April 27, 2024, 1:07 pm

সাংবাদিক আবশ্যক
সাতক্ষীরা প্রবাহে সংবাদ পাঠানোর ইমেইল: arahmansat@gmail.com
শিরোনাম:
কলারোয়ায় মন্দিরের সম্পত্তি আত্নসাতের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন দেবহাটায় উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু রাহান তিতুর জনসংযোগ ‘রাজনগর ইয়াং ষ্টার’ এর ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও সম্মাননা স্মারক প্রদান সাতক্ষীরা জেলা সাহিত্য পরিষদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত কালীগঞ্জে কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো চারশ’ কেজি আম জব্দ জুম্মার নামাজে মুসল্লিদের দোয়া চাইলেন মশিউর রহমান বাবু সাতক্ষীরায় অপহৃত ৮ম শ্রেণীর ছাত্রীকে উদ্ধার করলো পুলিশ সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে পৃথক বার্ন ইউনিট না থাকায় জরুরী সেবা ঝুঁকিতে এসিড দগ্ধ ও পোড়া রুগীরা দাবদাহ উপেক্ষা করে ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষকরা সাতক্ষীরায় সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলে নিহত
১০ বছর ধরে ক্ষতিপূরণ পায়না টিআরএম বিলের কৃষকরা

১০ বছর ধরে ক্ষতিপূরণ পায়না টিআরএম বিলের কৃষকরা

প্রথম দফার খননে নানা অসঙ্গতির পর শুরু হয়েছে কপোতাক্ষের (দ্বিতীয় পর্যায়) খনন কাজ। মেগা প্রকল্পের সুষ্ঠু খননে মরা নদীতে ফের শুরু হবে জোয়ার-ভাটা। প্রাণ ফিরবে জীবিকার অন্যতম মাধ্যম কপোতাক্ষে। এমন স্বপ্নে ভর করে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন অববাহিকার লক্ষ লক্ষ মানুষ। ফলে চলতি খননে মরা নদের উপর দীর্ঘ দিনের বসবাসকারী ও দখলদাররা গৃহহীন থেকে শুরু করে স্থায়ী দখল হারালেও ফের জোয়ার-ভাটার স্বপ্নে খানিকটা হলেও স্বস্তিতে ঢেকুর তুলছেন। পাশাপাশি প্রকল্পের প্রথম পর্যায় খননের তিক্ত অভিজ্ঞতায় নানা আশংকাও জেঁকে বসেছে জনপদের সাধারণ মানুষের মধ্যে। ৯০’র দশক থেকে শুরু করে ক্রমান্বয়ে দ্রুত নাব্যতা হ্রাসে খর¯্রােতা কপোতাক্ষ মাত্র কয়েক বছরে বিলীণ হয়ে সমতল ভূমিতে রুপ নেয়। কোন কোন এলাকায় নদীর নৃন্যতম আকার পর্যন্ত নিশ্চিহ্ন হয়। এমন অবস্থায় বন্দোবস্তসহ নানাভাবে দখল নিয়ে কপোতাক্ষ বক্ষে অনেকে গড়ে তোলেন বসতি। চাষাবাদ শুরু হয় আরো আগে থেকে। তবে নদের নাব্যতা হ্রাসে বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাষন পথ বন্ধ হয়ে এলাকাজুড়ে তৈরি হয় স্থায়ী জলাবদ্ধতার।

এতে ফসলহানির পাশিপাশি বছরের একটা বড় সময়জুড়ে জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি পোহাতে হয় এলাকাবাসীকে। কোন কোন এলাকায় দাফন ও শেষকৃত্যেও দূর্ভোগের মুখে পড়তে হয়।
বর্তমানে কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের খননকাজে পাল্টে যাচ্ছে দৃশ্যপট। খননকাজের পাইকগাছার বাকারচর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খননে কপোতাক্ষ নদের এক পাশে প্রাণ ফিরেছে। অন্যপাশে চলছে খননের কাজ। দীর্ঘ দিনের দখলি জমিতে অনেকের স্থাপনার পাশাপাশি ফসলি জমি খননে চলে যাচ্ছে মূল নদীর গর্ভে। এক সময়ের খর¯্রােতা কপোতাক্ষে আবার প্রাণ ফিরবে, শুরু হবে জোয়ার-ভাটা এমন ভাবনায় তাতেও আক্ষেপ নেই ভুক্তভোগীদের। জানাগেছে, ২০১১ সালে ‘কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) ২৮৬ কোটি ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় পাখিমারার বিলে জোয়ারাধার (টিআরএম -টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) বাস্তবায়ন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে কিছুটা হলেও প্রাণ ফেরে কপোতাক্ষের ঐ এলাকায়।

এরপর ২০২০ সালের ১৮ আগস্ট একনেক’র সভায় ‘কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ (দ্বিতীয় পর্যায়)’ প্রকল্পটি অনুমোদন লাভের পর ঐ বছরই এর কার্যক্রম শুরু হয়। যা শেষ হওয়ার কথা ২০২৪ সালে। স্থানীয়রা জানান, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের অদ্যবধি মাত্র দেড় বছরের ব্যবধানে পাল্টে যেতে শুরু করেছে উপজেলার রাড়ুলী ও বাকারচর গ্রামের চিত্র। সেখানকার দুদিকে সাতক্ষীরার দু’ উপজেলার সীমানা প্রবাহিত। যার একদিকে তালা ও অন্যদিকে আশাশুনি উপজেলা। মোহনায় একসময় দাপট ছিল ¯্রােতসীনি কপোতাক্ষের। তবে বিরতিহীন নাব্যতা হ্রাসে গত ২০০৬ সাল থেকে ওই এলাকায় নদী তার অস্তিত্ব হারাতে শুরু করে। ধীরে ধীরে রুপ নেয় ভয়াবহতায়। পানি নিষ্কাশন পথ বন্ধ থাকায় জলাবদ্ধতায় এলাকার বোরো ও আমনের তিন ফসলি অন্তত ২০ হাজার বিঘা জমি রূপ নেয় এক ফসলি জমিতে।
এরপর প্রথম পর্যায় খননের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে ৫৩১ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যায়ে ৪ বছর মেয়াদী চলতি প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়ের) কাজ শুরু হয়। যা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৪ সালের জুনে। সূত্র জানায়, প্রকল্পে মোট ৬টি এলাকা অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। এর মধ্যে নদের উজান অংশে যশোরের চৌগাছা উপজেলার তাহেরপুর থেকে মণিরামপুরের চাকলা সেতু পর্যন্ত ৭৯ কি. মি. কপোতাক্ষ, নীচের অংশে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার বোয়ালিয়া হতে কয়রার আমাদি পর্যন্ত ৩০ কি. মি. সাতক্ষীরার শালিখা শাখা নদী। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর-যশোরের চৌগাছা উপজেলার তাহেরপুর পর্যন্ত ৬২ কিলোমিটার আপার ভৈরব নদ, কপোতাক্ষ নদের সিএস ম্যাপ অনুযায়ী ২ দশমিক ৪০ কিলোমিটার, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মাগুরা বাজার থেকে জেঠুয়া বাজার পর্যন্ত কপোতাক্ষের ২৭ দশমিক ৩০ কিলোমিটার ড্রেজিং এবং ৩২টি সংযোগ খালের ১০৮ দশমিক ৩০ কিলোমিটার পুন: খনন করা হবে। এছাড়া প্রকল্পে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে তীর প্রতিরক্ষা বাস্তবায়ন, নিষ্কাশন অবকাঠামো নির্মাণ ও মেরামত, কপোতাক্ষ নদের দুই তীরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ মেরামতসহ নদের সঙ্গে সংযুক্ত খাল খনন করা হবে।

প্রকল্পে পলি ব্যবস্থাপনা, টাইডাল প্রিজম বৃদ্ধি ও নিষ্কাশন ক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ৩৫ বছর মেয়াদী জোয়ার-ভাটা নদী ব্যবস্থাপনা (টিআরএম) কার্যক্রম বাস্তবায়নের উদ্যোগ রয়েছে। স্কেভেটরের মাধ্যমে শুরু হওয়া খনন কাজের আগামী ২০২৩ সালের মধ্যেই কপোতাক্ষের এই এলাকায় প্রাণ ফিরবে বলেও আশা করা হচ্ছে। এদিকে চলতি প্রকল্পে নদী খননের পাশাপাশি পাখিমারা বিলে টিআরএম কার্যক্রম অব্যাহত রাখার কথা থাকলেও গত প্রায় দু’বছরে এখন পর্যন্ত টিআরএম বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। ২০২০ সালে জলোচ্ছ্বাস ও উচ্চ জোয়ারের চাপে পাখিমারা বিলের পেরিফেরিয়াল বাঁধ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে জালালপুর ও মাগুরা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এমন অবস্থায় প্রকল্পের স্বার্থ ও গণদাবির মুখে পেরিফেরিয়াল বাঁধটি সংস্কারের লক্ষ্যে ২০২১ সালের মার্চ-এপ্রিলে টিআরএম বিলের সংযোগ খালের মুখে বাঁধ দিয়ে টিআরএম বন্ধ করা হয়, যা এখনও বন্ধ রয়েছে। পাখিমারা বিল অধিবাসীদের বক্তব্য, সেখানে টিআরএম বাস্তবায়নে কপোতাক্ষ অববাহিকার লাখ লাখ মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন হলেও তাদের দু:খ-দুর্দশা ও ভোগান্তি লাঘবে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়) ২ বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত টিআরএম এলাকাবাসীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। তাদের অভিযোগ, ২০১১ ও ২০১২ সালের টাকা বুঝে পেলেও পরবর্তী অদ্যাবধি ক্ষতিপূরণের কোন টাকা পাননি তারা।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বহুবার যোগাযোগ করা হলেও তারা বলছেন এখনো তাদের টাকা জমা হয়নি। এমন অবস্থায় স্থানীয় পানি কমিটির নের্তৃবৃন্দ বলছেন, সরকারের প্রায় ৮০০ কোটি টাকার প্রকল্প ভেস্তে যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, দ্বিতীয় ফেইজে নদী খনন দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। ডিসি অফিসে আমাদের টাকা জমা আছে, আরও টাকা জমা দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে চাষীরা ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়ে যাবেন বলেও দাবি তার। এসময় পাউবোর এ কর্মকর্তা আরো বলেন, কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণের দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পে ৭৯ কিলোমিটার খনন হবে। কাজের বর্তমান গতি অব্যাহত থাকলে নির্দিষ্ট মেয়াদের আগেই খনন কাজ শেষ হবে।


Comments are closed.

ইমেইল: arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com