April 27, 2024, 12:00 pm
প্রাথমিক শিক্ষা যে কোন জাতির শিক্ষা স্তরের প্রথম সোপান। শিক্ষত, মার্জিত, শালীন ও ভদ্র জাতি গঠন করতে হলে প্রয়োজন সুশিক্ষা। এই সুশিক্ষা প্রদানের জন্য প্রাথমিক স্তর থেকেই শুরু করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের বর্তমান চিত্র আমদের কারো অজানা নয়। অপরাধ প্রবনতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সামাজিক অবক্ষয় ও মূল্যবোধের চরম অধ:পতন ঘটছে। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে মৌলিক শিক্ষার ঘাটতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব পর হচ্ছে না। একজন শিশু শিক্ষার মৌলিকতা ও পারগতা যাচাইয়ের ত্রুটির ফলে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি হচ্ছে না। যতটুকু হচ্ছে তা শিশুর আতœকেন্দ্রিক মান বৃদ্ধির কৌশল মাত্র। শিশুকে স্বপ্ন দেখানো হয়, উন্নত জীবনের স্বপ্ন দর্শনে। এথেকে শিশু স্বাভাবিকভাবে আত্মকেন্দ্রিক উন্নত জীবনের স্বপ্ন দর্শনে উদ্বুদ্ধ হয়। সেখানে শিশু নৈতিক শিক্ষাসহ সামাজিক সেবায় আত্মনিয়োগের কোন বিষয়াদির উল্লেখ থাকে না। এতে শিশু নিজস্ব ভাবধারায় নিজস্ব বাস্তবতা নিয়ে ভাবতে শেখে। বড় হয়ে শিশু নি:স্বার্থভাবে সামাজিক সেবা দিতে অপ্রস্তুত হয়। সেক্ষেত্রে সে আর্থিক মূল্যায়নের অপলিপ্সা নিজস্ব জীবনে বাস্তবায়ন ঘটাতে চায়। এই ক্ষেত্রে এ ধরণের অপচিন্তার অবসান ঘটিয়ে সামাজিক সেবার মনোভাব গঠনে শিশুকে উৎসাহ প্রদান করতে হবে। এখানে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। শিশুকে ধীরে ধীরে মূল্যবোধ তৈরীর জন্য তাদের ব্যবহারিক শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে। যেমন: শিশুদের শেখানো হয় তোমরা মিথ্যা কথা বলো না। মিথ্যা বলা পাপ, শেখানো হয় তোমরা চুরি করবে নাÑএটা ভাল কাজ নয়। তারপরও অনেক শিশু শিক্ষার্থী তারা বন্ধুদের সাথে ঝগড়া করছে। প্রতিনিয়ত মিথ্যা কথা বলছে তাছাড়া বন্ধুদের কলম, খাতা, পেনসিল ইত্যাদি জিনিষ চুরি করছে। এমতাবস্থায় বলা যায় শিশুর অপরাধ বোধ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে কিন্তু তার আচরণিক কোন পরিবর্তন শেখানো হয়নি। এই আরচণিক পরিবর্তন তথা প্রয়োগিক সুফল প্রতিষ্ঠিত হলেই বলা যাবে শিক্ষার্থীর জ্ঞান অর্জিত হয়েছে ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে। শিখন দক্ষতায় শিক্ষার্থী পটু হতে পারে বাহ্যিক প্রয়োগ ও আত্মমূল্যায়নে কতটা দক্ষ সেটিই হবে শিশু শিক্ষার তথা প্রাথমিক শিক্ষার একমাত্র গুণগত বৃদ্ধি। মৌলিক শিক্ষার অস্বচ্ছতার কারণে, প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মানের অপূর্ণতা থেকে যায়। আর এ কারণে শিশু যখন বড় হয় তখন অপরাধ প্রবনতা বৃদ্ধি পায়। এ জন্য শিক্ষককে সচেতন হতে হবে। শিশু শিক্ষার আত্মকেন্দ্রিকতা ও হীনমন্যতা দূর করে মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ ও সুষ্ঠু ব্যক্তিত্ব গঠনে শিক্ষক অগ্রনী ভূমিকা রাখতে পারেন। এজন্য শিক্ষক কিছু কৌশল অবলম্বন করতে পারেন যেমন: ভালকাজের জন্য শিশুকে প্রশংসা করা, ভালো আচরণ শিখে তার আচরণিক পরিবর্তন নিশ্চিত করা। অনুসরণীয়, আদর্শ ব্যক্তিত্বের সুষ্ঠু মূল্যায়ন করা, শিশুকে সুনাগরিক, মানবিক মূল্যবোধ ও সুব্যক্তিত্ব গঠনের নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করা।
প্রাথমিক শিক্ষার স্তর থেকে শিশু শিক্ষার্থীদের উপরোক্ত বিষয়গুলি নিশ্চিত করতে পারলে তাদের বেড়ে উঠার সাথে সাথে আর সামাজিক অপরাধ প্রবনতা বৃদ্ধি পাবে না। সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে না, সামাজিক সেবার মান বৃদ্ধি পাবে। একজন শিশু সুনাগরিক হিসাবে গড়ে উঠতে সক্ষম হবে। সমাজ ধীরে ধীরে সুগঠিত হতে থাকবে। জাতি অপরাধ প্রবনতার কলঙ্ক থেকে মুক্তি পাবে। লেখক: সহকারি শিক্ষক, তুলসীডাংগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কলারোয়া, সাতক্ষীরা
Comments are closed.