April 27, 2024, 8:30 am

সাংবাদিক আবশ্যক
সাতক্ষীরা প্রবাহে সংবাদ পাঠানোর ইমেইল: arahmansat@gmail.com
শিরোনাম:
জুম্মার নামাজে মুসল্লিদের দোয়া চাইলেন মশিউর রহমান বাবু সাতক্ষীরায় অপহৃত ৮ম শ্রেণীর ছাত্রীকে উদ্ধার করলো পুলিশ সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে পৃথক বার্ন ইউনিট না থাকায় জরুরী সেবা ঝুঁকিতে এসিড দগ্ধ ও পোড়া রুগীরা দাবদাহ উপেক্ষা করে ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষকরা সাতক্ষীরায় সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলে নিহত জনপ্রিয়তার শীর্ষে নতুন মুখ প্রভাষক সুশান্ত কুমার মন্ডল আশাশুনীতে বাপ্পী সীড হাউজ দোকান উদ্বোধন দক্ষিণ খুলনার অস্ত্র ও মাদকের গডফাদার ওজিয়ার গ্রেফতার সাতক্ষীরায় টিটিসিতে ৭৫ দিন মেয়াদী দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণের মতবিনিময় তীব্র তাপদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত, বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ
শত্রুমুক্ত সাতক্ষীরা

শত্রুমুক্ত সাতক্ষীরা

এই সাতক্ষীরারই সাহিত্যিক, সমকাল পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক সিকান্দার আবু জাফরের কথায়, শেখ লুৎফর রহমানের সুরে ‘জনতার সংগ্রাম চলবেই’ গানটিতে সংগ্রামী বাঙালির মনে আজও মুক্তিযুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে। রক্তে রক্তে ঢেউ ওঠে শিরা-উপশিরায়। গানে গানেও উজ্জীবিত হয়েছিলেন বীর বাঙালি মুক্তিযোদ্ধারা। যার ফশ্রুতিতে আমরা পেয়েছি একটি নিরাপদ মা, একটি নিরাপদ দেশ, আমাদের স্বাধীনতা, একটি স্বাধীন পতাকা।১৯৭১ সাল। বাংলার চারিদিকে শত্রুর কালো ছায়ায় অন্ধকার হতে চলেছে। ২৫শে মার্চের কালরাত আসতে তখনও বেশ কয়েক দিন বাকী। তারিখটা ’৭১ এর ২রা মার্চ। সাতক্ষীরা শহরে পাকিস্তানবিরোধী মিছিলে গুলি করে হত্যা করা হয় শহীদ আব্দুর রাজ্জাককে। এর পরপরই সংগঠিত হতে থাকে সাতক্ষীরার দামাল ছেলেদের মুক্তি আন্দোলন।ইতোমধ্যে মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরের মধ্যে সাতক্ষীরাকে ২টি সেক্টরে বিভক্ত করে দেওয়া হয়েছে।দৌলতপুর-সাতক্ষীরা সড়কের উত্তর দিকটা, খুলনা জেলার উত্তর অঞ্চল, ফরিদপুরের অংশবিশেষ, সমগ্র যশোর এবং সমগ্র কুষ্টিয়া ৮নং সেক্টরের অধীনে। সেক্টর কমান্ডার মেজর আবু ওসমান চৌধুরী অক্টোবর পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন, আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন মেজর এম. এ মনঞ্জুর।অন্যদিকে সাতক্ষীরা-দৌলতপুর সড়কসহ দক্ষিণাঞ্চল, খুলনা জেলার দক্ষিণাঞ্চল, বৃহত্তর বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা পড়েছে ৯নং সেক্টরের অধীনে। এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মেজর আব্দুল জলিল ছিলেন সেক্টর কমান্ডার হিসেবে, অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলেন এম. এ মঞ্জুর।চারিদিকে যেন গোবিন্দ হালদারের কথায়, আপেল মাহমুদের সুরে ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’ বেজে চলেছে।১৯৭১ এর ২৭ মে। সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্তে শুরু হয় প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ। এই যুদ্ধে নিহত হয় দুই শতাধিক পাকিস্তানী সেনা, তিনজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন ১৭ ঘণ্টাব্যাপী এই যুদ্ধে, দুইজন মুক্তিযোদ্ধা আহতও হন। পাকি বাহিনীর উপর মুক্তিযোদ্ধাদের গুপ্ত হামলা চলতেই থাকে এর পরে। কখনো সম্মুখ, কখনো গুপ্ত হামলার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। ভোমরা যুদ্ধ, টাউন শ্রীপুর যুদ্ধ, বৈকারী যুদ্ধ, খানজিয়া যুদ্ধ সে সবের ভিতরে উল্লেখযোগ্য। এ সব যুদ্ধে শহীদ হন প্রায় ৩৩ জন বীর বাঙালি মুক্তিযোদ্ধা।গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথায়, সমর দাসের সুরে ‘মা গো, ভাবনা কেন ? আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে; তবু শত্রু এলে অস্ত্র হাতে ধরতে জানি’ গেয়ে চলেছে বীর বাঙালির মন।৩০ নভেম্বর ১৯৭১। সাতক্ষীরার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত পাওয়ার হাউস। টাইম বোমা দিয়ে পাওয়ার হাউস উড়িয়ে দেন বাংলার মুক্তিযোদ্ধারা। তখন বিদ্যুৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে পাক-সেনার দল। রাতের আঁধারে পাক-সেনাদের উপরে চলতে থাকে মুক্তিবাহিনীর গুপ্ত হামলাও। তখন পাকি সেনার দল ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে।১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর। রাতের আঁধারে মুক্তিযোদ্ধাদের হামলা চলতে থাকে পাক-সেনাদের উপরে। টিকতে না পেরে সাতক্ষীরা ছেড়ে পালিয়ে যায় পাক-সেনার দল। যাওয়ার পথে বাঁকাল, কদমতলা ও বিনেরপোতা ব্রিজ উড়িয়ে দিয়েও যায় ওরা।৭ ডিসেম্বর সকাল, শত্রুমুক্ত পুরো সাতক্ষীরা। জয়ের উন্মাদনা তখন ছড়িয়ে পড়ে চতুর্দিকে। রাস্তাঘাটে যেন গোবিন্দ হালদারের কথায়, সমর দাসের সুরে ধ্বনিত হচ্ছে ‘শোষণের দিন শেষ হয়ে আসে

অত্যাচারীরা কাঁপে আজ ত্রাসে।

রক্তে আগুন প্রতিরোধ গড়ে।

নয়া বাংলার নয়া সকাল, নয়া সকাল, নয়া সকাল।

পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে

রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল’

ঐ দিন সাতক্ষীরার সাথে গোপালগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, নালিতাবাড়ি (শেরপুর), মাগুরা, ইসলামপুর (জামালপুর), কমলাকান্দা (নেত্রকোণা) ও কেশবপুরও শত্রুমুক্ত হয়।

সাতক্ষীরাতে পাক বাহিনীর সাথে ছোট-বড় ৫০টিরও অধিক যুদ্ধ হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের।

৭ই ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত জেলা হিসেবে আমরা সাতক্ষীরাবাসী গর্বিত।

রক্তক্ষয়ী ৯ মাস এই মুক্তিযুদ্ধে সাতক্ষীরার শহীদ আব্দুর রাজ্জাক, কাজল, খোকন, নাজমুল, হাফিজ উদ্দিন, নুর মোহাম্মদ, আবু বকর, ইমদাদুল হক, জাকারিয়া, শাহাদাত হোসেন, আব্দুর রহমান, আমিন উদ্দিন গাজী, আবুল কালাম আজাদ, সুশীল কুমার, লোকমান হোসেন, আব্দুল ওহাব, দাউদ আলী, সামছুদ্দোহা খান, মুনসুর আলী, রুহুল আমীন, জবেদ আলী, শেখ হারুনার রশিদসহ প্রমুখ বীর বাঙালি শহীদ হয়েছেন।

ফজল-এ খোদার কথায়, আব্দুল জব্বারের সুরে ‘সালাম সালাম হাজার সালাম, সকল শহীদ স্মরণে’র মতো সাতক্ষীরার শহীদ মুক্তিযোদ্ধাসহ সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার শান্তি কামনা করি।

গোবিন্দ হালদারের কথায়, আপেল মাহমুদের সুরে হয়তো আমরা প্রিয় গানটি গেয়ে উঠি-

‘একসাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যাঁরা, আমরা তোমাদের ভুলবো না’

কিন্তু দুঃখ নিয়ে বলতে হয়, স্বাধীনতা লাভের এত বছর পরেও সাতক্ষীরার বধ্যভূমি-গণকবরগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয় নি। অযতেœ-অবহেলায় দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে সাতক্ষীরার বধ্যভূমি ও গণকবরের স্মৃতিচিহ্ন।

আমাদের মনে রাখা উচিৎ, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের দেওয়া আমাদের সে কথা যেন আমরা রাখতে পারি-‘আমরা তোমাদের ভুলব না’।


Comments are closed.

ইমেইল: arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com