April 27, 2024, 5:32 am

সাংবাদিক আবশ্যক
সাতক্ষীরা প্রবাহে সংবাদ পাঠানোর ইমেইল: arahmansat@gmail.com
শিরোনাম:
জুম্মার নামাজে মুসল্লিদের দোয়া চাইলেন মশিউর রহমান বাবু সাতক্ষীরায় অপহৃত ৮ম শ্রেণীর ছাত্রীকে উদ্ধার করলো পুলিশ সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে পৃথক বার্ন ইউনিট না থাকায় জরুরী সেবা ঝুঁকিতে এসিড দগ্ধ ও পোড়া রুগীরা দাবদাহ উপেক্ষা করে ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষকরা সাতক্ষীরায় সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলে নিহত জনপ্রিয়তার শীর্ষে নতুন মুখ প্রভাষক সুশান্ত কুমার মন্ডল আশাশুনীতে বাপ্পী সীড হাউজ দোকান উদ্বোধন দক্ষিণ খুলনার অস্ত্র ও মাদকের গডফাদার ওজিয়ার গ্রেফতার সাতক্ষীরায় টিটিসিতে ৭৫ দিন মেয়াদী দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণের মতবিনিময় তীব্র তাপদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত, বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ
মানুষ বুঝবে কবে?

মানুষ বুঝবে কবে?

গবেষকদের মতে পৃথিবীর বয়স প্রায় ৪৫৪ কোটি বছর পূর্ণ হয়েছে। এত দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হলেও মানুষের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক বুঝের অভাব মনে হয় আজও রয়ে গেছে। না বুঝে অন্ধের মতো পথ চলা অনেক মানুষের যেন স্বভাবে পরিণত হয়ে গেছে। মানুষ অনেক কিছু জানে, অনেক কিছু টের পায় অথচ স্বভাবজাতভাবে আবার ভুল পথে পা বাড়ায়। এর জন্য অনেকে মানুষের দেহে বিরাজমান ষড় রিপুকে দায়ি করেন। ষড় রিপু হচ্ছে কাম, ক্রোধ, লোভ, মদ ও মাৎসর্য। এই ষড় রিপু দমন করা মানুষের পক্ষে অত্যন্ত কঠিক কাজ। যারা দমন করতে পেরেছেন তাঁরা মহাপুরুষ। পৃথিবীতে কীর্তিতে তাঁরা অমর হয়ে আছেন। আর যারা ষড়রিপুর বশবর্তি হয়ে এর দাসে পরিনত হয়ে জীবনকে ভুল পথে পরিচালিত করেছেন মৃত্যুর পর পৃথিবী থেকে বিস্মৃত হয়ে মুছে গেছে তাদের নাম। তাদেরকে কেউ শ্রদ্ধা ও স্মরণ করেন না। এভাবে কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে তাদের নাম। মানুষ জানে সেসব কথা। তারপরেও যেন হুশ হয়না চৈতন্যের। কবি বলেছেন, ‘জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে? চির স্থির রয় কি নীর জীবন নদে।’ অর্থাৎ যার জন্ম হয়েছে তার অবশ্যই মৃত্যু হবে। যুগ যুগ ধরে আমরা তা দেখেও আসছি। আমরা যেমন আজ পৃথিবীতে আছি, ঠিক সেইভাবে আমাদের পূর্বপুরুষেরাও একদিন পৃথিবীতে ছিলেন। আমাদের মতো কাজকর্ম করতেন। চলাফেরা করতেন। আচার-আচরণ করতেন। আজ তারা কোথায়? এই পৃথিবী থেকে তারা কি তাদের উপার্জিত কোন সম্পদ নিয়ে যেতে পেরেছেন? না, পারেননি। সেটা সম্ভবও না। আমরা সবাই জানি তা। তবুও অন্ধের মতো সম্পদ-সম্পত্তি, অর্থ, প্রতিপত্তি অর্জণে পৃথিবীতে প্রানান্তকর চেষ্টায় আমরা লিপ্ত হই। অসৎ পন্তায় চলে অবৈধ পথে সম্পদের প্রাসাদ গড়ার চেষ্টা করি। বিনিময়ে পরপারের হিসেবের খাতায় জমা হয় পাপের মহা পাহাড়। হানাহানি রেষারেষি, আত্ম অহংকারে মত্ত হয়ে ভুলে যাই কে আমাদের ¯্রষ্টা, কি জন্য আমরা পৃথিবীতে এসেছি। ভুল করা মানুষের ধর্ম। ইংরেজিতে বলা হয়, ‘ঞড় বৎৎ রং যঁসধহ.’ তবে ভুলের জন্য আমাদের অনেকেরই অনুশোচনা নেই, ভুল সংশোধনের প্রচেষ্টাও নেই। বারবার ভুলে সেই একই ভুল করে চলি। পাপের পথে একবার পা বাড়ালে সেখান থেকে সহজে বেরিয়ে আসা মুসকিল। দিনে দিনে লোভ বেড়ে চলে। কিন্তু লোভের যে কোন শেষ নেই সে কথা আমাদের বুঝতে হবে। আইন করে কোন কিছু দমন বা নির্মূল করার চেয়ে মানুষ সচেতন হয়ে চললে বেশি লাভ হবে। বিশেষ করে নিজেদের ক্ষতি হয় এমন কর্ম থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। যেমন খাদ্যে ভেজাল দেওয়া একটি অতি জঘন্ন কাজ। তবু একেক রকম পন্যের উৎপাদনকারী বা ব্যবসায়ি নিজেদের মতো করে একেক রকম চিন্তা করছে। যিনি তেলে ভেজাল দিচ্ছেন তিনি মনে করছেন ভেজাল তেল অপরে খাচ্ছে তাতে আমার তো কোন ক্ষতি নেই, বরং কিছু মুনাফা বেশি পাচ্ছি। অথচ তেল বিক্রর টাকা দিয়ে তিনি যখন ফল বা অন্য কিছু কিনছেন তখন তাকেও সেই ভেজাল জিনিসটি কিনতে হচ্ছে। এতে করে আসলে আমাদের সবারই ক্ষতি হচ্ছে। সুতরাং পরকে ভালো করার আগে প্রথমে নিজেকেই ভালো হতে হবে। এটা সকলকে বুঝতে হবে। আমরা প্রত্যেকে যদি আমাদের নিজ নিজ বাড়ির আঙিনায় কয়েকটি করে গাছ লাগাই, তাহলে দেশে যেমন গাছের অভাব থাকবে না, তেমনি আমরা যার যার মতো সৎ হলে দেখবেন দেশে আসলে কোন ভেজাল দ্রব্য আর থাকবে না। ভালো হয়ে চলা আসলে কঠিন কোন ব্যাপার না। তবে কেন যে আমরা মন্দ জিনিষে বেশি আকৃষ্ট হয়ে পড়ি বুঝিনা। ভালো তো সবার জন্য ভালো আর খারাপ সে তো সকলের জন্যই খারাপ। যেমন যেসব বখাটে ছেলেরা ইভটিজিং বা মেয়েদের বিরক্ত করে তাদেরও তো বাড়িতে মা-বোন আছে। তাদের বোনটি অন্যদের দ্বারা আক্রান্ত হলে যেমন খারাপ লাগে, যে মেয়েটিকে তারা বিরক্ত করছে তাদের স্বজনদের বেলাও তো একই রকম লাাগার কথা। তাহলে নিজেদের ভিতরে এই উপলব্ধিটুকু কেন থাকেনা। একই কথা বলা চলে মাদক বিক্রেতাদের ক্ষেত্রে। মরণঘাতি মাদক অপরের সন্তানের হাতে তুলে দিয়ে যেমন হাজার হাজার সংসারকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, পিতা-মাতার লালিত স্বপ্নকে নষ্ট করে দিচ্ছে, ঐ সন্তানটি যদি তাদের নিজেদের হতো তাহলে কেমন অবস্থা হতো বলেন তো? ঔষধ একটি জীবন রক্ষাকারি উপাদান। অথচ ভেজাল ঔষধ, নকল ঔষধ, মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ এসব দিয়েও মানুষ, অসুস্থ মানুষ আর তাদের আত্মীয়স্বজনদের সাথে প্রতারনা করছে। একজন মূমূর্ষ রোগিকে সেবা শশ্রুষা দিয়ে সারিয়ে তোলার পরিবর্তে যদি তাকে নিয়ে অর্থ কামাইয়ের ব্যবসা শুরু হয় তাহলে মানুষ মরার আগে দুদন্ড শান্তি পাবে কোথায়? স্বজনরা সামান্য স্বস্তি খুঁজে পাবে কোথায় ? এ জঘন্নতার জন্য মানুষকে কি মানুষ ধিক্কার দিবেনা? মানুষ বুঝবে কবে? আজ যারা এমন করছে তাদের জীবনে যদি একদিন এমন দিন নেমে আসে, সেদিন কি হবে?
মানুষ বলে থাকে, ‘ভালো হতে পয়সা লাগেনা।’ তবে সেই ভালো হওয়া যদি হয় প্রচলিত ধ্যান ধারনার বিপরিতমূখি তবে প্রকৃত চৈতন্য জাগ্রত হওয়া দুরূহ ব্যপার। যেমন ধরুন, স্কুল কলেজে পড়াশোনা করে আমরা সর্বোচ্চ ডিক্রী নিয়ে নিজেদেরকে শিক্ষিত বা গর্বিত মানুষ বলে দাবি করি। আবার আমাদের সন্তানদেরকেও মানুষ করার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাই। এখন কথা হচ্ছে স্কুল, কলেজ বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে আমরা কি পাঠ করে সব শিখি? নিশ্চয়ই বলবেন ‘বই’। আসলে বই কথাটি ঠিক বটে, তবে বই হলো বেশ কতকগুলো লেখার মুদ্রিত রূপ সম্বলিত পৃষ্ঠার সমষ্টি। হোক সে গদ্য কিম্বা পদ্য। আসলে শিক্ষকদের নিবিড় সাহচর্যে এসব গদ্য,পদ্যের পাঠ পর্যালোচনার নির্যাস থেকে আহরিত জ্ঞান থেকেই মূলত আমাদের শিক্ষা লাভ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে থাকে। কথা হচ্ছে এসব গদ্য-পদ্যের তো একেকজন ¯্রষ্টা থাকেন। সহজ কথায় যাদেরকে বলা হয় লেখক বা কবি। এখন বলেন তো, যাদের লেখা পড়ে জ্ঞানার্জন করে আমরা নিজেদেরকে শিক্ষিত দাবি করি সেই কবি সাহিত্যিকদেরকে বর্তমানে আমরা কতটুকু মূল্যায়ন করছি বা করতে পারছি ? হয়তো এদের মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসবে ভবিষ্যতের বড় কোন লেখক বা কাব্য ¯্রষ্টা। অথচ কবি শব্দটি তাচ্ছিল্যমূলক নয় সেটা হয়তো অনেকেই ভুলে যাচ্ছি তাঁদের প্রতি বিদ্রুপাক্তক মনোআচরণে। যুগ যুগ ধরে নিরলস পরিশ্রমে বাংলা সাহিত্য ভান্ডারকে যারা সমৃদ্ধ করে গেছেন বা বর্তমানে সমৃদ্ধ করে চলেছেন তাদের প্রতি আসলে কতটুকু আন্তরিক আমরা হতে পেরেছি। দেশে কত রকম ভাতা চালু হলেও লেখক ভাতার বিষয়টি আজও উপেক্ষিত ? এদের পরিশ্রমকে মূল্যায়ন করা কি জরুরি নয়? অবশ্য কিছু বিপরীতমুখিতা সব জায়গাতেই বিরাজমান। দেখেন কল কারখানা, অফিস আদালতে যারা কাজ করে তারাই আবার গালি খায়। যারা কাজ করে না বা বাস্তবভিত্তিক কাজ করার অভিজ্ঞতা নেই তারা গালি দেয়। শ্রমিকের পরিশ্রমে উপার্জিত অর্থের অধিকাংশ যায় মালিকের পকেটে। আর রুটিন মাফিক মাস শেষের সামান্য বেতনে তাদের দিন যাপনের প্রানান্তকর প্রচেষ্টা। এমনি করে দিব্যি চলে আসছে। সিন্ডিকেট করে মানুষ মানুষকে বিপদে ফেলছে। সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত পেঁয়াজ ও লবণের মূল্য বৃদ্ধির ঘটনাটি এরকম সিন্ডিকেটকারী ব্যবসায়িদের অসাধু উদ্দেশ্যের ফল বলে অনেকে মনে করছেন। অবশেষে পঁচা পেয়াজ ডাস্টবিন,নদীতে ফেলতে হচ্ছে। তাহলে লাভটা কি হলো ? অবশ্য লাভ-লোকসান, ভালো-মন্দের বিচার করে যে সবাই চলে তাও বলি কি করে। হুজুগে পড়ে কি না হচ্ছে ? যেমন দেশ স্বাধীন হয়েছে প্রায় অর্ধ শতাব্দী হতে চললো। এখনো কেউ কেউ অন্ধের মতো স্বাধীনতার বিরোধিতা করে চলেছে। দেশকে অস্থিতিশীল করতে কখনো কখনো তাদের অপতৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। অথচ স্বাধীনতা যেকোন জাতির জন্য চির কাক্সিক্ষত এক মহামূল্য সম্পদ। দেশ, জাতি, স্বাধীনতার বিরোধিতা মানে আপন অস্তিত্ব, আপন স্বত্ত্বার মৃত্যু ঘটানো, তা কেন ওরা বোঝেনা। বোঝেনা বললে হয়তো ভুল হবে। তবে এগুলো করে হয়তো কেউ কেউ কিছু ফায়দা লোটার চেষ্টা করে। আবার অর্থের জোরে কেউ কেউ নিজেদেরকে খুব শক্তিশালী মনে করেন। জ্ঞানীর কদর এখন সমাজে নেই বললেই চলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অর্থবানরা সমাজে পুজিত হন। অর্থের মানদন্ডে ছোট-বড় নির্ণয় সত্যিই নির্মম পরিতাপের, তবু তারাই বড় আসন পায়, জ্ঞানীরা গুমরে মরে। কবি বলেছেন, ‘মহাজ্ঞানী মহাজন যে পথে করে গমন, হয়েছেন চির স্মরণীয়, সেই পথ লক্ষ্য করে স্বীয়কীর্তি ধ্বজা ধরে আমরাও হবো বরণীয়।’ তবে বর্তমান তারুণ্য যেন তার বিপরিতমুখী। শ্রদ্ধার পরিবর্তে বড়রা এখন অনেক ক্ষেত্রে তাদের অবজ্ঞার পাত্র হচ্ছেন। তবে কি আমরা নীতি-আদর্শ হতে দিনকে দিন বিচ্যূত হয়ে যাচ্ছি ? নাকি প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে আমরা অন্যায়ের কাছে মাথা নোয়াচ্ছি ? এরকম হলে মানুষ যে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ প্রাণী সে অস্তিত্ব কি আমাদের থাকবে? সঠিক কথাটি তাই আমাদের বুঝতে ও বলতে হবে। মানুষের সার্বিক মঙ্গলের জন্য প্রয়োজনে আমাদের কঠোর হতে হবে। যেমন সরকার কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ায় দেশে দুর্নীতি, ইভটিজিং, মাদকের বিস্তার, কিশোর অপরাধ ইত্যাদি অনেক কমে এসেছে। আমরা সরকারের এমন সব ভালো উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আসুন নিজেরা ভালো কাজ করি এবং ভালো কাজে দেশের সরকারকে সবাই সহযোগিতা করি। মানুষ হিসেবে নীতি-আদর্শ, বাস্তব জ্ঞান নিয়ে প্রকৃত মানুষের মতো চলতে পারলে মানবতার যথার্থ কল্যাণ সাধিত হবে বলে আশা করি।


Comments are closed.

ইমেইল: arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com