April 27, 2024, 10:07 am
একজন স্বপ্নবাজ তরুণ তপন চক্রবর্তী। সততা, মনোবল, সাহসিকতা আর কঠোর পরিশ্রমের উপর ভরকরে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্নের চাদরে নিজের সাথে অন্যকেও জড়িয়ে নিয়েছেন নিভৃত পল্লীর তরুণ এ স্বপ্নবাজ। এক সময় নিজের জীবিকার সন্ধানে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ানো বেকার যুবক তপন এখন অনেকের জীবিকার প্রাণ। তার পরিচালিত ঠিকাদারী ফার্মে অন্তত দু’শ মানুষ খুঁজে পেয়েছেন কর্মসংস্থান। তার বিশ্বাস, জীবনের ধ্রুব লক্ষে উপণিত হতে কোন বাঁধাই পরিশ্রান্ত হওয়ার নয়। বরং নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার অসীম সাহসিকতায় স্বপ্নবাজ তপন চক্রবর্তী এখন এলাকার আইকন। তাকে দেখে অনেকেই স্বপ্ন দেখছেন এগিয়ে যাওয়ার। সাতক্ষীরার তালা উপজেলার হাজরাকাটি গ্রামের অধিবাসী তপন চক্রবর্তী। বাবা সুনীল চক্রবর্তী একজন আদর্শ কৃষক। মা সবিতা চক্রবর্তী গৃহিনীর খোলশমুক্ত হয়ে উঠেছেন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে। ছেলেকে দেখে তিনি নিজ বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন গরুর খামার। প্রতিদিন সেখান থেকে আসছে ৪০/৫০ কেজি দুধ। সামনে নতুন গরু মা হলে দুধের পরিমাণ বাড়বে কয়েকগুন। শুরুতেই জীবিকার তাগিদে তপন চক্রবর্তী পেশা হিসেবে বেঁছে নেন ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালক হিসেবে। সেখান থেকে ২০০৭ সালের দিকে নিজেকে সপে দেন মফস্বল সাংবাদিকতায়।
কাজ করেন, যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক স্পন্দন, খুলনার দৈনিক অনির্বাণ, জাতীয় দৈনিক ভোরের ডাক, বাংলাদেশ সময়, আজকালের খবর, জনপ্রিয় দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজে। বর্তমানে তার সম্পাদনায় আলোর মুখ দেখছে সন্ধান২৪। সাংবাদিকতায় কাজের মূল্যায়ন স্বরুপ একাধিক পুরষ্কারও পেয়েছেন। ২০১৫ সালের কথা, সাংবাদিকতায় সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বলা না বলা কথা প্রকাশের পাশাপাশি শুরু করেন ঠিকাদারী ব্যাবসা। ধার দেনার পুঁজিতে ভর করে মাত্র ১ লাখ ২৯ হাজার টাকার ছোট্ট একটি প্রকল্পে কাজ শুরু মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার স্বপ্নযাত্রা। এরপর ক্রমশ বাড়তে থাকে তার কর্ম পরিধি। বর্তমানে সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়নে অন্তত ২০ টিরও বেশি প্রকল্পে কাজ চলছে তার প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রাকা এন্টারপ্রাইজের তত্ত্বাবধায়নে। যেখানে ২ শ’রও বেশি মানুষ কাজ করছেন। যার প্রতিটি কাজের সাইটে নিয়মিত সময় ব্যয় করেন তিনি। ব্যস্ত সময়ের মধ্যেও বসে নেই তার শব্দবুননের কাজ।
খবরের মানুষ হিসেবে সাধারণ, বঞ্চিত, নীপিড়িত, নির্যাতিত মানুষের জন্য আজো নিয়মিত লেখেন তিনি। তরুণ এ স্বপ্নবাজ গণমাধ্যমকর্মী তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ঠিকাদারি কাজের সুবাদে তার স্বেচ্ছাশ্রম হিসেবে মফস্বল সাংবাদিকতার কর্মপরিধি বেড়েছে। তিনি এখন আরো বিস্তির্ণ এলাকার মানুষকে নিয়ে লিখতে পারেন। ঠিকাদারী ব্যবসা সম্পর্কে তিনি বলেন, করোনার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই চলতি রাশিয়া—ইউক্রেন যুদ্ধের বিরুপ প্রভাবে বিশ্ব মন্দায় উপকরণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তার ঠিকাদারী কাজে। তবে সুনাম ধরে রাখতে কোন কোন কাজে লোকসান দিয়েও কাজ তুলে দিচ্ছেন তিনি। আলাপচারিতার এক পর্যায়ে জীবনের ঘটে যাওয়া স্মৃতির পাতা উল্টে আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, পয়সার অভাবে এক সময় নিজ মোটরসাইকেলে ২’শ গ্রাম পেট্রোলের যোগান মেটাতে হিমশিম খেতে হতো কঠোর পরিশ্রমের ফল স্বরূপ এখন তার প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন ২ শ’লোকের কর্মস্থানে নিজেও পুলকিত হন তিনি।
তাকে অনুসরণ করে এলাকার অনেকেই এখন স্বপ্ন দেখেন ঘুরে দাঁড়ানোর। মা’ সফল নারী উদ্যোক্তা সবিতা রাণী চক্রবর্তী বলেন, ছেলেকে নিয়ে এখন তিনি গর্ব করেন। শুধু এলাকার তরুণ—যুবকরাই নয়। বরং তাকে দেখে তিনিও অনুপ্রাণিত হয়ে শুরু করেছেন গরুর খামার। ইতোমধ্যে সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেরও আলাদা পরিচয় তৈরি হয়েছে। তপনের বাবা সুনীল চক্রবর্তী বলছিলেন, একমাত্র ছেলে তপনকে নিয়ে এক সময় অনেকের মত তিনিও ছিলেন হতাশ। তার অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়েও চিন্তিত ছিলেন তিনি। জীবনের শুরুতেই মাছের ব্যবসায় লোকসান দিয়ে প্রায় পথে বসতে হয়েছিল তাদেরকে। তবে তাতেও দমে যায়নি ছেলে তপন। মূলত সেখান থেকেই শুরু হয় তার নতুনভাবে স্বপ্নের পথে এগিয়ে চলা। আর এখন ছেলেকে নিয়ে রীতিমত অনেকের ন্যায় তিনিও গর্ববোধ করেন। বলতে গেলে তরুণদের জন্য এলাকার আইকন সে। বর্তমানে তিনিও নিশ্চিন্তে কৃষিকাজে নিজেকে সপে দিতে পেরেছেন বলেও জানান তিনি। সাংবাদিকতা ও ব্যাবসার পাশাপাশি তপন সামাজিক কাজেও নিজেকে এগিয়ে রেখেছেন। মহামারী করোনাকালে কর্মহারা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। স্থানীয়দের মধ্যে যথাসাধ্য খাদ্য—বস্ত্র বিতরণ করেন। এছাড়া এলাকার সাধারণ মানুষের যেকোন বিপদে—আপদে সবার এগিয়ে যাওয়া যেন তার নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দাম্পত্যজীবনে তপন দু’ছেলের জনক। বড় ছেলে তুষার চক্রবর্তী নবম শ্রেণির ছাত্র। আর ছোট ছেলে তন্ময় পড়ে প্রথম শ্রেণিতে। তার আগামীর স্বপ্ন এলাকার বেকার যুব সম্প্রদায়কে সাবলম্বী করে তুলতে নিজেকে সপে দেওয়া। সে পথে ইতোমধ্যে অনেকটা পথ এগিয়েও গিয়েছেন তিনি।
নিভৃত পল্লীর এক সময়ের দুরন্ত কিশোর তপন এখন এলাকার আইকন। তাকে দেখে অনেকেই স্বপ্ন দেখেন হতাশা নয়, বরং নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার। তার প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগে অনেকের জীবিকা নির্বাহ হয়। তাই শুধু চাকুরীর উপর ভর করে নয়। বরং কাজের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠুক আজকের তরুণ স্বপ্নবাজ তপনরা। এমন প্রত্যাশা এলাকাবাসীরও।