেয়নি।বাদঘাটা ও চন্ডিপুর গ্রামের আমিরুল ইসলাম ও আব্দুস সোবহান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার সূত্র ধরে জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে সাতক্ষীরার প্রাণসায়ের খাল ও দেবহাটার সাপমরা খালের পুন:খনন কাজ শুরু হওয়ায় জলাবদ্ধতার কবল থেকে সাতক্ষীরা ও দেবহাটাবাসী রেহাই পাবে। একইভাবে তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শ্যামনগরের যমুনা নদী পুন:খনন কাজ শুরুর মাধ্যমে শ্যামনগর সদরসহ আশপাশের এলাকার জলাবদ্ধতা দুরীকরনে জেলা প্রশাসকের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
এবিষয়ে শ্যামনগর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশন অফিসার মাসুদ রানা বলেন, ইতিপুর্বে তারা যমুনা পুন:খনন কাজের জন্য একটি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগও অনুরুপ একটি প্রকল্প জমা দেয়ায় বিষযটি নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। প্রকল্প অনুমোদন হলেই যমুনা পুন:খননসহ পাউবোর জায়গা থেকে অবৈধ দখলদারদের যেকোন মুল্যে উচ্ছে করা হবে।এবিষয়ে পানি উন্নয় বোর্ডের সাতক্ষীরা ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড তার জায়গা কাউকে ইজারা দেয়না, দেয়নি। যমুনা খাল পুন:খনন কাজের জন্য ইতিমধ্যে প্রস্তাবনা প্রেরনের তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, অর্থ বরাদ্দ সাপেক্ষে পানি উন্নয়ন বোর্ড যমুনা পুন:খনন কাজ করার পাশাপাশি তার জায়গা উদ্ধার করবেই।পাউবোর এ উর্ধ্বতন কর্মকর্তা আরও বলেন, পাউবোর জায়গা বেঁচা কেনা করার কোন বিধান নেই। কেউ যদি টাকা দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা অন্যের থেকে ক্রয় করে তবে সেটা তার নির্বুদ্ধিতা। উচ্ছেদকালে কে টাকা দিয়ে কিনেছে আর কে শুরু থেকে বসে রয়েছে তা বিবেচনায় নেয়া হবে না।
Comments are closed.