April 27, 2024, 10:29 am

সাংবাদিক আবশ্যক
সাতক্ষীরা প্রবাহে সংবাদ পাঠানোর ইমেইল: arahmansat@gmail.com
শিরোনাম:
জুম্মার নামাজে মুসল্লিদের দোয়া চাইলেন মশিউর রহমান বাবু সাতক্ষীরায় অপহৃত ৮ম শ্রেণীর ছাত্রীকে উদ্ধার করলো পুলিশ সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে পৃথক বার্ন ইউনিট না থাকায় জরুরী সেবা ঝুঁকিতে এসিড দগ্ধ ও পোড়া রুগীরা দাবদাহ উপেক্ষা করে ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষকরা সাতক্ষীরায় সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলে নিহত জনপ্রিয়তার শীর্ষে নতুন মুখ প্রভাষক সুশান্ত কুমার মন্ডল আশাশুনীতে বাপ্পী সীড হাউজ দোকান উদ্বোধন দক্ষিণ খুলনার অস্ত্র ও মাদকের গডফাদার ওজিয়ার গ্রেফতার সাতক্ষীরায় টিটিসিতে ৭৫ দিন মেয়াদী দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণের মতবিনিময় তীব্র তাপদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত, বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ
সীতাকু- ট্রাজেডি মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করল চট্রলাবাসী

সীতাকু- ট্রাজেডি মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করল চট্রলাবাসী

‘মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না ও বন্ধু…’ বিখ্যাত এই গানে সংগীতশিল্পী ভূপেন হাজারিকার যে চাওয়া ছিল সেটারই হয়তো প্রতিফলন ঘটেছে চট্টগ্রামের অগ্নিকা-ে। গত ৪ জুন বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের সীতাকু-ের কেশবপুরে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে পুড়ে মারা গেছে প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ। এর মধ্যে বেশিরভাগই রয়েছে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এছাড়া এই অগ্নিকা-ে দুই শতাধিকেরও বেশি মানুষ আগুন পুড়ে আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছে। ধারণা করা হচ্ছে, মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। পাশাপাশি অগ্নিকা-ের পর থেকে এখন পর্যন্ত অনেকেরই সন্ধান পাওয়া যায় নি। নিহত হওয়া লাশের মধ্যে থেকে কিছু মানুষকে সনাক্ত করে তাদের পরিবারের হাতে হস্তান্তর করে দেওয়া হলেও বেশ কিছু মানুষকে এখনও চিনতে না পারা যায় নি৷ তাই ডিএনএ টেষ্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এই দূর্ঘটনায় হাসপাতালে ভর্তি আহত রোগীদের জরুরী প্রয়োজন ছিল রক্ত ও ঔষধের। আর সেগুলোর জন্য চট্টগ্রামের মানুষ ধর্ম, বর্ণ, দল, মত নির্বিশেষে যেভাবে তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তা এক অনন্য মানবিক গল্পের দৃষ্টান্ত স্থাপন হলো। বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে দেখা গেছে, এই অগ্নিকা-ের পরপরই চট্টগ্রামের বহু তরুণ তরুণী আহত রোগীকে কাঁধে নিয়ে ছুটেছে হাসপাতালের দিকে। কেউ কেউ রক্তের জন্য দূরদূরান্তর থেকে ছুটে এসেছে রক্ত দিতে, কেউবা রোগীদের বিনামূল্যে ঔষধের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এভাবে বিভিন্ন হাসপাতালে আহত মানুষদের সুস্থ করে তুলতে স্থানীয়দের বড় ভূমিকা রাখতে দেখা গেছে। এর মধ্যে থেকে একজন প্রতিবন্ধী মানুষকেও আসতে দেখা গেছে। যিনি অগ্নিদগ্ধ হওয়া মানুষদের রক্ত দিতে ছুটে এসেছেন। মানুষটির এই মহৎ কাজও আমাদের জন্য বিরাট অনুকরণীয় হয়ে থাকলো। যা আমাদের মানবতার গল্পে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো। এছাড়া দেখা গেছে ওই দিন রাতের পর থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে আহত রোগীদের বিনামূল্যে এবং অনেক হাসপাতালে স্বল্প মূল্যে সেবা দিয়ে চলেছে। স্থানীয় অনেক বেসরকারি সংস্থাকেও ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারের পাশে এসে দাঁড়াতে দেখা গেছে। সব থেকে ভালো লাগার বিষয় হলো আমাদের দেশের ক্ষমতাসীন সরকার ছাড়াও বেশকিছু রাজনৈতিক সংগঠন নিজেরা টাকা আদায় করে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। যা আমাদের জন্য সত্যিই অনেক বড় পাওয়া।
বিশেষ করে বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন অগ্নিকা- বা হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অভিজ্ঞতা আমার নেই৷ যেখানে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে এতজন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীকে প্রান দিতে হয়েছে। এটিকে একটি দুর্ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হলেও এর পিছনে কিছু দায়বদ্ধতা থেকে যায়। যেগুলোর জন্য আমরা নিজেরাই অনেকাংশে দায়ী। ঘটনাস্থল বিএম কন্টেইনার ডিপোতে যেসব কেমিক্যাল ছিল তা রাখার অনুমতি ছিল না প্রতিষ্ঠানটির। তারপরও কতৃপক্ষের অগোচরে তারা তা ব্যবহার করে আসছিলো। তাছাড়া আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের যদি কতৃপক্ষ সঠিক তথ্য দিতো তাহলে তারা আরো বেশি সচেতনতার সাথে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হতো।

এতে হয়তো আগুন নিভাতে যত সময় লেগেছে তার থেকে কম সময় লাগতো। ফলে ফায়ার সার্ভিস কর্মীসহ ওখানে কর্মরত শ্রমিকদের মৃত্যুর সংখ্যা এতো ভারি হতো না। সুতরাং এটিকে নিছক একটি দুর্ঘটনা বলে না চালিয়ে দিয়ে সুষ্ঠ তদন্ত করে দায়ীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হোক। যদিও দেখা যায়, নৌপথ কিংবা সড়কপথে দূর্ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তবে আজ-অব্দি আমাদের দেশে বেশিরভাগ এই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখিনি। যা আমাদের পরবর্তী সময়ের জন্য বড় ঝুঁকির হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এতে অন্যায়, অনিয়ম আরো বাড়ছে। এজন্য এসব বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে দিনের পর দিন এমন ঘটনা বেড়েই চলবে। পাশাপাশি সমাজে প্রতিটি ক্ষেত্রে নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে সকলকে নিয়মনীতি মানার পাশাপাশি অবশ্যই আরো বেশি সচেতন হতে হবে। কারন আমাদের মনে রাখা উচিত অর্থ, বিত্ত, সহায়, সম্পদের থেকে প্রতিটি মানুষের জীবনের মূল্য অনেক বেশি।


Comments are closed.

ইমেইল: arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com