April 27, 2024, 7:22 am
হাসি মুখে নিতেছি বিদায়, ফিরে না আসিব আর, শান্তির অভয় বাণী শুনাইও বারেবার। এমনই প্রত্যাশার আলো জ্বেলে মঙ্গলবার বিদায় নিয়েছে ২০১৯। দুয়ারে এসেছে ২০২০। মঙ্গলবার ডিমের কুসুমের মতো গোলাকার সূর্যটা দেখে মনে হয়েছিলো কপাল জুড়ে লালটিপ পরে সেজেছে বাংলার বধূ। সাজবেই বা না কেন-তার যে বিদায় নেয়ার পালা। আর এই সূর্যাস্ত শেষে রাতের প্রথম প্রহরেই প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির হিসেব নিয়ে বিদায় নিল আরও একটি বছর। বিশ্বের বয়স বাড়ল আরও এক বছর। সামনের দিনগুলোতে অনিশ্চয়তা কেটে গিয়ে শুভময়তা ছড়িয়ে যাবে দেশে, পৃথিবীময়। আশাজাগানিয়া সূর্যকিরণ যেন সে দ্যুতিই ছড়িয়ে দিচ্ছে প্রত্যেকের প্রাণে, মনে। বিদায় হলো এক দশকের। তমসা কেটে পূর্ব দিগন্তে আবহমান সূর্য আবার শুরু করল নতুন যাত্রা। স্বপ্ন আর দিনবদলের অপরিমেয় প্রত্যাশার আলোয় উদ্ভাসিত শুভ নববর্ষ। শুরু হলো ২০২০ খ্রিস্টাব্দ। হ্যাপি নিউইয়ার ২০২০। এই নতুন বছরে, মুজিববর্ষে সবার অঙ্গীকার হোক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের। সোনালি স্বপ্নের হাতছানি নিয়ে উদিত হলো নতুন বছরের নতুন সূর্য। ভরা পৌষে কুয়াশার হিমেল চাদর ছিন্ন করে উদ্ভাসিত হলো সোনালি আলোর সকাল।গ্রেগরিয়ান পঞ্জিকা অনুযায়ী ইংরেজী নববর্ষের প্রথমদিন আজ। আছে দু:খ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে/তবু শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে।’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের এ কথার মতোই দু:খ, কষ্ট সবকিছু কাটিয়ে নতুন জীবনের দিকে যাত্রার প্রেরণা নেবে মানুষ। নতুন বছরটি যেন প্রতিটি মানুষের মন থেকে সকল গ¬ানি, অনিশ্চয়তা, হিংসা, লোভ ও পাপ দূর করে। রাজনৈতিক হানাহানি কিংবা জঙ্গি-সন্ত্রাসমুক্ত হয়ে যেন আমাদের সাম্প্রদায়িকতামুক্ত প্রিয় স্বদেশ আরও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যেতে পারে। গত বছরের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসাব খুঁজতে খুঁজতে নতুন বছরকে সামনে রেখে আবর্তিত হবে নতুন নতুন স্বপ্নের। বাংলাদেশে ইংরেজী নববর্ষ পালনের ধরন বাংলা নববর্ষ পালনের মতো ব্যাপক না হলেও এ উৎসবের আন্তর্জাতিকতার ছোঁয়া থেকে বাংলাদেশের মানুষও বিচ্ছিন্ন নয়। বিশ্বের বয়স আরও এক বছর বাড়ল। সূচনা হলো আরও একটি বর্ষযাত্রা।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বহু ঘটনার সাক্ষী হয়ে মহাকালের অতল গর্ভে মঙ্গলবার সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে চলে গেছে বিগত বছর ২০১৯। কালের গর্ভে হারিয়ে গেল ঘটনাবহুল একটি দশক। আবহমান সূর্য একটি পুরনো বছরকে কাল¯্রােতের উর্মিমালায় বিলীন করে আবার শুরু করল যাত্রা। স্বপ্ন আর দিনবদলের অপরিমেয় প্রত্যাশার রক্তিম আলোয় উদ্ভাসিত ইংরেজী নতুন বছর শুরু হলো। জাতির অনেক আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ হবার বছর এটি। নতুন বছরকে স্বাগতম সুখ-সমৃদ্ধি, উন্নয়ন-অগ্রগতি আর জঙ্গি-সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতামুক্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশায়। আজ নতুন দিনের নতুন সূর্যালোকে স্নান করে সিক্ত হবে জাতি-বর্ণ-নির্বিশেষে সব শ্রেণি পেশার মানুষ। সব কালিমা ধুয়ে-মুছে নতুন কেতন ওড়াতে ওড়াতে এগিয়ে যাবে সময়, সভ্যতা, হিংসা-বিদ্বেষ-হানাহানিমুক্ত রাজনীতি, অর্থনীতি আর সংস্কৃতি। অনাবিল স্বপ্ন আর অফুরন্ত প্রাণোন্মাদনা নিয়ে নতুন সূর্যের আলোয় অগ্রসর হবে মানুষ। বিগত সময়ের সব ভুল শুধরে নেবার সময় এসেছে আজ।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার পরপরই বর্ষবরণের আনন্দোৎসব করেছে সর্বস্তরের মানুষ। হিসাবের খাতায় ব্যর্থতার গ¬ানি মুছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে নতুন বছরে শান্তিকামী মানুষের প্রার্থনা ছিল-আর কোন সহিংসতা নয়, কোন হত্যা-খুন কিংবা হানাহানির রাজনীতি নয়। ২০২০ সাল হবে শান্তির বীজ বপনের সাল। অস্ত্র বা হানাহানির মহড়া হবে না, থেমে যাবে সব যুদ্ধ-সন্ত্রাস। সবার প্রত্যাশা অনুযায়ী টানা হ্যাট্রিক কবার ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের সরকার নতুন বছরেও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত একটি সুখী ও সমৃদ্ধশালী উন্নত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ উপহার দেবে জাতিকে।
বিদায়ী বছরেও রাজনীতিতে চালকের আসনে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বেড়াজাল ছিন্ন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের দক্ষ রাষ্ট্র পরিচালনায় আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে রাজনৈতিকভাবে অস্তিত্বের সঙ্কটে ফেলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিজয়ের কেতন ওড়াতেও সক্ষম হয়েছেন তিনি।
দুর্নীতি-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের দেশের কালো তকমা মুছে ফেলে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতি-সন্ত্রাস ও জঙ্গিবিরোধী ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি শুধু দেশেই নয়, এখন সারাবিশ্বও প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বিশেষ করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান এবং নিজ ঘর থেকে শুদ্ধি অভিযানের সাহসী পদক্ষেপ বঙ্গবন্ধুর কন্যার প্রতি দেশের মানুষের আস্থা-বিশ্বাসকে আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
বিদায়ী বছর দেশের অনেক ইতিহাসই পাল্টে দিয়েছে। ‘৭৫ পরবর্তী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির এমন পুনর্জাগরণ এবং সত্যকে যে মিথ্যা দিয়ে ঢাকা যায় না-তাও প্রতিষ্ঠিত করে দিয়ে গেছে বিদায়ী এ বছরটি। তাই বিপুল প্রত্যাশা ও চ্যালেঞ্জ নিয়েই আজ থেকে যাত্রা শুরু করলো আরও একটি নতুন বছর। সবার প্রত্যাশা নতুন বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার একটি সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেবে জাতিকে।
ইংরেজী নববর্ষের শুভলগ্নে দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন এই বছরটি মুজিববর্ষ হিসেবে পালিত হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। এ উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানমালা থাকবে সারা বছরজুড়েই। মুজিববর্ষে বাঙালীচিত্ত হরষে থাকুক, এ বছর মুজিব-অনুসারি ও ভক্তরা নেতিবাচক কিছু করা থেকে বিরত থাকবে-এটাই সবার প্রত্যাশা। চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির জোট সরকারের কাছে এ প্রত্যাশা রেখেই আজ বুধবার থেকে যাত্রা শুরু হলো নতুন বছরের। বিদায় ২০১৯, স্বাগত ২০২০।