April 27, 2024, 3:51 pm
এক সময় বয়সভিত্তিক দলে নিয়মিত ছিলেন রাজিয়া খাতুন। বাফুফের ক্যাম্প থেকে বাদ পড়েছেন বছর চারেক আগে। এরপর ঘরোয়া লিগ খেলেছেন। নারী ফুটবলের সেই পরিচিত মুখ রাজিয়া আর নেই। বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) ভোররাত ৩টার দিকে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার মৌতলা ইউনিয়নের লক্ষীনাথপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। রাজিয়া সুলতানা সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার লক্ষীনাথপুর গ্রামের নূর আলী সরদারের মেয়ে।
তার পরিবারের বরাত দিয়ে কালিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদ মেহেদি জানান, ফুটবলার রাজিয়া সুলতানা দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। ১৩ মার্চ রাত ১০টার দিকে সে একটি পুত্র সন্তান প্রসব করে। পরে রাত তিনটায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে থাকে। একপর্যায়ে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় রাজিয়া। পরে তাকে কালিগঞ্জ হাসপাতালে নেয়ার পথে ভোর চারটা দিকে তার মৃত্যু হয়। তিনি বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ফুটবল প্রতিযোগিতায় সেরা খেলোয়াড় ছিল রাজিয়া। পরবর্তীতে জাতীয় নারী ফুটবল দলের অনূর্ধ্ব ১৪ ও অনূর্ধ্ব ১৬ দলের সদস্য হয়ে খেলার সুযোগ হয় রাজিয়ার। সবশেষ অনূর্ধ্ব ১৯ জাতীয় নারী ফুটবল টিমের সদস্য ছিল সে। একবার ভুটানে খেলতে গিয়েছিল সে। তবে বিয়ের পর গেল একবছর খেলার বাইরে ছিল সে। তার অকাল মৃত্যুর খবরে আমরা সকলে শোকাহত।
এদিকে রাজিয়ার মৃত্যুতে দেশের ফুটবলে নেমে এসেছে গভীর শোক। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন গোলাম রব্বানী ছোটন। তাই রাজিয়াকে খুব কাছ থেকেই চেনেন দেশের নামী এই কোচ। রাজিয়ার মৃত্যুর খবরে স্মৃতিচারণ করে ছোটন বলেন, ‘২০১৭ সালে থাইল্যান্ডে এএফসি অ-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের মূল পর্বে রাজিয়া খেলেছিল। পরের বছর সাফ অ-১৮ ভুটানের চ্যাম্পিয়ন দলেও ছিল। সিনিয়র দলে ক্যাম্পও করেছে কিছু দিন। পারফরম্যান্স অবনতির জন্য ২০১৯ সালের দিকে ক্যাম্প থেকে বাদ পড়ে।’ রাজিয়ার আকস্মিক মৃত্যুতে খুবই ব্যথিত জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ সানজিদা আক্তার। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলতে এখন আছেন ভারতে। সেখান থেকেই ব্যথিত কন্ঠে বলেন, ‘আমাদের ক্যারিয়ার একই সময়েই শুরু মূলত। ক্যাম্প থেকে বাদ পড়ার পর ও লিগ খেলেছে এবং পরবর্তীতে বিয়ে করেছে। বাচ্চা হওয়ার মুহূর্তে ও মারা গেছে শুনে খুবই খারাপ লাগছে। আমরা একজন বন্ধু হারালাম।’
বাংলাদেশের নারী ফুটবলের প্রেক্ষাপটে বাফুফের ক্যাম্প থেকে বাদ পড়ার পর আবার ফিরে আসা কঠিন। লিগ অনিয়মিত এবং এত দিন ফিটনেস ধরে রাখাও কষ্ট। ক্যাম্প থেকে বাদ পড়ার পরেও ফুটবলের সঙ্গে ছিল। এফসি ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কাচারিপাড়া দুই দলে গত দুই লিগ খেলেছিলেন রাজিয়া। এফসি ব্রাহ্মণবাড়িয়া দলের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন জুবায়ের বলেন, ‘এক মৌসুম আগের লিগে আমাদের দলে খেলেছে রাজিয়া। সাতক্ষীরায় তার বাড়ি। আমাদের সাবেক খেলোয়াড়ের প্রসবকালীন মৃত্যুতে আমরা খুবই ব্যথিত। ’ ২০০১ সালের ২৫ জানুয়ারি জন্ম নেয়া রাজিয়া বাংলাদেশের নারী ফুটবলের উত্থানের শুরুর দিকের একজন। এএফসি অ-১৪ রিজিওনাল ( সেন্ট্রাল ও দক্ষিণ এশিয়া) চ্যাম্পিয়নশিপে ২০১৩ ও ১৫ সালে চ্যাম্পিয়ন দলে ছিলেন তিনি৷ এরপর অ-১৬ ও অ-১৯ দলেও খেলেছেন৷
Comments are closed.