April 27, 2024, 9:26 am

সাংবাদিক আবশ্যক
সাতক্ষীরা প্রবাহে সংবাদ পাঠানোর ইমেইল: arahmansat@gmail.com
শিরোনাম:
জুম্মার নামাজে মুসল্লিদের দোয়া চাইলেন মশিউর রহমান বাবু সাতক্ষীরায় অপহৃত ৮ম শ্রেণীর ছাত্রীকে উদ্ধার করলো পুলিশ সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে পৃথক বার্ন ইউনিট না থাকায় জরুরী সেবা ঝুঁকিতে এসিড দগ্ধ ও পোড়া রুগীরা দাবদাহ উপেক্ষা করে ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষকরা সাতক্ষীরায় সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলে নিহত জনপ্রিয়তার শীর্ষে নতুন মুখ প্রভাষক সুশান্ত কুমার মন্ডল আশাশুনীতে বাপ্পী সীড হাউজ দোকান উদ্বোধন দক্ষিণ খুলনার অস্ত্র ও মাদকের গডফাদার ওজিয়ার গ্রেফতার সাতক্ষীরায় টিটিসিতে ৭৫ দিন মেয়াদী দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণের মতবিনিময় তীব্র তাপদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত, বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ
সাংবাদিক নাদিম হত্যায় জড়িতরা চিহ্নিত, গ্রেপ্তার ৬

সাংবাদিক নাদিম হত্যায় জড়িতরা চিহ্নিত, গ্রেপ্তার ৬

জামালপুরের সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যায় জড়িতদের চিহ্নিত এবং ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জেলার পুলিশ সুপার মো. নাছির উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন। নাছির উদ্দিন আহমেদ শুক্রবার (১৬ জুন) বিকালে বকশীগঞ্জ উপজেলার পাটহাটি এলাকায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।সিসিটিভি ভিডিও দেখে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে বলে এসপি নাছির উদ্দিন জানান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আমরা অলরেডি ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছি; বাকিদের চিহ্নিত করতে পেরেছি এবং আমরা ম্যানুয়েলিও আরও কারা ছিল তাদেরকে চিহ্নিত করে ফেলেছি অলরেডি।”

চিহ্নিতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের পাঁচটি টিম তিনদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে এসপি নাছির বলেন, “সেই চেয়ারম্যান বাবু, যে এটার [নাদিম হত্যাকাণ্ড] নির্দেশদাতা, হুকুমদাতা তাকে গ্রেপ্তারের জন্য আমাদের এলআইসি টিম কাজ করছে এবং আমরা তার – বলতে পারি যে আমরা হয়তো এক/দুই দিনের মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করতে পারব।“আপনাদেরকে, এলাকাবাসীকে বা আমাদের ‘ফোর্থ স্টেট বলে’ – সাংবাদিক সমাজ – তাদেরকে আশ্বাস দিতে পারি, আমরা অতি শীঘ্রই সকল – এই যে ক্রিমিনালগুলো আছে, এই ঘটনার সাথে জড়িত, তাদেরকে গ্রেপ্তারের পরে আমরা আইনের আওতায় সোপর্দ করতে পারব, ইনশাল্লাহ।”

বুধবার (১৪ জুন) রাতে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর ডটকমের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি ও একাত্তর টিভির বকশীগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি গোলাম রব্বানী নাদিমকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে টেনে নামিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে ফেলে যায় একদল হামলাকারী। রক্তাক্ত জখম অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। ওইদিনই রাত ১২টায় সেখান থেকে তাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) সকালে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে তিনি মারা যান।

নাদিমের পরিবার ও সহকর্মীদের অভিযোগ, সংবাদ প্রকাশের জেরে সাধারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় নাদিম হত্যা
‘সংবাদ প্রকাশের জেরে’ হত্যাকাণ্ডের শিকার জামালপুরের বকশিগঞ্জের সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমকে পেটানোর সময় সেখানে স্থানীয় আরেকজন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন; যিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।

আল মোজাহিদ বাবু নামের স্থানীয় এই সাংবাদিক দাবি করেন, ঘটনার সময় উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল আলম বাবু পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং চেয়ারম্যানের ছেলে রিফাত সাংবাদিক নাদিমকে মাথায় আঘাত করেন।

এ সময় সেখানে ২০ থেকে ২৫ জন উপস্থিত ছিলেন বলে জানান আল মোজাহিদ বাবু।

বুধবার রাতে উপজেলার পাটহাটি মোড়ে এক সন্ত্রাসী বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তর টিভির উপজেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক নাদিমকে পিটিয়ে ফেলে রেখে যায়; পরে বৃহস্পতিবার বিকালে তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।

মাথায় গুরুতর আঘাতের কারণেই সাংবাদিক নাদিমের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। শুক্রবার দুই দফা জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই নাদিমের পরিবার অভিযোগ করে আসছে, সাধুরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই হুমকি পাচ্ছিলেন নাদিম। তিনিসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন চেয়ারম্যান। সেই মামলা খারিজ করে দেন আদালত। এর পরই হামলার ঘটনা ঘটে বলে নাদিমের সঙ্গে ওই মামলার তিন নম্বর আসামি সাংবাদিক আল মোজাহিদ বাবু জানান।

তিনি সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, “রাত ১০টায় নাদিম মামা কলেজের সামনের দোকানে পান খেতেছিলেন। সেই সময় আমি আসতেছি, আসার সময় আমায় ডাক দেয় এবং দুইজন একসঙ্গে বাসার দিকে রওনা হই।

“বকশীগঞ্জের পাটহাটি মোড়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমি একটু এগিয়ে বলি, মামা বৃষ্টি আসতেছে, আমি বাসায় চলে যাই। নাদিম মামা বলেন, যাও বাসায় যাও। এরমধ্যে মামা আমার পেছন থেকে মামা বলে ডাক দেয়।

“চলতি গাড়ির মধ্যে পেছন থেকে নাদিম মামার শার্টের কলার ধরে রাস্তার মধ্যে ফেলে দেয়। এরপর মনির, সাইদুর ও আরও কয়েকজন মামাকে কিল ঘুষি মারতে মারতে মোড় থেকে অন্ধকারে নিয়ে যায়।

আল মোজাহিদ বাবু বলেন, “চেয়ারম্যান বাবুর ছেলে রিফাত ছিল, রিফাত ইট দিয়ে নাদিম মামার মাথায় আঘাত করে। বাবু চেয়ারম্যান পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। তারপর আমর আলী মেম্বার ছিল, আরও অনেকেই ছিল। কমছে কম ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী বাহিনী ছিল।

তিনি আরও বলেন, “পরে আমি সাংবাদিক লালনকে খবর দেই, লালন ঘটনাস্থলে আসার পর সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় নাদিমকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।”

নাদিমের সহকর্মী বকশীগঞ্জের সাংবাদিক এমদাদুল হক লালন বলেন, “সংবাদ প্রকাশের জেরে নাদিমকে হত্যা করা হয়েছে।”

সাংবাদিক নাদিমের ওপর হামলার ঘটনার একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বের হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে সেই ফুটেজটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর শেয়ার হচ্ছে।

ফুটেজটি বুধবার রাত ১০টা ১৭ মিনিটের। ৩২ সেকেন্ডের ফুটেজটিতে দেখা যায়, নাদিমের ওপর একদল সন্ত্রাসী হামলা করেছে এবং তাকে মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে মারতে মারতে সড়কের এক পাশ থেকে অন্য পাশে নিয়ে যাচ্ছে। যে জায়গার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেই জায়গাটি অন্ধকার।

স্থানীয় সাংবাদিক ও নাদিমের পরিবারের সদস্যরা জানান, নাদিম মে মাসে অনলাইন পোর্টালে কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এর মধ্য ১০ মে ‘দুইবার বিয়ের পরও সন্তান-স্ত্রীকে অস্বীকার করছেন ইউপি চেয়ারম্যান!’, ১৪ মে ‘আমি আমার স্বামী চাই, একসঙ্গে সংসার করতে চাই’ এবং ২০ মে ‘আ.লীগ থেকে স্বামীর বহিষ্কার চেয়ে স্ত্রীর আবেদন‘ শিরোনামের সংবাদ প্রকাশিত হয়।

এর জের ধরেই নাদিমকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে তার স্ত্রী মনিরা বেগম বলেন, “সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর নেতৃত্বে তার বড় ছেলে সোহানসহ বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী নাদিমকে হত্যা করেছে।

হত্যাকারীরা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে এবং তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে যুদ্ধাহত বীরমুক্তিযোদ্ধার এই কন্যা।

নাদিম-মনিরা দম্পতির দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বাবা-মাকে নিয়ে পরিবারে নাদিমই ছিলেন একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।

নাদিমের মেয়ে রাব্বিলা বলেন, তার বাবাকে বাবু চেয়ারম্যান ও তার লোকজন হত্যা করেছে। তার বাবার হত্যাকারীদের বিচারসহ সারাদেশের সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।

একই দাবি করেন সাংবাদিক নাদিমের বাবা আব্দুল করিমও।

সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমের হত্যাকারীরা যতক্ষণ পর্যন্ত আইনের আওতায় না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানান জামালপুরের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম।

বকশীগঞ্জ থানার ওসি সোহেল রানা সাংবাদিকদের জানান, সাংবাদিক নাদিম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে ছয় জনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। হত্যা মামলা দায়ের করার প্রক্রিয়া চলছে।

তবে এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুল আলম বাবুর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তিনি ঘটনার পর থেকেই পলাতক আছেন।


Comments are closed.

ইমেইল: arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com